বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ৫ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে করোনাজনিত বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
গত তিন বছরেরও বেশি সময়ে করোনা মহামারী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ মে বিকেলে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের উত্তরে অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দফতরের বাইরে বহু সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম সংবাদ সম্মেলনে অবশেষে একটি বাক্য উচ্চারণ করেন, যার জন্য অনেকে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন।
তিনি বলেন,
‘আমি করোনাভাইরাসের কারণে জারি করা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা করছি।’
‘বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জারি করা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা। ২০২০ সালের ২২ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত নভেল করোনা ভাইরাস মহামারীর আকস্মিক ঘটনা নিয়ে ডাবলিউএইচও’র এ সংক্রান্ত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর ৩০ জানুয়ারি কমিটির দ্বিতীয় সভা করার পর তেদ্রোস আধানম নভেল করোনা ভাইরাস নিউমোনিয়া মহামারী এবং ‘বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষনা করেছিলেন।
২০২৩ সালের ৪ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে একই কমিটির ১৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা সারা বিশ্বের নভেল করোনা ভাইরাস মহামারী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, সারা বিশ্বে লোকজনের মাঝে নভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে উচ্চস্তরের অনাক্রম্যতা তৈরি হয়েছে।এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এবং হাসপাতালে ভর্তির হার ক্রমশ কমছে। তাই নভেল করোনা ভাইরাসের পরিবর্তনের সম্ভাব্য অনিশ্চয়তা স্বীকার করার সঙ্গে সঙ্গে একে দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণ করার সময় এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত শোনার পর তেদ্রোস আধানম গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’র অবসান ঘটিয়ে একটি ঘোষণা দেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই ঘোষণার মানে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে মহামারীর অবসান নয়।
তিনি বলেন,
‘বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে মহামারীর অবসান ঘটেছে, তা কিন্তু নয়। গত সপ্তাহেও প্রতি তিন মিনিটে মহামারী একটি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সারা বিশ্বে হাজার হাজার লোক আইসিইউতে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। লাখ লাখ মানুষ এর ধারাবাহিক প্রভাবে ভোগছেন।’
গত ৪ মে ডাবলিউএইচও প্রকাশিত সর্বশেষ বিশ্বব্যাপী মহামারী প্রতিবেদন অনুসারে গত ৩ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ২৮ লাখ নতুন কেস এবং ১৭ হাজারেরও বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সাড়ে ৭৬ কোটিরও বেশি রোগী এবং ৬৯ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তেদ্রোস আধানম বলেন, সব দেশের সতর্কতা শিথিল করা উচিত্ হবে না, বরং জরুরি অবস্থা থেকে একে অন্যান্য সংক্রামক রোগের মতো নিয়ন্ত্রণের অবস্থায় নামিয়ে আনা উচিত্।
তিনি বলেন,
‘প্রয়োজন হলে অথবা নভেল করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে আমাদের বিশ্ব আবার বিপদে পড়লে আমি কোনো রকম দ্বিধা না করে আকস্মিক ঘটনাবিষয়ক আরেকটি কমিটি গঠন করবো। তবে বর্তমান এই কমিটির কাজ বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু বিভিন্ন দেশের নিজস্ব কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ৩ মে কোভিড-১৯ মোকাবিলার চতুর্থ সংস্করণের কৌশলগত প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। তাতে সহযোগিতামূলক পর্যবেক্ষণ এবং সম্প্রদায়ের সুরক্ষাসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে মহামারী মোকাবিলা করতে বিভিন্ন দেশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ীভাবে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন দেশের জন্য দীর্ঘস্থায়ী প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য ডাবলিউএইচও একটি মূল্যায়ন কমিটিও গঠনের ঘোষণা করেছে।
লিলি/এনাম/রুবি