শ্রমিক দিবসের ছুটিতে আরও চাঙ্গা হয়েছে চীনের অর্থনীতি
2023-05-05 15:26:02

শ্রমিক দিবসের ছুটিতে চীনের পর্যটন খাতে সৃষ্টি হয়েছে নানা রেকর্ড। এসময় সকল টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। চীনে শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয় দেখা যায়। চীনের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সদ্য সমাপ্ত শ্রমিক দিবসের ছুটিতে বিদেশী অনেক তথ্যমাধ্যম চীনের অর্থনীতির ওপর দৃষ্টি রেখেছে। তারা একে উত্সাহব্যঞ্জক সংকেত বলে অভিহিত করেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল চীনের শাংহাই শহরের একজন বাসিন্দাকে উদ্ধৃত করে লিখেছে যে ছুটির সময় ট্রেনের টিকেট কিনতে আগাম অ্যালার্ম সেট করতে হয়েছে।

 

চি পো শহরে খাবারের বিশেষ ট্রেন, চেং তু শহরে পান্ডা দেখার বিশেষ ট্রেন এবং তালি শহরে টিভি নাটক শুটিং সাইটে গমনের বিশেষ ট্রেন চালু হয়। চীনের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শ্রমিক দিবসের ছুটিতে মোট ২৭.৪ কোটি মানুষ অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ করেছে, তা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ৭০.৮৩ শতাংশ বেশি। ফলে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ আয় ছিল ১৪৮ বিলিয়ন ইউয়ানের বেশি, তা গেল বছরের তুলনায় ১২৮.৯ শতাংশ বেশি। হোটেল বুকিংয়ের পরিমাণ ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ১০ গুণ বেড়েছে।

 

ছুটির সময়ে পর্যটন ছাড়া ক্যাটারিংসহ অন্যান্য সেবা শিল্পও জমজমাট ব্যবসা করেছে। একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের উপাত্ত অনুযায়ী, ছুটির প্রথম তিন দিনে চীনে অনলাইনে সেবা গ্রহণের পরিমাণ ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তা গেল ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি। কোন কোন রেস্তোরাঁয় সহস্রাধিক মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তাছাড়া, ছুটির সময়ে বক্স অফিস আয় ছিল ১৫০ কোটি ইউয়ান, তা চীনের শ্রমিক দিবসের ছুটির ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

 

বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কিত নীতি সমন্বয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেশি চীনা পর্যটক এবারের ছুটিতে বিদেশে গিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট পর্যটন প্ল্যাটফর্মের উপাত্ত অনুযায়ী, বিদেশ গমনের বুকিং পরিমাণ ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৮ গুণ বেড়েছে। থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ নানা জায়গা জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে ওঠেছে।

 

এবারের ছুটিতে শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি করতে নানা ব্যবস্থা নেয় চীন সরকার। চলতি বছর ভোগ সম্প্রসারণ ও পুনরুদ্ধারে প্রথম হয় চীন। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো, মানুষের আয় বৃদ্ধি ও ভোগের পরিবেশ উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে ধারাবাহিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বেইজিং। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি বছরকে ভোগ বৃদ্ধির বছর হিসেবে নির্ধারণ করেছে। ভোক্তা বাজার পুনরুদ্ধার করতে চীনের নানা বিভাগ বিভিন্ন জায়গায় ৩০০টির বেশি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

 

ছুটির অর্থনীতির মাধ্যমে চীনা অর্থনীতিকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে এবং শ্রমিক দিবসের ছুটির সময়ে ভোক্তা ব্যয় আশাতিরিক্ত হয়েছে। তা প্রমাণ করে চীনের ভোগ্য বাজারের চালিকাশক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অর্থনীতির উন্নয়নে ভোগের অবদান জোরদার হচ্ছে।

 

বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিবেশ ক্রমশ জটিল ও পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে চাহিদার সঙ্কোচন। এসময় আবার কোন কোন অর্থনৈতিক সত্তার কঠোর মুদ্রানীতি বিশ্বকে নাস্তানাবুদ করছে। এমন এক সময়ে চীনের শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুযোগ বয়ে এনেছে।

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রকাশিত এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক আউটলুকে বলা হয়, এতদঞ্চলে বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নে চীনের অবদান সবচেয়ে বেশি। গোল্ডম্যান স্যাকসের অনুমান অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পুনরুদ্ধার বৈশ্বিক জিডিপিকে প্রায় ১ শতাংশ বৃদ্ধি করবে।

 

বিদেশী কোম্পানিগুলো চীনের নানা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ, বিনিয়োগ ও কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে আসছে। বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তারা চীন সফর করছেন। বহির্বিশ্ব বারবার চীনের দিকে নজর দিয়েছে; এসব প্রমাণ করে যে চীনা অর্থনীতির উন্নয়নের এ ‘দ্রুতগামী ট্রেন’ কেউ মিস করতে চাচ্ছে না।

 

শিশির/এনাম/রুবি