আকাশ ছুঁতে চাই ১৬
2023-05-04 17:42:14


১. পুরস্কার পেলেন নারী বিজ্ঞানীর দল

২, স্মার্ট খামার গড়লেন নারী 

৩. নতুন পেশায় সাফল্য পেলেন নারী মৎস্যজীবী সুই লানচি


নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

পুরস্কার পেলেন নারী বিজ্ঞানীর দল

অনুষ্ঠানের শুরুতেই রয়েছে একটি ভালো খবর। সম্প্রতি চীনের ২০জন যুব নারী বিজ্ঞানী এবং পাঁচটি বৈজ্ঞানিক দলকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন শুনবো এখন। 

 

বায়ু দূষণ প্রতিরোধ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য মোট ২০ জন তরুণ নারী বিজ্ঞানী এবং পাঁচটি বৈজ্ঞানিক দলকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

অল-চায়না উইমেনস ফেডারেশন (ACWF) এবং চায়না অ্যাসোসিয়েশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি দ্বারা আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে, চীনা জনগণের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সম্মেলনের জাতীয় কমিটির ভাইস চেয়ারপার্সন এবং  এ সি ডব্লিউএফ-এর সভাপতি শ্যন ইয়ুয়ে ইয়ুয়ে নারী বিজ্ঞানীদের উৎসাহিত করেন।

তিনি বলেন জাতীয় স্বার্থে এবং জনগণের জন্য এই নারীরা কাজ করছেন। 

শ্যন তাদের মূল এবং অগ্রগামী বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণায় সাফল্য অর্জনের জন্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দেশের স্বনির্ভরতা এবং শক্তি বাড়াতে মূল ও মূল প্রযুক্তিতে বাধা সমস্যা মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।

অল চায়না উইমেনস ফেডারেশন জানায় ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৮৪ জন চীনা নারী বিজ্ঞানী ও গবেষককে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া 

সম্পাদনা: রহমান


স্মার্ট খামার গড়লেন নারী 

পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের চেচিয়াং সিটিতে স্মার্ট খামার গড়ে তুলেছেন  চান চেনচেং নামের এক নারী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করছেন তিনি। রিমোট-নিয়ন্ত্রিত সেন্সরের সাহায্যে খামারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে চলছে ফসল উৎপাদন। ফসলের অগ্রগতি এবং মৌলিক অবস্থা ট্র্যাক করতে প্রতিটি বিভাগে চালু করা হয়েছে ডিজিটালি কোড । শুধু চেচিয়াং প্রদেশে নয়, অন্যান্য প্রদেশেও "স্মার্ট ফার্ম" গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন তিনি। পাশাপাশি পুরো দক্ষিণ চিয়াংসু অঞ্চলে যান্ত্রিকভাবে এবং বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সরিষা রোপণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই নারী। 

 

পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের চেনচিয়াং সিটির প্রযুক্তি-সচেতন নারী কৃষি উদোক্তা সান চেনচং। যিনি ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করছেন ডিজিটাল প্রযুক্তি। 

সান চেন চং পিকিং ইউনিভার্সিটির সাবেক পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো । ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসেন নিজ শহরে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকাজকে আপন করে নেন তিনি। শুরু করেন কৃষিকাজ।  ধীরে ধীরে স্মার্ট কৃষিতে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। 

চেনচিয়াংয়ে এই নারী কৃষি উদোক্তা কৃষি প্রক্রিয়ার যান্ত্রিকীকরণ এবং ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে সূচনা করেছেন নূতন দিগন্তের। রিমোট-নিয়ন্ত্রিত সেন্সরগুলোর সাহায্যে তারা পুরো খামারটিকে করেছেন কয়েকটি ভাগ । পাশাপাশি ফসলের অগ্রগতি এবং মৌলিক অবস্থার ট্র্যাক করতে প্রতিটি বিভাগে চালু করা হয়েছে ডিজিটাল কোড । 

সান চেন চং বলেন-  "এটি আমাদের ডিজিটাল ফার্মল্যান্ডের ভিত্তি। আপনি দেখতে পাচ্ছেন, খামারের জমির সংখ্যা দেওয়া আছে, এবং প্রতিটি প্যাচের নিজস্ব কিউ আর কোড রয়েছে। কাজটি হল চাষের কার্যক্রমের সময়সূচী করা এবং প্রতিটি প্যাচে হ্যান্ড-অন তথ্য পাওয়া ।’ 

ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে শস্য রক্ষণাবেক্ষণে যেমন সুবিধা তেমনি সর্বোপরি ফসলের উৎপাদনও বাড়ে কয়েকগুণ। 

এই নারী উদোক্তা জ্ঞান ও ফিল্ডওয়ার্কের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষেতে ধানের চারা পরিবহনে ব্যবহার করছেন শিল্পে ব্যবহৃত বিশেষ কার্ট। এতে করে কম সময়ে ,খুব সহজেই চারা রোপণ করতে পারছে কৃষকরা। 

আধুনিক প্রযুক্তি যেমন প্রাকৃতিক ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা, মানববিহীন যানবাহন এবং রিমোট-নিয়ন্ত্রিত সেন্সর ডেটা প্রয়োগ করা হচ্ছে কৃষি উৎপাদনে। একই সাথে এই আধুনিক প্রযুক্তি সঠিকভাবে জলবায়ুর প্রভাব মূল্যায়ন করতে পারে, যথাযথভাবে সার ব্যবহার করতে পারে এবং ভবিষ্যৎ চাষের পরিকল্পনা করতে পারে।

 

সান চেন চং বলেন- "আমি কৃষিকাজকে বেছে নেওয়ার পরে , অনেক লোক জিজ্ঞাসা করছে যে আমার পিএইচডির শিক্ষা ও আমার প্রতিভা কৃষিকাজ করতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে কিনা৷  এর উত্তর হলো,  না, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে জ্ঞান শিখেছি তা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করতে পারছি”।   

এই নারী কৃষি উদ্যোক্তা শুধু নিজ শহরেই নয়, অন্যান্য প্রদেশেও স্মার্ট ফার্ম করতে কৃষকদের করছেন উৎসাহিত। এছাড়া পুরো দক্ষিণ চিয়াংসু অঞ্চলে যান্ত্রিকভাবে এবং বড় আকারের সরিষা রোপণেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। 

প্রথম বছর ট্রায়ালের পর  দ্বিতীয় বছরে আরও ভাল করার প্রত্যাশা নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিকাজ করে যেতে চান এই  উদ্যোক্তা নারী । 

প্রতিবেদন : আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া


নতুন পেশায় সাফল্য পেলেন নারী মৎস্যজীবী সুই লানচি

চীনের পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন নারীরা। ইয়াংজি নদীর পরিবেশ রক্ষায় অনেক নারী ভালো অবদান রাখছেন। ইয়াংজি নদীতে দশ বছরের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার ফলে অনেক মৎস্যজীবী নারী বিকল্প পেশা বেছে নিচ্ছেন। তারা বিকল্প পেশায় সাফল্য পাচ্ছেন। এমনি একজন নারী সুই লানচি। চলুন শোনা যাক তার জীবনের গল্প। 

চীনের কুইচোৗ প্রদেশের ইয়ানহ্য কাউন্টির একটি গ্রামের বাসিন্দা সুই লানচি। ৪৫ বছর বয়স তার। তিনি এই এলাকার অন্যতম সেরা খাবার হোটেল চালান। এটা তার নতুন পেশা। 

সুই লানচি ছিলেন মৎস্যজীবী নারী। তাদের গ্রামের পাশেই উচিয়াং নদী। এটি ইয়াংজি নদীর একটি শাখা নদী। 

সুই লানচি ও তার স্বামী মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।  বছরে ১০০ দিন মাছ ধরে তাদের আয় হতো ৪০ হাজার ইউয়ানের বেশি। 

সুই বলেন,  ‘মাছ ধরা খুব কঠিন পেশা। আমাদের নৌকায় বাস করতে হতো। অনেক সময় নদীতে পড়েও গিয়েছি। তবে আমরা দুজনেই খুব ভালো সাঁতার জানি। তাই কোন বড় বিপদ হয়নি।’

একসময় তাদের আয় কমতে থাকে। কারণ নদীতে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। ২০১৩ সালে তারা বিকল্প পেশার খোঁজে নামেন। তিন লাখ ইউয়ান ব্যয় করে তারা নিজেদের বাড়িতেই খাবার হোটেল চালু করেন। তবে তখনও তারা মাছ ধরতেন ক্রেতাদের তাজা মাছ খাওয়ানোর জন্য। 

 

ছবি: সুই লানচির খাবার হোটেল 

২০১৯ সালে মাছ ধরা পেশা ছেড়ে দেন সুই। কারণ ইয়াংজি নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এই নদীতে দশ বছরের জন্য মাছ ধরা নিষেধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সরকার থেকে সুইকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় ৭০ হাজার ইউয়ান। এই অর্থ নিজের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন তিনি। বর্তমানে ২০০ মানুষ একসাথে এখানে খেতে পারে। দিনে তার আয় হয় প্রায় তিন হাজার ইউয়ান। মৌসুম বেশি থাকলে আরও বেশি।

সুই বলেন, ‘এখন আবহাওয়া উষ্ণ হচ্ছে। অনেক মানুষ বেড়াতে বের হন। আমার এখানে খেতে আসেন অনেকেই। দূর দূরান্ত থেকে গাড়ি নিয়েও অনেকে আসেন। দিনে ৫হাজার ইউয়ান আয় হচ্ছে এখন।’

সুই লানচির মতো অনেক মৎস্যজীবী এখন স্থানীয় সরকারের সহায়তায় বিকল্প পেশায় সাফল্য পাচ্ছেন। ইয়াংজি নদীতে মাছধরা নিষেধাজ্ঞার ফলে নদীর পরিবেশ উন্নত হচ্ছে। ফিরে আসছে অনেক বিলুপ্তপ্রায় জলজ প্রাণী। ইয়াংজি নদীর শুশুকসহ বেশ কিছু জলজ প্রাণী ও অনেক প্রজাতির মাছ রক্ষা পাচ্ছে বিলুপ্তি থেকে। পাশাপাশি সাবেক মৎস্যজীবীরাও খুঁজে নিচ্ছেন বিকল্প আয়ের পথ।

প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান


সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। 

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া,  

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল