সবুজায়ন বাড়াতে চীনের অভিনব উদ্যোগ | শেকড়ের গল্প | পর্ব ১৬
2023-05-03 20:41:14

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১. চল্লিশ বছর ধরে একই বনে কাজ করছেন লি তংকুই

২. হাতের স্পর্শ ছাড়াই ট্র্যাকটর চলছে কৃষি জমিতে

৩. সবজি উৎপাদন বাড়িয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি


বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ। 

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে। 





১.  চল্লিশ বছর ধরে একই বনে কাজ করছেন লি তংকুই

প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখতে বরাবরই একধাপ এগিয়ে চীন। সবুজায়ন বাড়াতে দারণ কিছু প্রকল্প রয়েছে দেশটিতে। চীনের প্রকৃতির সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই মিতালী গড়ে উঠেছে অনেকের। পেশা হিসেবে তাই কেউ কেউ বেছে নিয়ে বনরক্ষকের চাকরি। প্রিয় শ্রোতা এ পর্বে এমনই একজন চীনা নাগরিকের গল্প জানাবো আপনাদের, যিনি ৪০ বছর ধরে কাজ করছেন একই বনে। 

 

উত্তর-পূর্ব চীনের একটি বনের দেখভাল করেন লি তংকুই। শুনলে অবাক হবেন, এই মানুষটি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে একই জায়গায় বনরক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখতে নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে লড়ে যাচ্ছেন তিনি। 

 

৫৭০ হেক্টর জায়গাজুড়ে অবস্থিত চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের চাংয়ু কাউন্টির এই পাইন ফরেস্ট। এখানে জীবনের অধিকাংশ সময় পার করেছেন লি তংকুই। কিশোর বয়সে থাকতেই এই বনে চাকরি শুরু করেন তিনি। 

 

লি বলেন, " ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে বড় হয়েছি। ওই সময় প্রচুর গাছ লাগাতাম এবং মন দিয়ে যত্ন নিতাম। আসলে প্রকৃতির সঙ্গে এই মিতালী গড়ে উঠেছে আমার বাবার কারনে। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি বনে কাজ করেছেন। তখন থেকে আমার মাথায় কাজ করত আমরা যদি আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করতে চাই, তাহলে গাছ লাগানো ছাড়া আর বিকল্প কোন পথ নেই। এখন এই বনই আমার ঘরবাড়ি আর আমি কখনোই এই জায়গা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাইনা।"

শুরুতে চারজন তরুণকে সঙ্গে নিয়ে বনের কাজ শুরু করেন লি, তবে তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি এখনো এ বয়সে কাজ করে যাচ্ছেন বনে। গেল ২০২০ সালে জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করে তাকে সম্মানিত করে চীন সরকার। 

বনে নানা রকম কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে হয়। বনের গাছগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে লিকে সতর্ক থাকতে হয়। 

 

বন সুরক্ষিত রাখার এই সংগ্রামে পাশে রয়েছেন লির স্ত্রী ওয়াং ইয়ুহুয়া। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বনের নানামুখী কাজ করে থাকেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি দেখেছেন এই বনের বিকাশ। কিভাবে এই বন স্থানীয় এলাকার অর্থনৈতিক অগ্রগতি এনেছে সেই অভিজ্ঞতাও জানিয়েছেন ওয়াং। 

তিনি বলেন, "আসলে এই পাইন বন কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে বলা মুশকিল। এখন প্রায় সময় স্থানীয় কৃষকরা এই বনে আসেন এবং চাষাবাদ করেন। শুধু চীনা বাদাম বিক্রি করেই তারা বছরে দুই লাখ ইউয়ান উপার্জন করেন। বনের দেখাশোনা করেও তারা বড় উপকার করেন।" 

সবুজায়ন বাড়াতে ‘গ্রীন গ্রেট ওয়াল’ নামে চীন সরকারের একটি প্রকল্প রয়েছে। ১৯৭৮ সালে এই প্রকল্প চালুর পর এ পর্যন্ত প্রায় ৮ মিলিয়ন হেক্টর জায়গাজুড়ে ঝড়সহনীয় গাছ রোপন করা হয়েছে। এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন  লি তংকুইয়ের মতো বনরক্ষক। 

প্রতিবেদন:  এইচ আর এস অভি

সম্পাদনা:   রওজায়ে জাবিদা ঐশী


২. হাতের স্পর্শ ছাড়াই ট্র্যাকটর চলছে কৃষি জমিতে 

নিত্য নতুন প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে চীনের কৃষিকাজ। সম্প্রতি দেশটির নিজস্ব স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম বাইডু দারুণভাবে সাহায্য করছে স্মার্ট কৃষিতে। কৃষকরা এখন চালক ছাড়া কৃষিক্ষেত্রে ট্র্যাকটর ও অন্যান্য মেশিন চালাতে পারছেন। এভাবেই চীনের হুবেই প্রদেশের খামারগুলোতে কৃষকদের ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে বাইডু।  

কোন রকম হাতের স্পর্শ ছাড়াই ট্র্যাকটর চলছে কৃষি জমিতে। আর এই কাজে সাহায্য করছে চীনের নিজস্ব স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিসটেম বাইডু। জমির মান কি রকম, কি পরিমাণ বীজ বপন করতে হবে, কোথায় কীটনাশক স্প্রে করতে হবে এসবই বোঝা যায় বাইডুর মাধ্যমে। 

এতে করে কায়িক শ্রমের প্রয়োজনীয়তা কমছে। গ্রামীণ চাষীরা স্থানীয় সরকারের সহায়তায় এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছেন। 

মধ্যচীনের হুবেই প্রদেশের চুংসিয়াং সিটির কৃষিক্ষেত্রগুলোতেও ব্যবহার হচ্ছে বাইডু স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম। বিজ্ঞানের নতুন এই সংযুক্তিকে সাদরে গ্রহণ করেছেন স্থানীয় মানুষ। 

এখন অনেক কম সময়ে জমিতে বীজ বপন সম্ভব হচ্ছে। ওয়াং ছিন নামের একজন নারী প্রযুক্তিবিদ জানিয়েছেন এই স্যাটেলাইট সিস্টেমের ভবিষ্যত সম্ভাবনার কথা।  

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সিস্টেমের প্রচার করতে গিয়ে জনগণের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। এ বছর আমাদের পরিকল্পনা হলো ইন্টেলিজেন্ট কৃষি মেশিনারির প্রচার এবং কার্যপরিধি বাড়ানো। আমরা পরিকল্পনা করেছি আরও ৬০০ সেট অটোমেটিক ড্রাইভিং টারমিনাল এবং ৬০০ সেট ইন্টেলিজেন্ট মনিটরিং সিস্টেম চালু করবো।“

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে গতি এসেছে কৃষি কাজে। সফলতার মুখ দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। 

প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা  : এইচ আর এস অভি


৩. সবজি উৎপাদন বাড়িয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি

শ্রমিকদের পরিশ্রম ছাড়াই সবজি উৎপাদনের দারুণ এক উপায় বের করেছেন একজন চীনা কৃষি প্রকৌশলী। তিনি কৃষিকাজকে নিয়ে যেতে চান এক নতুন দিগন্তে। নিজের উদ্ভাবিত মেশিনে কৃষি উৎপাদনের ধারাবাহিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ অটোমেটিক মেশিনে সবজি উৎপাদন করছেন। 

 স্বয়ংকিয় মেশিনে এগিয়ে চলছে সবজি চাষ। এই অভিনব অটোমেটিক সবজি খামারের কর্ণধার একজন কৃষি প্রকৌশলী। 

 

ফাং থিকুয়ো নামের এই কৃষি প্রকৌশলী গ্রিনহাউজের ভিতর অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে এমন এক সবজি খামার গড়েছেন যেখানে কায়িক শ্রমের কোনো প্রয়োজনই হয় না। সাংহাই ভিত্তিক একটি কৃষি কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি।  

সবজি ক্ষেত বা সবজি খামার শুনলে মনে হয় আকাশের নিচে মাটিতে উৎপন্ন হবে সবজি এবং রোদে ঘেমে কাজ করবেন মানুষ। কিন্তু এই কঠোর শ্রম থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে এমন অটোমেটিক খামার।  

কৃষককে কঠোর শ্রম থেকে মুক্তি দিতে এই অটোমেটিক পদ্ধতির আবিষ্কার করেন তিনি। প্রথমদিকে বিশাল প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। মেশিনে সবজি উৎপাদনের ফলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। 

তখন সবকিছু আবার ঢেলে সাজান তিনি। তিনি দেখেন যে বিদেশ থেকে মেশিনগুলো আনতে গিয়ে খরচ বেশি পড়ছে। এর দরকারও নেই। নিজেই মেশিন উদ্ভাবন করেন। 

 

ফাং থিকুয়োর উদ্ভাবিত অটোমেটিক মেশিনের ফলে সবজির চারা বোনা হয় ট্রেতে। সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ে স্বয়ক্রিয়ভাবে পুষ্টি পায়। মেশিনের ভিতরেই সবজির ট্রে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। 

এই পদ্ধতিতে সবজির বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপ স্মার্ট প্রযুক্তিতে পর্যবেক্ষণ করা হয়। নতুন পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ কমে যায় প্রতি কেজিতে ৬ ইউয়ান থেকে ০.৬ ইউয়ানে। এতে ভালোই সাশ্রয়ী হয়। 

ভবিষ্যতের কৃষি খামার কেমন হতে পারে তার ধারণা পাওয়া যায় এই গ্রিনহাউজের ভিতরে। 

এমন তো হতে পারে যে ভবিষ্যতে কৃষককে আর কঠোর শ্রম দিতে হবে না মাঠের ভিতরে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। তার পরিবর্তে তিনি বসে থাকবেন কম্পিউটারের সামনে। সব শ্রম দিবে যন্ত্র। এমন দিনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। আর এভাবেই কৃষিখাতকে সব সময় সমৃদ্ধ রাখছে চীন সরকার। 


প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: এইচ আর এস অভি 



 


এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান।  যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি। 

এ রেডিও অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে। 

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প। 



পরিকল্পনা ও প্রযোজনা – এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল  

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী