মে ৩: চীন ও লাওসের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যটক ট্রেন চালু হওয়ার শুরুর দিকে অধিকাংশ যাত্রী ছিলেন ব্যক্তিগত পর্যটক। তবে চলতি শ্রমিক দিবসের ছুটিতে এই আন্তর্জাতিক ট্রেনে বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের বেশি দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বিশেষ করে এই ট্রেনের মাধ্যমে ভ্রমণের জন্য এসেছেন। চীন ও লাওসের সীমান্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ট্রেনে করে আন্তঃদেশীয় ভ্রমণ আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।
সাংবাদিক দেখেছেন যে লাওসের ভিয়েনতিয়েন থেকে চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের কুন মিং-গামী ডি৮৮৮ নম্বর আন্তর্জাতিক ট্রেনে থাইল্যান্ডের একশ’ সদস্যের একটি পর্যটক দল আছে। পর্যটন এজেন্সি থেকে জানা গেছে, এই পর্যটক দল বিশেষ করে চীন-লাওস পর্যটক ট্রেন উপভোগের জন্য এসেছে।
একজন থাই পর্যটক বলেন, ‘কারণ এই ট্রেনে করে যেতে সময় কম লাগে এবং আশেপাশের সবকিছুই উপভোগ করা যায়। আমি তৃতীয়বারের মত এই ট্রেনে উঠেছি।’
থাইল্যান্ড পর্যটন এজেন্সির কর্মকর্তা জানান, চীন ও লাওসের রেলপথ চালু হওয়ার পর তাঁর কোম্পানির ব্যবসার পরিমাণ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এখন তাঁর কোম্পানি নতুন ব্যবসা চালুর পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন থাইল্যান্ড থেকে চীনের ইউন নানের সি সুয়ান বান না শহরের ভ্রমণ রুটে পর্যটক পাঠানোর পরিকল্পনা করছি। তা চীন-লাওস রেলপথের কারণে সম্ভব হবে।’
সীমান্তে পরীক্ষার সময়সহ চীন-লাওস আন্তর্জাতিক পর্যটন ট্রেনে পুরো যাত্রায় সাড়ে দশ ঘণ্টা সময় লাগে। ট্রেনটি ৮টি স্থানে থামে। চীন-লাওস ট্রেনে আন্তঃদেশীয় এবং অভ্যন্তরীণ বগি আছে। এতে আন্তঃদেশীয় বগির আসনের সংখ্যা ২৫০টি।
জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল চীন-লাওস আন্তর্জাতিক পর্যটন ট্রেন চালু হওয়ার পর ট্রেনটি শ্রমিক দিবসে চীনা পর্যটকদের ভ্রমণের আরেকটি নতুন বাছাই হয়েছে। চীনের কুনমিং থেকে লাওসের ভিয়েনতিয়েন যাওয়া ট্রেনে কোনো খালি আসন থাকে না।
লাওসের বোটেন রেলস্টেশনের হলে বসে আছেন চীনা যাত্রীরা। সবাই এখানে নিরাপত্তা পরীক্ষা করে চীন-লাওস ট্রেনে উঠতে প্রস্তুত। যাত্রীদের মতে, অন্য দেশে গেলে বিমান টিকিটসহ সব ফি হিসাব করলে অনেক বেশি খরচ হয়। কিন্তু তারা এই ট্রেনে করে শুধু মাত্র ৪ শ’ ইউয়ান খরচ করে যেতে পারেন।
চীন ও লাওসের আন্তর্জাতিক পর্যটক ট্রেনের আন্তঃদেশীয় বগিতে চীনের বেইজিং, শাংহাই এবং লিয়াওনিং সহ বিভিন্ন জায়গার পর্যটকরা আছেন। তারা সংবাদ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই ট্রেন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তারা মনে করেন, ট্রেনে করে লাওসে ভ্রমণ করা অনেক সাশ্রয়ী। এ ছাড়া পথে স্থানীয় বিভিন্ন দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
লাওসের একজন যাত্রী জানান, পর্যটক ছাড়াও চীন-লাওস আন্তর্জাতিক পর্যটন ট্রেনের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী এবং ব্যবসায়ীদের যাতায়াত আরও সুবিধাজনক হয়েছে। লাওসের অনেক মানুষ চীনে অধ্যয়ন করতে চান। এই ট্রেন চালু হওয়ার পর পর্যটন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন অনেক সুবিধাজনক হয়েছে।
চীন ও লাওসের রেলপথ উত্তর দিকে চীনের ইউন নান প্রদেশের কুনমিং শহর থেকে শুরু এবং দক্ষিণে গিয়ে লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েন গিয়ে শেষ হয়েছে। তা চীনের প্রধান পুঁজি বিনিয়োগকারী হিসেবে নির্মিত প্রথম রেলপথ, তা চীনের সরকারি রেলপথ নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। চীন-লাওস রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১০৩৫ কিলোমিটার। তা চীনের প্রযুক্তিগত মানদণ্ড অনুসারে চীনের সরঞ্জাম দিয়ে নির্মিত হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে চালু হয়েছে এ রেলপথ। তবে ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল চীন-লাওস আন্তর্জাতিক পর্যটন ট্রেন সেবা শুরু হয়েছে।
(শুয়েই/এনাম/আকাশ)