‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. কর্মশক্তিকে ‘প্রতিভা সুফলে’ রূপান্তর করছে চীন
চীন তার কর্মশক্তিকে ‘জনসংখ্যাগত সুফল’ থেকে ‘প্রতিভা সুফলে’ রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে এবং এ লক্ষ্যে দেশটি শিক্ষা ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে যাচ্ছে। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে যে ৯০ কোটি কর্মজীবী জনসংখ্যা রয়েছে, তাদের গড় শিক্ষাগ্রহণের কাল ক্রমাগত বাড়ছে।
২০২০ সালের বিশ্ব দক্ষতা প্রতিযোগিতার বিশেষ সংস্করণে চীনা যুবক ছ্যন চিইয়োং নবায়নযোগ্য শক্তি শাখায় স্বর্ণপদক জেতেন। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আগে ছ্যন দুই বছর প্রশিক্ষণ নেন এবং প্রশিক্ষণের একটি কেন্দ্র ছিল দক্ষিণ চীনের কুয়াংতুং প্রদেশে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
ছ্যন চিইয়োং, বিশ্ব দক্ষতা প্রতিযোগিতার স্বর্ণপদক বিজয়ী
<আমি কুয়াংতুং প্রদেশের কারিগরি ইনস্টিটিউটে ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল ইন্টিগ্রেশন পড়েছি। ৪৬তম বিশ্ব দক্ষ প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগীদের বাছাই করে। আমি জানতাম নবায়নযোগ্য শক্তি একটি নতুন খাত, যা আমাদের দেশে ও সারা বিশ্বে প্রচুর বিনিয়োগ ও মনোযোগ আকর্ষণ করছে।>
চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের উচ্চ-স্তরের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে আসা লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের একজন ছ্যন। এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে চীনের উচ্চমানের শ্রমশক্তিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
দেশটিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চীনে ২৪ কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছে। ২০২২ সালে ৪ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করছিল। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ২২ লাখ ৫০ হাজার বেশি। ২০২২ সালে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির হার ছিল ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ, যেখানে ১০ বছর আগে এই হার ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ।
উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের শ্রমশক্তির মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
সু কাও, অর্থনীতিবিদ, ব্যাংক অফ চায়না ইন্টারন্যাশনাল বলেন,
<অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর জনসংখ্যাগত সুফলের প্রভাব তেমন বড় নয়, কারণ দেশের জনসংখ্যার পরিবর্তন অত্যন্ত ধীরগতির। অন্যদিকে, আমি মনে করি, বছরের পর বছর চীনের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির কারণে গত ১০ বছর শ্রমের মান খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।>
চীনের কর্মশক্তিতে রয়েছে প্রায় ৯০ কোটি মানুষ। তারা গড়ে প্রায় ১১ বছরের শিক্ষা পেয়েছে এবং সম্প্রতি যারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে তারা শিক্ষা পেয়েছে গড়ে ১৪ বছর।
তু ফ্যং, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়
‘আমাদের অনেক উচ্চ শিক্ষার পটভূমি রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে কেবল কর্মীর সংখ্যা নয়; শিক্ষাগত সুফল কিভাবে উন্নয়নে অবদান রাখবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।‘
কর্মকর্তারা বলছেন, শীর্ষস্থানীয় চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৮৮টি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলো গণিত, রসায়ন, দর্শন ও প্রি-ক্লিনিকাল মেডিসিনের মতো বিষয়ে ৩০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করেছে।
শিক্ষা খাতে চীনের বিনিয়োগ দেশের জিডিপির ৪ শতাংশেরও বেশি। এবং কর্মকর্তারা বলেছেন, চীন লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে তাদের কর্মজীবনের পথে সহায়তা করার জন্য শিক্ষা ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে।
প্রতিবেদকঃ শিহাবুর রহমান
২. চীন আফ্রিকা যুব উৎসব
নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো সপ্তম চীন আফ্রিকা যুব উৎসব। চীনা ও আফ্রিকান যুবকদের মধ্যে বিনিময়ের প্রচারে এই অনুষ্ঠানের ভূমিকার প্রশংসা করেন অংশগ্রহণকারীরা।
সম্প্রতি পূর্ব চীনের শানতং প্রদেশের ছিংতাও শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সপ্তম চীন-আফ্রিকা যুব উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান।
দুই দেশের যুবকরা সাত দিনব্যাপী চলা এই উৎসবে উচ্চ প্রযুক্তির উদ্যোগ ও পর্যটন সাইটগুলি পরিদর্শন করেন, ঐতিহ্যগত চীনা সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা লাভ এবং চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের ক্ষেত্রে তরুণদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। তরুণরা এতে অংশ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং এটি একটি সমৃদ্ধ এবং অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা বলে জানান তারা।
‘আমরা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এবং অনেক কিছু শিখেছি। আমাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। আমরা আসলে বুঝতে পেরেছি যে চীন এবং আফ্রিকা এক সম্প্রদায়ে পরিণত হচ্ছে। আমরা আসলে একটি পরিবার। আমাদের প্রায় একই সংস্কৃতি।
মরক্কোর একজন প্রতিনিধি ইয়াসিন মুমাদ বলেন,আমি চীনের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সংস্কৃতি দেখেছি। চীনা সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে পেরে আমি আনন্দ পেয়েছি। যা আমার সারাজীবন স্মৃতিতে থাকবে।
চীন এবং আফ্রিকার ৪৮টি দেশের শতাধিক তরুণ প্রতিনিধি এ উৎসবে একত্রিত হন। তরুণরা ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী এবং চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্বের প্রবর্তক, তাই উভয় পক্ষের তরুণদের গভীর পারস্পরিক বোঝাপড়া অর্জনের জন্য এটি একটি প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করেন আয়োজকরা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, চায়না সুং চিং লিং ফাউন্ডেশন এবং শানতং প্রাদেশিক সরকারের যৌথ উদ্যোগে এ যুব উৎসবটির আয়োজন করা হয়।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম
৩. প্রাচীন সভ্যতার বাহক হয়ে কাজ করছেন শি চৌ ইং
চীনের ৫ হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা সবার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরা খুব একটা সহজ কাজ নয়। কারণ এ জন্য ইতিহাস সম্পর্কে থাকতে হয় গভীর জ্ঞান আর বিশ্লেষণধর্মী মনন। বর্ণনাশৈলীতে যুক্ত করতে হয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সভ্যতাকে সাবলীল করে তুলে ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন একদল চীনা তরুণ-তরুণী।
বিশ্বের ১০টি সুন্দর শহরের একটি চীনের হাংচৌ শহর। এর সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে হাজারো মানুষ ভ্রমণ করেন সেখানে। হাংচৌতে অবস্থিত লিয়াংচু ধ্বংসাবশেষ যা চীনের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়।
২৯ বছর বয়সী এই তরুণী কাজ করেন লিয়াংচু জাদুঘরে। তার অন্যতম দায়িত্ব হলো এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের চীনের প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে ধারণা দেয়া। শি চৌ ইং একরকম গল্পের ভঙ্গিতে সভ্যতা নিয়ে কথা বলেন, তাই পর্যটকরা খুব সহজেই কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়ে যান।
চীনের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যেও হাংচৌ অন্যতম। প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষের বসবাস এই শহরে। প্রতিবছর দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটক হাংচৌতে ভ্রমণ করেন।
গেল ৬ বছরে ৬০ হাজারেরও বেশি পর্যটককে চীনের ইতিহার ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন শি চৌ ইং। আর মজার ব্যাপার হলো চীনের অধিকাংশ জাদুঘরে বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারেন পর্যটকরা।
চীনে দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে জাদুঘর শিল্প। আর এই শিল্পকে বিশ্ববাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন শি চৌ ইংয়ের মতো উদ্যোমী চীনা নাগরিক।
প্রতিবেদকঃ হাবিবুর রহমান অভি
সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী