এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। পদ্মফুলের রাজ্য ফুচ্যহাই
২। চীনের ইতিহাস ,সংস্কৃতি আমাকে অভিভূত করেছে: আব্দুল্লাহ্ আল বারী ভূবন
৩। হুয়াংলিং গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ১৬তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। পদ্মফুলের রাজ্য ফুচ্যহাই
কুনমিং শহর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত সিনিক স্পট ফুচ্যহাই । সেখানে মিয়াও, ইয়াও, ই, পাই এবং জুয়াং জাতির মানুষ বসবাস করে। ছিউপাই কাউন্টি টাউন থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে বিশাল লেক ও পাহাড় নিয়ে গড়ে উঠেছে এই স্পট।
মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত অজস্র পদ্মফুলের সমারোহ দেখা যায় ফুচ্যহাইতে। এখানে রয়েছে ১৩১০ একর এলাকা জুড়ে পরিষ্কার পানির লেক, যা পরিচিত মুক্তা লেক নামে। এছাড়া , আরও রয়েছে বিভিন্ন আকারের ৭০টি লেক , যেখানে ফুটে আছে লাখো পদ্মফুল। পদ্মফুলের বনের ভিতর দিয়ে চলার জন্য আছে সরু কাঠের সাঁকো।
আর যে লেকগুলোতে পদ্মফুল নেই সেই লেক পাড়ি দিতে আছে নৌকা । যেখানে অল্প খরচে পর্্যটকরা নৌকায় পাড়ি দিতে পারেন দীর্ঘ পথ। এখানকার লেকে নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় প্রচলিত আছে পানিখেলার রীতি।
এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় ছোট বালতি দিয়ে পানি ছুঁড়ে মারা হয়। পর্যটকরা উপভোগ করে থাকেন এই খেলা।
জলপথে ভ্রমণের সময় চোখে পড়বে ৩০০ পাহাড় ও চূড়া । এছাড়া শৈলমালায় আছে ২০০ গুহা । যার মধ্যে ৮০টি দেখার যুযোগ পায় পর্যটকরা। পাহাড়ের গুহার ভিতর বিশাল এক রাজ্য। গুহার ভিতরে কাঠ ও পাথর দিয়ে বানানো হয়েছে সিঁড়ি ও চলাচলের পথ।
গুহার ভিতরে আলোর প্রয়োজন মেটানো হয়েছে হালকা হালকা রঙিন আলোর খেলা দিয়ে। ফলে গুহার ভিতরে আবছা অন্ধকার কখনও লাল কখনও নীল আলোর শোভায় রঙিন। আর পাথর ও চুনা পাথরের নানা আকৃতির শৈল স্তূপের উপর রঙিন আলো পড়ে অপূর্ব সৌন্দর্যে সৃষ্টি করেছে। গুহার ভিতরে কোথাও শ্যাওলা, কোথাও ঝিরি ঝিরি জল বয়ে চলেছে চুনা পাথরের উপর দিয়ে। কোথাও জল চুঁইয়ে পড়ছে ছাদ থেকে ঝুলন্ত চুনাপাথরের স্টালাগমাইটের গা বেয়ে।
একটা নির্দিষ্ট পথ ছাড়া এদিক ওদিক যাওয়ার কোন নিয়ম নেই। সেজন্য পাহারার ব্যবস্থাও আছে। আর কেউ যেন ইচ্ছাকৃতভাবে বেপথ হয়ে না যায় সেজন্য লেখা আছে সতর্কবার্তা । প্রায় দুই কিলোমিটার চলার পর পাতাল রাজ্য থেকে বের হতে হয় পাহাড়ি পথে অনেকটা চড়াই উঠে। এখান থেকে সিনিক স্পটের শেষ প্রান্তে পৌছানো যায় ব্যাটারি চালিত ছাদ খোলা টুরিস্ট গাড়িতে চড়ে।
এই সিনিক স্পটে আছে রাতে থাকারও ব্যবস্থা। পর্যটকরা চাইলেই রাত কাটাতে পারবেন সেখানে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
২। চীনের ইতিহাস ,সংস্কৃতি আমাকে অভিভূত করেছে: আব্দুল্লাহ্ আল বারী ভূবন
চীনের ইতিহাস ,সংস্কৃতি মুগ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেছেন চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ্ আল বারী ভূবন। চীন ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা বলেন তিনি।
আব্দুল্লাহ্ আল বারী ভূবন
বাংলাদেশের ময়মনসিংহের নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় জন্ম আব্দুল্লাহ আল বারী ভুবনের। বর্তমানে চীনের নানচিং শহরে নানচিং ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন সাইন্স এন্ড টেকনোলজি তে আর্টিফিয়াল ইনটেলিজেন্স বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যায়নরত। সেইসাথে বাংলাদেশ চায়না ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশানের যুগ্ম-সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বন্ধুদের সাথে আব্দুল্লাহ্ আল বারী ভূবন
ভ্রমণ পিপাসু ভূবন উশি শহরে আসার পরেই ঘুরেছেন বেশকিছু আকষর্ণীয় পর্যটন এলাকায়। এরমধ্যে রয়েছে নানচাং টেম্পল, তাইহু লেক, জিও পাহাড়, ইনয়ুহু পার্ক এবং উশি লিহু পার্ক। এছাড়াও গেল বছর নানচিং ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন সাইন্স এন্ড টেকনোলজির নানচিং ক্যাম্পাসে মাস্টার্স করার সুবাধে নানচিং শহরের অনেক দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক জায়গা, স্থাপনা, স্থাপত্য ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শুয়ানো লেক, পারপেল মাউন্টেন, নানচিং যাদুঘর, নানচিং সিমেট্রি, নানচিং ওয়াল, জিমিংসি, কনফুসিয়াস টেম্পল এবং নানচিং আই।
আব্দুল্লাহ্ আল বারী ভূবন
জায়গাগুলোতে ঘুরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে ভূবন বলেন, “ জায়গাগুলো অনেক পর্যটকমুখর ছিলো, জায়গাগুলো ঘুরে চীনের ইতিহাস সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। সেইসাথে চীনের নতুন প্রজন্মের তাদের ইতিহাস সংস্কৃতি, ভালোবাসা ও আগ্রহ আমাকে অভিভূত করেছে। এককথায় ঐসব জায়গা ঘুরে আমার অভিজ্ঞতা ছিলো অনেক রোমাঞ্চকর”।
আব্দুল্লাহ্ আল বারী ভূবন
“ সংস্কৃতি, খাবার ও ভাষায় ভিন্নতা পৃথিবীর সব জাতিসওার ভিতর ভিন্নতা আছে। তবে, আমি মনে করি যে যত তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে সে তাড়াতাড়ি পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। এখানে মুসলমানদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের রিসোর্স রয়েছে, কিন্তু সেটা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। আমি রান্না করতে পছন্দ করি বেশিরভাগ সময়ই রান্না করে খাই। এছাড়াও আমার পছন্দের খাবারের তালিকায় অনেক মুখোরোচক মজাদার চীনা খাবার রয়েছে”
বন্ধুদের সাথে আব্দুল্লাহ্ আল বারী ভূবন
বাংলাদেশের যারা চীনে ঘুরতে যেতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে ভূবন বলেন, “ “ প্রতিবছর চীনে অসংখ্য পর্যটক সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চীনে ঘুরতে আসে। মাঝে কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য চীনে টুরিস্ট আগমনে কিছু শিথিলতা থাকলেও বর্তমানে তা উঠে যাচ্ছে। কথায় আছে "চীন ভ্রমণ করলে পুরো পৃথিবীর অর্ধেক ঘুরা হয়ে যায়" তো যারা চীন ঘুরতে আসতে চান তাদের বলবো চীন বর্তমান সময়ে সবদিক বিবেচনা করে অন্যতম সেরা টুরিস্ট ডেসটিনেশন”।
সাক্ষাৎকার- আফরিন মিম
৩। হুয়াংলিং গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
চোখ মেললেই ধরা দেবে সবুজের হাতছানি ! এমনই একটি গ্রাম হুয়াংলিং। চীনের চিয়াংসি প্রদেশের এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি স্থাপত্যশৈলী মুগ্ধ করে পর্যটকদের। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনগুলোতে প্রকৃতি মেলে ধরে তার চিরযৌবনা রূপ।
বসন্তের সময়টাতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন এই গ্রামে। হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্যকে বুকে লাগান করছে হুয়াংলিং, এ কারণে গবেষকদেরও বেশ আকর্ষণ করে চীনের ঐতিহ্যবাহ এই গ্রাম।
গ্রামটিকে পর্যটক চোখে আরো আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে এক যুগ আগে থেকে নানা রকম উদ্যোগ নিয়ে আসছে চীনের স্থানীয় সরকার। বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি সুযোগ পায় এই খাতে বিনিয়োগের করার জন্য। সরকারের দারুন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় গ্রামবাসীরা।
এরপর দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ঘরবাড়িগুলো পায় নান্দনিক রূপ, হয়ে ওঠে সুবিশাল ফার্ম হাউস। পাহাড়ের উপরে নির্মাণ করা হয় এমন কিছু ফার্ম হাউস যা আকর্ষণ করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। রয়েছে বেশ কিছু দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল।
এসব দোকানে কাজ করে স্থানীয় মানুষজন। এত সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় গ্রামবাসী। পরিসংখ্যান বলছে, দিনে প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন নান্দনিক এই গ্রামে। সব মিলিয়ে হুয়াংলিং গ্রামের সুনাম ছড়িয়েছে চীনের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তরে।
প্রতিবেদন- হাবিবুর রহমান অভি
সম্পাদনা-আফরিন মিম
অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম ও রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী