মে ২: ১৯৯৯ সাল থেকে নেপালের চিতওয়ান এলাকায় চীনের সহায়তায় নির্মিত বিপি কৈরালা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে কাজের জন্য চীন ১৪ দফায় দুই শতাধিক চিকিৎসা কর্মী পাঠিয়েছে। চলতি শ্রমিক দিবসের ছুটিতে নেপালে কর্মরত চীনের ১৪তম চিকিৎসক দলটি কাঠমান্ডুর বিভিন্ন জায়গায় বিনামূল্যে প্রায় এক হাজার নেপালি ও চীনা মানুষকে শারীরিক পরীক্ষা করেছে। চীনা চিকিৎসকরা সেবার মাধ্যমে নেপালিদের মন জয় এবং চীন ও নেপালের গভীর মৈত্রী সুদৃঢ় করছেন।
২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চীনের চিকিৎসক দলটি নেপালে ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছে। বিপি কৈরালা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসক দলের ১৭ জন সদস্য ৭৫০০ জনেরও বেশি রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। এ ছাড়া, দুই সহস্রাধিক রোগীকে অস্ত্রোপচার করেছেন। চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রায় ৯৫০০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছেন। পাশাপাশি, তাঁরা সব সময় হাসপাতালের বাইরে গিয়ে নেপালের বিভিন্ন জায়গার রোগীদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন।
চীনা চিকিৎসক দলের ডাক্তার লি শেন বলেন, ‘এই শ্রমিক দিবসের ছুটিতে আমরা সপ্তাহব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি। এটি আমাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের তৃতীয় ধাপ। এই বিশেষ দিনে (শ্রমিক দিবস) সবার জন্য সেবা করতে পেরে আমরা সবাই খুব আনন্দিত বোধ করছি।’
এবারের শ্রমিক দিবসের ছুটিতে চিকিৎসক দল কাঠমান্ডুতে স্থানীয় কৃষক, স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মী এবং ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণ প্রকল্পের চীন ও নেপালি কর্মীদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। তাদের জন্য চীনের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার প্রশিক্ষণ সভারও আয়োজন করেছে। চিকিৎসা স্থলে ডাক্তাররা ধৈর্যের সঙ্গে নেপালি বন্ধুদের মেডিকেল জ্ঞান শেখান এবং আলাপ করেন। সব সময় টেবিলে বসে মাথা নিচু করে কাজ করার কারণে নেপালি নারী সাংবাদিক সৃষ্টি কাফলের কাঁধ এবং ঘাড়ে ব্যথা হয়। তাঁর হাঁটুতেও সমস্যা হয়েছে। চিকিৎসক দলের ডাক্তার হু ছান ছান তাঁকে চীনের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
অবসরপ্রাপ্ত নেপালি সাংবাদিক শ্যাম প্রসাদ রিমল চিকিৎসা স্থানে একবার আকুপাংচার নিয়েছেন। তিনি চীনা ডাক্তারের কৌশল এবং পরিশ্রমী কাজের খুব প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শুনেছি চীনা ডাক্তাররা আমাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেবেন। আমি এক সপ্তাহ আগে থেকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। আমার কিছু মৌলিক রোগ আছে। যেমন রক্তে শর্করার সমস্যা, রক্তচাপের সমস্যা এবং কোমর ব্যথা। একজন চীনা ডাক্তার আমার শারীরিক পরীক্ষা করেছেন। অনেক বছর আগে যখন আমি স্কুলে পড়তাম, তখন আমি শুনেছি চীনের আকুপাংচারের কথা। আজ সত্যি একবার অনুভব করেছি, তা খুব চমৎকার ধরনের চীনা চিকিৎসা কৌশল, তা আমার ব্যথা প্রশমন করেছে। আজ আমি প্রথম আকুপাংচার চিকিৎসা নিয়েছি। যদি সম্ভব হয়, পরবর্তীতে আমি এভাবে চিকিৎসা করাতে আগ্রহী।’
চীনে অধ্যয়ন করা নেপালি যুবক সাবিন শ্যামা বলেন, নেপালের তরুণেরা এখন স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করতে শুরু করেছে। এদিনের পরীক্ষার সব ফলাফল স্বাভাবিক দেখে তিনি খুব আনন্দিত।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই কার্যক্রম নেপালিদের জন্য এক বিরাট সাহায্য। বড় বা ছোট সবাই এসব পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের শারীরিক অবস্থা জানতে পারছেন। আমি চীনা ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আশা করি, এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেপাল ও চীনের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।’
সড়ক যোগাযোগ অসুবিধার কারণে নেপালে সহায়তা করা চীনা চিকিৎসা দল নেপালের বিভিন্ন স্থানে দশ-বারোটি চিকিৎসা কক্ষ স্থাপন করেছে। তারা নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করে এবং অনলাইনে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ নির্মাণ প্রকল্পে সাহায্য করার পাশাপাশি তারা দু’দেশের বন্ধুত্বকে মজবুত করার জন্য অবদান রাখছে।
গত ২৮ এপ্রিল নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল চীনা চিকিৎসক দলকে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য রক্ষাকারী সম্মানসূচক পদক’ প্রদান করেছেন। নেপালের স্বাস্থ্য খাতে চীনা ডাক্তারদের সক্রিয় অবদানের প্রশংসা করে এ পদক দেয়া হয়েছে।
(শুয়েই/এনাম/আকাশ)