চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব ১৬তম পর্ব
2023-05-01 18:08:15


চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব ১৬ তম পর্বে যা থাকছে: 

* বৈশ্বিক টেকসই প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেলেন চীনের বিজ্ঞানী 

* রোগীদের আশার আলো দেখাচ্ছে চীনের কৃত্রিম হদয় 

* বছরে ১০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে যে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর 


গ্লোবাল সাসটেইনেবিলিটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেলেন চীনের বিজ্ঞানী 


চলতি বছরের গ্লোবাল সাসটেইনেবিলিটি প্রতিযোগিতায় ফ্রন্টিয়ার্স প্ল্যানেট প্রাইজ হাতে উঠলো এক চীনা বিজ্ঞানীর। গত ২৭ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের মনট্রেক্সে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞানে টেকসই অগ্রগতি ও পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র ঠিক রেখে মানবজাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ফ্রন্টিয়ার্স প্ল্যানেট পুরস্কার দেওয়া হয়। 

 

নাইট্রোজেন ম্যানেজমেন্টের ওপর এক গবেষণা প্রবন্ধের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন চীনের চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কু পাওচিং। ২০২১ সালে গবেষণা প্রবন্ধটির একটি প্রধান একাডেমিক সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়। 

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক কু বলেন তার গবেষণা প্রবন্ধটি শুধু খাদ্য নিরাপত্তার জন্যই গুরুত্ব বহন করে এমন নয়, এর আরো গভীর তাৎপর্য রয়েছে। 

তিনি বলেন, “টেকসই উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে সাথে নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত গবেষণার ক্রমাগত অগ্রগতি পৃথিবী ও মানব সমাজের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” 

আরো চার দেশের চার বিজ্ঞানী পুরস্কার জিতেছেন এ প্রতিযোগিতায়। কু বলেন যে ফ্রন্টিয়ার্স প্ল্যানেট পুরস্কার বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানের মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় অনুপ্রাণিত করে, যা পৃথিবীর টেকসই ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

ফ্রন্টিয়ার্স প্ল্যানেট পুরস্কারের ডিরেক্টর জিন-ক্লাউডে বার্গলম্যান বলেন একজন চীনা বিজ্ঞানী পুরস্কার পাওয়ায় তিনি বেশ আনন্দিত হয়েছেন। কেননা বিজ্ঞান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নত গবেষণায় চীনের গুরুত্বপুর্ণ অবদান রয়েছে।  

ফ্রন্টিয়ার্স প্ল্যানেট পুরস্কারের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক ফ্রেডরিক ফেন্টার বলেন চীন শুধু প্রকাশনার শক্তিকেন্দ্রই নয়, একটি গবেষণার শক্তিকেন্দ্রও হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করার গুরত্ব চীন বুঝতে পেরেছে। চীনের প্রকাশিত গবেষণাপত্র ও পেটেন্টের সংখ্যাও নজর কাড়ার মতো”।

গত বছরের ২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে সুইজারল্যান্ডের লুস্যানে সর্বপ্রথম ফ্রন্টিয়ার্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন এ প্রতিযোগিতা চালু করে। ছয়টি মহাদেশজুড়ে ২৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৩টি জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির সাথে জড়িত এ ফাউন্ডেশন। 


|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

রোগীদের আশার আলো দেখাচ্ছে চীনের কৃত্রিম হদয় 


হার্ট ফেইলিউরের রোগীদের আশার আলো দেখাচ্ছে চীনের তৈরি কৃত্রিম হৃদয়। একসময় হার্ট ফেইলিউরের রোগীদের চিকিৎসায় খুবই ব্যয়বহুল ছিলো। তবে চীনেই এখন চৌম্বকীয় লেভিটেশনসহ কৃত্রিম হ্রদয় তৈরি হওয়ায় খুবই স্বল্প মূল্যে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে সাধারণ মানুষ।


এটি চায়নিজ একাডেমি অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের ফুওয়াই হাসপাতাল।  

অপারেটিং রুমে টেবিলে শুয়ে থাকা রোগীর নাম খং সিয়াং পিন। 

গত কয়েক বছর ধরে, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের কারণে গুরুতর হার্ট ফেইলিউর হওয়ায়, খং সিয়াং পিনের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। 

আজ, চায়নিজ একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষাবিদ হু শেং শৌ খং সিয়াং পিনের হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করাবেন। এটি ম্যাগনেটিক লেভিটেশনসহ একটি কৃত্রিম হৃদয়, যা পিনের বুকে স্থাপন করা হবে। এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ডটি চীনের নিজস্ব গবেষণা ও প্রযুক্তির ফসল। 

ন্যাশনাল সেন্টার ফর কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের পরিচালক ও চায়নিজ একাডেমি অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের ফুওয়াই হাসপাতালের শিক্ষাবিদ হু শেং শৌ বলেন:  

‘চীনে এই কৃত্রিম হৃদযন্ত্র আবিষ্কারের আগে, স্বল্পমেয়াদী ও মধ্যমেয়াদী ওষুধ চিকিত্সায় ব্যবহৃত হতো। এসব ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা ছিল ব্যয়বহুল। এগুলোর দাম প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ইউয়ান। এতো অর্থ অধিকাংশ চীনা পরিবারের পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব না। অথচ, চীনে এখনও অন্তত এক কোটি হৃদরোগী রয়েছেন। বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক হার্ট ফেইলিউরের ঘটনা ঘটে যেসব দেশে, চীন সেগুলোর একটি। 

বিপুল চাহিদার তুলনায় প্রতিবছর ট্রান্সপ্লান্টের জন্য উত্পন্ন হৃদপিন্ড মাত্র কয়েক শ। চৌম্বকীয় লেভিটেশনসহ এই কৃত্রিম হৃদয়ের দামও বিদেশি কৃত্রিম হ্রদয়ের দামের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। এ হৃদয় হার্ট ফেইলিউরের রোগীদের জীবনে যেন আশার আলো। 

প্রচলিত মৌলিক চিকিৎসাব্যবস্থার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবার পর, উচ্চপ্রযুক্তির নেতৃত্বে ‘নতুন স্বাস্থ্য অবকাঠামো’ নির্মাণে চীনের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। উচ্চপ্রযুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা এখন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের মধ্যেও এসেছে।

|| প্রতিবেদন: ছাই ইউএ মুক্তা

|| সম্পাদনা: কেএম আলিমুল হক

 

বছরে ১০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে যে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর 

পারমাণবিক শক্তি শিল্প ঘিরে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। প্রায় ২০০ দেশিয় ও বিদেশি কোম্পনির নজর কাড়ে এই প্রদর্শনীটি। 

 প্রদর্শনীর শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো চীনের ডিজাইন করা নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর হুয়ালং ওয়ান, যেটি এক বছরে ১০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।  

বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শিল্প প্রদর্শনীগুলির মধ্যে একটি হিসাবে ইভেন্টটি এরইমধ্যে বৈশ্বিক প্রযুক্তি এবং পারমাণবিক শক্তি শিল্পের প্রধান সরঞ্জামগুলো প্রদর্শনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।

এবারের প্রদর্শনীর প্রধান আকর্ষণ ছিলো তৃতীয় প্রজন্মের নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর হুয়ালং ওয়ান। এই নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরটি এক বছরে ১০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে!

আরো দু’বছর আগে যখন এই প্রদর্শনীটির আগের আসর চলছিলো তখন হুয়ালং ওয়ান ব্যবহার করে চীনের প্রথম পারমাণবিক শক্তি ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে পরিবেশবান্ধব শক্তি সরবরাহে চীনে পাঁচটি এবং বিদেশে আরো নয়টি ইউনিটের কাজ চলমান আছে। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন চীনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে অবদান রাখবে এবং চীনের কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। 

 হুয়ালং ওয়ান নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ইয়াং মিনলেই বলেন হুয়ালং ওয়ান ক্রমাগত বিকাশ লাভ করছে। 

তিনি বলেন, “হুয়ালং ওয়ান ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে এর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমাতে পারলে প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে যাবে হুয়ালং ওয়ান। একইসাথে বুদ্ধিমান আধুনিক প্রযুক্তির সাথে এর সংযোগ ঘটাতে হবে।” 

এই নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর তৈরির পেছনের প্রতিভারা বলেন যে তাদের চীনের পরমাণু শক্তির ভবিষ্যত উন্নয়নে আস্থা আছে।

১৯৯৩ সালে উন্মোচিত হওয়া এই প্রদর্শনী পারমাণবিক শক্তি শিল্পের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কিং অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।


|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম



অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla। 


পরিকল্পনা, প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন


স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম 


সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী