চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-১৪: বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
2023-04-29 16:58:54



পর্দা নামছে ত্রয়োদশ বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত আটদিনব্যাপী জমাকালো এ উৎসবে বেইজিং ফিল্ম প্যানোরোমা নামে রাজধানীর ২৭টি সিনেমা হলে দেশ ও বিদেশের ১৮০টিরও বেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।

এই সুন্দর বসন্তকালে বেইজিংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা চলচ্চিত্রগুলো উপভোগ করুন- এটি ছিল ত্রয়োদশ বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিপাদ্য।

গেল ২২ এপ্রিল বেইজিংয়ের উত্তর শহরতলী ইয়ানসি লেকের আন্তর্জাতিক  প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। চীনের জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরোর পরিচালনায় চায়না মিডিয়া গ্রুপ ও বেইজিং পৌর সরকারের যৌথ আয়োজনে আট দিনব্যাপী এই উৎসব বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একত্রিত করার পাশাপাশি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হয়।

 

চীনের সম্প্রচার উপমন্ত্রী ও সিএমজি মহাপরিচালক এবং উৎসব আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান শেন হাই সিয়োং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বৈশিষ্ট্যময় এবং অসাধারণ। এটি বিশ্বের কাছে চীনা গল্প তুলে ধরছে এবং রাজধানীর সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।সিএমজি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সম্পাদনায় অবিচল রয়েছে

 

এ ছাড়া চীনের সম্প্রচারমন্ত্রী ও উৎসব আয়োজক কমিটির স্থায়ী ভাইস চেয়ারম্যান মো কাওই, খ্যাতিমান পরিচালক চাং ইইমু, থিয়ানথান অ্যাওয়ার্ডের জুরি সভাপতিসহ ২০০ জনেরও বেশি তারকা উপস্থিত ছিলেন।

চলচ্চিত্র উৎসবে এসে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে চীনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী চিন চেন বলেন, আমি বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এসে খুব খুশি, এবং চলচ্চিত্রের আকর্ষণকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুভব করছি

এই বছরের চলচ্চিত্র উৎসবে শীর্ষ অবস্থানে ছিল ক্লাসিক চলচ্চিত্রগুলো। এ ছাড়াও মার্কিন ফিল্ম স্টুডিও ওয়ার্নার ব্রাদার্স নির্মিত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রও ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে ৯৩টি দেশ ও অঞ্চলের ১ হাজার ৪৮৮টি চলচ্চিত্র থেকে ১৫টি চলচ্চিত্র থিয়ানথান পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে। চীনের ড্রামা ফিল্ম "দ্য শ্যাডোলেস টাওয়ার"ও মনোনয়ের তালিকায় রয়েছে। 

সেরা ফিচার ফিল্ম, সেরা পরিচালক, সেরা শৈল্পিক অবদান, সেরা প্রধান অভিনেতা এবং সেরা নেতৃস্থানীয় অভিনেত্রীসহ ১০টি বিভাগের বিজয়ীদের নাম ঘোষণার মধ্যদিয়ে শেষ হবে বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান।

২. শানতংয়ে লোকশিল্প উৎসব

চীনের শানতং প্রদেশের উপকূলীয় ছিংতাও শহরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো  ১৩তম চায়না ফোক আর্ট ফেস্টিভ্যাল। পীত সাগরের তীরে অবস্থিত পর্যটন শহর ছিংতাওতে এই লোকশিল্পীদের উৎসবে বিশটি লোকশিল্প দল অংশ নেয়। ১৮টি প্রদেশ ও অঞ্চল থেকে লোকশিল্প বিশেষজ্ঞ এবং শিল্পীরা আসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের বিভিন্ন এলাকার লোকজ সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।

চারদিনের উৎসবে নাচ, গান , নাট্যকলা, সেমিনার শিল্প প্রদর্শনীর মাধ্যমে চীন জুড়ে লোকশিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়নকে তুলে ধরা হয়।

চীনের লোকশিল্প বিষয়ে এই উৎসবটি দেশের অন্যতম প্রধান লোকসংস্কৃতি উৎসব। দ্বিবার্ষিক এ উৎসবে লোকশিল্পী ও দর্শকরা চীনের বিভিন্ন অঞ্চল ও প্রদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।

৩. বেইজিং ফরেস্ট পার্কে অভিনব আলোকচিত্র প্রদর্শনী

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে একটি ফরেস্ট পার্কে চলছে এক অভিনব আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রকৃতি ও শিল্পের মেলবন্ধনের এ প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

রাজধানী বেইজিংয়ের কেন্দ্রীয় জেলা চাওইয়াংয়ে অবস্থিত শহুরে ফরেস্ট পার্ক চিয়াংফুতে চলছে প্রদর্শনীটি। 

বিস্তীর্ণ বনজুড়ে বেগুনি বনফুলের মাঠে, ঝোপে-ঝাড়ে পাখি, রঙিন ফুল, প্রজাপতি, ঘাসফড়িংয় আর প্রাকৃতিক দৃশ্যের বড় আকারের ফটোগ্রাফগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে।

অভিনব এ প্রদর্শনী এরই মধ্যে শিল্পনুরাগীদের মনযোগ আকৃষ্ট করেছে।

আগামী তিন মাস ধরে চলবে ব্যতিক্রমী এ প্রদর্শনী।

 

৪. চিরায়ত চীনা সাহিত্য

কবি ওয়াং ছাংলিং: যুদ্ধে বীরত্বগাঁথার কবি

চীনের থাং রাজবংশের কবিদের মধ্যে অন্যতম হলেন ওয়াং ছাংলিং। তার আরেকটি নাম হলো শাওবো।

কবি ওয়াং ছাংলিংয়ের জন্ম ৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে। অনেক পণ্ডিতের ধারণা তিনি বর্তমান শানসি প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কোনো কোনো পণ্ডিত বলেন তিনি বর্তমান নানচিংয়ের চিয়াংনিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দরিদ্র্য পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন। শৈশবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন ওয়াং।

৩০ বছর বয়সে তিনি রাজকীয় চাকরির পরীক্ষা চিনশি পাশ করে সচিবালয়ে কর্মকর্তা হন। এরপর অন্যান্য পদেও সরকারি চাকরি করেন। তিনি বর্তমান হ্যনান প্রদেশের সিংইয়াং শহরেও চাকরি করেছেন। চিয়াংনিং কাউন্টির মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই লুশান বিদ্রোহ শুরু হয়। ৭৫৫ সালের এই বিদ্রোহ কবির জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। ৭৫৬ সালে তাকে হত্যা করা হয়।

কবি ওয়াং ছাংলিং কাল্পনিক যুদ্ধের কবিতা লেখার জন্য খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি থাং রাজবংশের প্রথমদিকের সময়কার নারী-যোদ্ধা রাজকুমারী ফিংইয়াংয়ের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি কবিতা লিখে খ্যাতি পান।

কবি ওয়াং ছাংলিং তার কবিতায় মূলত যুদ্ধে মানুষের আত্মত্যাগ, মনোবেদনা, বীরত্ব ইত্যাদি তুলে ধরেছেন।

তার একটি কবিতা শোনাচ্ছি। কবিতাটির শিরোনাম

সুসজ্জিত কক্ষে তরুণী বধূর দুঃখ

তরুণী বধূ তার একান্ত নিজস্ব সাজানো কক্ষে বসে থাকেন, জানেন না দুঃখ কাকে বলে

বসন্তদিনে সুন্দর পোশাক পরে আনন্দিত মনে প্রাসাদে ঘুরে বেড়ান

হঠাৎ সড়কের পাশে সবুজ উইলো পাতা দেখে তার মনে দুঃখ ঘনিয়ে আসে

স্বামী তার বহুদূরে রণক্ষেত্রে খ্যাতির সন্ধানে মগ্ন।

কবিতায় চিত্রকল্প এবং যুদ্ধের কারণে মানুষের আবেগ, মনস্তত্ব, বীরত্ব পাশাপাশি যুদ্ধের আঘাতে বিপর্যস্ত মানব জীবনের রূপকার হিসেবে চিরায়ত চীনা সাহিত্যে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন কবি ওয়াং ছাংলিং।

------------------------------------------------------------------------------

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: আফরিন মিম , মাহমুদ হাশিম, শান্তা মারিয়া

কবিতা অনুবাদ: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।