মিসরের রাজধানী কায়রোয়, পিরামিড সড়কের পশ্চিমে, সাদা রঙের পাঁচ তলা একটি ভবন রয়েছে। এটি হলো কায়রোয় চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র। এটি আরব বিশ্বে একমাত্র চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র।
২০০২ সালে নির্মিত হওয়ার পর থেকে কায়রো চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র চীনা সংস্কৃতি প্রচার ও দু'দেশের জনগণের মৈত্রীর সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে কায়রো চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র মিসর, তথা আরব বিশ্বে চীনা সংস্কৃতির ব্রান্ডে পরিণত হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ নিয়ে কিছু কথা বলব।
কায়রো চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রে প্রবেশ করলে প্রথমে দেখা যায় কনফুসিয়াসের মূর্তি। দেয়ালে চীনা ছবিচিত্র ও লিপিকলা এবং গ্লাসকেসে রাখা ল্যাকুয়েওয়্যার ও চীনামাটির শিল্প দর্শকদের আকর্ষণ করে।
মিসরে চীনা দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কাউন্সিলর ও কায়রো চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রের পরিচালক শি ইউ ওয়েন বলেন, বিদেশে চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বিশ্বে চীনকে তুলে ধরতে ভূমিকা রাখছে। কায়রোয় চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র হলো নতুন যুগে প্রবেশের পর বিদেশে নির্মিত প্রথম চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আরব বিশ্বের মধ্যে কায়রোয় প্রথম চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র গড়ে তুলেছি। কারণ, মিসরের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান রয়েছে। মিসরের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আছে। এ ছাড়া, মিসর বিদেশি সংস্কৃতির ব্যাপারে সহিষ্ণু। দেশটিতে বিদেশি সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।’
বর্তমানে যেসব দেশ কায়রোতে সংস্কৃতিকেন্দ্র গড়ে তুলেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে: ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। কোনো কোনো কেন্দ্রের আবার শতাধিক বছরের ইতিহাস রয়েছে। যদিও চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রের ইতিহাস দীর্ঘ নয়, তবুও বর্তমানে কায়রোয় এর প্রভাবশক্তি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সম্পর্কে শি ইউয়ে ওয়েন বলেন, "আমার মনে হয়, আমাদের সংস্কৃতিকেন্দ্র মিসর, এমনকি সমগ্র আরব বিশ্বে বিখ্যাত। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলোর সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমাদের ২০ বছরেরও কম ইতিহাস। তবুও আমাদের কেন্দ্র তাদের মতোই বিখ্যাত।"
বিদেশে চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রের দায়িত্ব হলো চীনা সংস্কৃতি প্রচার করা। সংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যমে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি করা যায়। শি ইউয়ে ওয়েন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কায়রোয় চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী অনুষ্ঠান হলো প্রতিবছর একবার আয়োজিত 'আনন্দময় বসন্ত উত্সব’। চীনা ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব এখন মিসরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর শতাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করি। মিসরের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিরা এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসেন।’
কায়রোয় চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র স্থানীয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে, যেমন: 'মিসর গাইছে' শীর্ষক চীনা সংগীত প্রতিযোগিতা। মিসরের অনেক বন্ধু প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। 'রেশমপথ মনের কথা' শীর্ষক চীনা ভাষায় গল্প পড়ার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্থানীয় মানুষ চীনা ভাষা শিক্ষার প্রতি আকৃষ্টি হয়েছে। এই কেন্দ্র স্থানীয় মানুষদের হান ভাষা শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করেছে। 'হোরার্স কাপ' শীর্ষক চীন-মিসর উশু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিসরে, বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে চীনা উশু শিক্ষার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ বছর সংস্কৃতিকেন্দ্র 'বিদেশীদের চোখে চীন' শীর্ষক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। বহুবার চীন ভ্রমণ করেছেন এমন বিখ্যাত মিসরীয় পণ্ডিত ও কূটনীতিকরা সে অনুষ্ঠানে চীন সম্পর্কে বক্তৃতা করেন। তাঁদের গল্পের মাধ্যমে মিসরের নাগরিকরা আরো বেশি করে চীনকে জানতে পারেন। এ ছাড়াও চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্র হান ভাষার ক্লাস ও উশু প্রশিক্ষণ ক্লাস খুলেছে।
শি ইউয়ে ওয়েন বলেন, কায়রো চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রের ধারাবাহিক অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে। কোনো কোনো অনুষ্ঠান ইতোমধ্যেই আয়োজিত হয়েছে। কোনো কোনোটির আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এ সম্পর্কে শি ইউয়ে ওয়েন বলেন, “আমরা লিয়াওনিং প্রদেশের সিম্ফনি অর্কেস্ট্রাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা 'আমি ও আমার মাতৃভূমি' শীর্ষক কনসার্ট করবে। মিসরের জাতীয় টিভি কেন্দ্রে চীনা তথ্যচিত্র সম্প্রচারিত হবে। বস্তুত আমরা ধারাবাহিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে থাকবো।’
আরব দেশগুলোয় চীনা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার সম্পর্কে শি ইউয়ে ওয়েন বলেন, কায়রোয় চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রের অনুষ্ঠানগুলো স্থানীয় সাধারণ নাগরিক ছাড়াও মিসরের মূল সমাজকে আকর্ষণ করে। বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিরা চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রের অনুষ্ঠানগুলোয় অংশ নেন। মিসর সরকারের কর্মকর্তারাও চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রের উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে 'কায়রোর বাতিঘর' বলে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা মনে করেন, এসব অনুষ্ঠান চীনা ধারণা ও অভিজ্ঞতা প্রচারের সুষ্ঠু প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
শি ইউয়ে ওয়েন সংস্কৃতিকেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোর দু'দেশের জনগণের যোগাযোগ জোরদার করার বিশেষ ভূমিকার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, চীনা প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, দেশে-দেশে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দেশগুলোর জনগণের মধ্যে যোগাযোগ। আর মানুষে মানুষে যোগাযোগ তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন মানুষের সঙ্গে মানুষের মনের সম্পর্ক তৈরি হয়। সেজন্য পরস্পরকে জানা ও বোঝা খুব জরুরি। এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো মানুষে মানুষে জানাশোনা বাড়ানো। দু'দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক জানাশোনা বৃদ্ধি করা উচিত। আমাদের উচিত, আসল ও বাস্তব চীনকে কায়রো তথা আরব বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।‘
বিদেশে চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলো চীনের বৈদেশিক সাংস্কৃতিক যোগাযোগের একটি মাধ্যম। শি ইউয়ে ওয়েন বলেন, বর্তমান চীনের সামাজিক নির্মাণকাজ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় বিদেশে চীনা সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছে। (ছাই/আলিম)