চীনের ‘জাম্বুরা মেয়ে’ ফান ইয়ান সিয়া
2023-04-28 18:41:30


 

আমাদের অনেকেই জাম্বুরা খেতে পছন্দ করেন। চীনে একটি বিশেষ প্রকারের জাম্বুরা রয়েছে। চীনা ভাষায় তাকে হু ইয়ো বলা হয়। চীনের আঞ্চলিক ভাষায় হু ইয়োর উচ্চারণের ‘সমৃদ্ধি’র চীনা প্রতিশব্দের উচ্চারণের সঙ্গে মিল রয়েছে। তাই চীনের ছু চৌ শহরের ছাং শানের অধিবাসীদের মুখে একটি কথা খুব প্রচলিত: ‘বাইরে ধনী হবার চেয়ে বাড়িতে ‘হু ইয়ো’ হওয়া ভালো। 

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছাং শান উপজেলা তাজা ফলের সুষ্ঠু হিসাব ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় এবং তিনটি শিল্পের সংমিশ্রণ’র মাধ্যমে জাম্বুরা শিল্পকে একটি সুস্থ ও স্থিতিশীল টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে পুরো উপজেলায় জাম্বুরার চাষের আয়তন ৭০৬৬ হেক্টর ছাড়িয়েছে। তাতে চাষ, উত্পাদন ও বিক্রয়সহ নানা প্রক্রিয়ায় ১ লাখের বেশি অধিবাসী অংশগ্রহণ করছে। চলতি বছর জাম্বুরা শিল্পের মোট মূল্য ৩৫০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে, যা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

 

সিয়া ছান শান উপজেলার সিয়ান ওয়েন পারিবারিক খামারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ফান ইয়ান। তার খামারে জাম্বুরার বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ৩ হাজার টন ছাড়িয়েছে, যার মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ ইউয়ান। এর সাহায্যে গ্রামবাসীদের উপার্জনও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জাম্বুরা ফলনের পিক সিজনে ফান ইয়ান সিয়া ফল সংগ্রহ ও প্যাকিং করাসহ নানা প্রক্রিয়ায় শতাধিক মানুষকে নিয়োগ করেন। প্রতিবছর তাদের ১০ লাখ ইউয়ানেরও বেশি বেতন দেওয়া হয়।

 

তবে, গ্রামে ফিরে নতুন ব্যবসা শুরু করা ফান ইয়ান সিয়ার জন্য সহজ ছিল না। ২০১৩ সালে যখন তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন, তখন তিনি খুব বিভ্রান্ত ছিলেন। তিনি ভাগ্যবান যে নতুন প্রজন্মের কৃষক হতে তাঁর বাবা তাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ফান ইয়ান সিয়া ছাং শানে জন্ম নিয়েছেন এবং বড় হয়েছেন। শৈশবে তিনি তার বাবার সঙ্গে এখানে-সেখানে জাম্বুরা বিক্রি করতে যেতেন। ফলের পাইকারি বাজারে তিনি ‘ছোট জাম্বুরা’ নামে পরিচিতি পান। ফলের পাইকারি বাজারে অনেকে মজা করে তার বাবাকে জিজ্ঞাস করতেন, ‘আজ ছোট জাম্বুরা আছে কি?’ তাই ছোট বেলা থেকেই ফান সিয়ান সিয়ার মনে ছাং শানের জাম্বুরার প্রতি ভালোবাসার জন্ম হয়। ফান সব সময় বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমি ছোট জাম্বুরা। আমি জাম্বুরার একজন প্রতিনিধি।’

 

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর ফান ইয়ান সিয়া প্রথমে হাং চৌ’তে এক বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। একই সঙ্গে গ্রামের বাড়ির ব্যবসাও পরিচালনা করেন ফান। ধীরে ধীরে তিনি জন্মস্থলে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করেন। ২০১৩ সালে ফান জন্মস্থলে ফিরে আসেন। তখন তার জাম্বুরা চাষের সিদ্ধান্তে অনেক গ্রামবাসী সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি ফিরে এসে জাম্বুরা চাষ করবেন, এর কী ভবিষ্যৎ আছে!’ ফান ইয়ান সিয়া’র বিভ্রান্তি দূর করেছেন তার বাবা। ফান ইয়ান সিয়া বলেন, ফল তোলা, ফুল ফোটা বা ফল ধরা, যাই হোক না কেন, সব মৌসুমে তার বাবা ভোর চারটায় জাম্বুরা বাগানে যান। ফল তোলার মৌসুমে অনেক কৃষক ফল বিক্রি করতে পারেন না। তার বাবা সে সব কৃষকের বাড়িতে গিয়ে ফল ক্রয় করেন। বাবা ফান ইয়ান সিয়াকে বলেন, ‘সে সব কৃষক, বিশেষ করে প্রবীণ কৃষকদের জন্য এই ৯০ কেজি জাম্বুরা তার এক বছরের ফসল। তাই যে কোনো দামে আমাদের তা ক্রয় করতে হবে।’ বাবার পরিশ্রমী চেতনা ও আন্তরিকতা ফান ইয়ান সিয়া’র ওপর খুব ছাপ ফেলেছে। তিনি তার বাবার মতো একজন নতুন প্রজন্মের কৃষকে পরিণত হতে চান।

 

বর্তমানে ফান ইয়ান সিয়া তার বাবার মতো জাম্বুরা কেন্দ্র নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিভাবে প্যাকিং উন্নত করা যায়, কিভাবে সম্প্রসারণ করা যায় এবং কিভাবে ভালো বিক্রি করা যায়- এসব চিন্তা সব সময় তার মাথায় ঘুরপাক খায়। কাজের ব্যস্ততার কারণে তিনি তার ছেলের সঙ্গী হতে পারেন না। তবে, তিনি এ নিয়ে কষ্ট পান না। কারণ তার ছেলে তার মতো এ জাম্বুরা বাগানের অনুরাগী। ছেলেটি বাগানে মজার সময় কাটাতে পছন্দ করে। তার জাম্বুরা বাগানের প্রতি ছেলের ভালোবাসা ফান ইয়ান সিয়া ও তার বাবাকে মুগ্ধ করে।

জীবন চা-য়ের মতো, তেতো নাকি মধুর, তা মুহূর্তের চিন্তার ওপর নির্ভর করে। ছাং শান উপজেলার চাষিরা জাম্বুরার ওপর নির্ভর করে জীবন-যাপন করে, জাম্বুরার কল্যাণে সমৃদ্ধ হয়। জাম্বুরা বাগানে জন্ম নেওয়া এবং বড় হওয়া নতুন প্রজন্মের জাম্বুরা চাষিরা অব্যাহতভাবে জাম্বুরা নিয়ে ছাং শান উপজেলার সুন্দর ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করবেন বলে আশা করা যায়।

রুবি/এনাম