চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-04-28 18:31:01

 

চলতি বাণিজ্যের ১৫ম পর্বে থাকছে:

১. দুই লাখ ডলারে হওয়া যাবে স্যাটেলাইটের মালিক!

২. চীনের তৈরি মেট্রোরেল কিনলো ইউরোপের দেশ পর্তুগাল

৩. চীনে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাং

 

২ লাখ ডলারে হয়ে যান স্যাটেলাইটের মালিক!!

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: মাত্র ২ লাখ ডলার খরচ করে আপনিও হতে পারেন নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক। সম্প্রতি দুই ধরনের স্যাটেলাইট তৈরির সরঞ্জাম ও এ বিষয়ক সেবা সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে চীন। অবাক করা তথ্য হলো, এই স্যাটেলাইট কেনা যাবে অনলাইন মার্কেট থেকেই! কী করবেন সেই স্যাটেলাইট দিয়ে? রিমোট সেন্সিং, যোগাযোগ নেভিগেশন কিংবা বৈজ্ঞানিক নানা উদ্ভাবন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে এর মাধ্যমে। আর হ্যাঁ, মহাকাশে নিজের একটি শখের সেলফি তোলার সুযোগও পাওয়া যাবে এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করে।

একবার ভাবুন তো, আপনার নিজস্ব একটি স্যাটেলাইট ঘুরছে মহাশূন্যে! আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্বের যে কোন জায়গার ছবি, ম্যাপ বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করছে। এজন্য কিছু অর্থ খরচ করা ছাড়ার আর কিছুই করতে হচ্ছে না!! কেমন হবে?

কী অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, বিষ্ময়কর মনে হলেও এমনই সুযোগ পাচ্ছেন চীনা নাগরিকরা! তবে এজন্য কোন জটিল প্রক্রিয়ায় যেতে হবে না। স্রেফ অনলাইন থেকে অন্য যে কোন পণ্য কেনার মতো অর্ডার দিলেই মিলবে স্যাটেলাইট!

স্যাটেলাইট কিনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারেরও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে চীনাদের। শুধু তাই নয়, চীনা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে মিলছে বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট তৈরির নানা রকম সামগ্রীও। ই-কমার্স লাইভ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র শেন ফ্যাংচুন জানান, এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বেচাকেনাও!

“ক্রেতারা এরইমধ্যে ক্রয়াদেশ দিয়েছে এবং দামও পরিশোধ করেছে। উভয় পক্ষই তাদের সংশ্লিষ্ট যোগ্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌছেছে।“

স্যাটেলাইট তৈরির খরচ কমানো এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে স্যাটেলাইটকে জনপ্রিয় করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে স্যাটেলাইট বিক্রিতে আনা হয়েছে উদ্ভাবনী সব ধারনা। বেসরকারি পর্যায়ের স্যাটেলাইটের এমনই একটি ‘ওয়ান ইউ কিউবিক স্টার’। খুবই কম খরচে তৈরি এই মাইক্রো স্যাটেলাইট আন্তর্জাতিক মানের। তবে কিনতে হলে খরচ করতে হবে ২ মিলিয়ন ইউয়ান বা ৩ লাখ মার্কিন ডলার। কমার্শিয়াল স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান জানান, দামের মধ্যেই আছে সব ধরনের পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়।

সিয়ে তাও, চেয়ারম্যান, কমার্শিয়াল স্যাটেলাইট কোম্পানি

“স্যাটেলাইট তৈরি, উৎক্ষেপণ এবং এর ইন্স্যুরেন্সসহ সব খরচ নিয়েই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি স্যাটেলাইটটির ২ বছরের পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা খরচও এর মধ্যে থাকবে।“

কী কী সেবা পাওয়া যাবে এসব স্যাটেলাইট থেকে? প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, নেটওয়ার্ক কন্সট্রাকশন টেকনোলজির সহযোগিতায় এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সাগরের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা যাবে। আবহাওয়া ও পরিবেশ সম্পর্কে ব্যাপক ধারনা পাওয়া যাবে, জাহাজ ও বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণ করা যাবে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে এই স্যাটেলাইট।

স্যাটেলাইট সেবার অন্যতম একটি ‘স্পেস সেলফি’। যে কেউ চাইলেই মহাকাশে নিজের ছবি তুলতে পারবেন এর মাধ্যমে। এই সার্ভিসকে বলা হয় স্পেস সেলফি। এর মাধ্যমে মহাকাশে পৌঁছানোর পর স্যাটেলাইটের স্ক্রিনে কোন ব্যক্তির ছবি দেখা যাবে। এ সময় গ্রাহক তার নিজের ছবি সেলফি মুডে মহাকাশে তুলতে পারবেন।

সম্প্রতি এটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আউটার স্পেসে ব্যবহারকারীকে সম্পৃক্ত করে ছবি তোলার সুযোগ করে দেয় এই স্যাটেলাইট।

অন্য আরেকটি সেবা হলো ‘স্পেস শাটল’। এর মাধ্যমে দূর অনুধাবন বা রিমোট সেন্সিং, যোগাযোগ নেভিগেশন এবং বৈজ্ঞানিক নানা উদ্ভাবন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।

ওয়াং জুনিই, সদস্য, চাইনিজ সোসাইটি ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি জার্নালিজম

“৩ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করেই মানুষ একটি স্যাটেলাইটের সব সেবা পাবে। বিভিন্ন রকম বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইন্সটিটিউটও এই খরচ মেটানোর সক্ষমতা রাখে বলে আমি মনে করি।“

বর্তমানে চীনে একটি স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণে খরচ হয় প্রায় ১০ মিলিয়ন ইউয়ান বা ১৫ লাখ মার্কিন ডলার। এই খরচ আন্তর্জাতিক বাজারে সঙ্গে মিল রেখে অনেক বেশি। তবে স্যাটেলাইট বিক্রির এই পদ্ধতি জনপ্রিয় করা সম্ভব হলে খরচ কমে ৩ লাখ মার্কিন ডলারের নিচে নেমে আসবে।

 

 

 

ভিনদেশে চীন:

চীনের তৈরি মেট্রোরেল কিনলো ইউরোপের দেশ পর্তুগাল

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ হিসেবে প্রথম বারের মতো চীনের তৈরি মেট্রোরেল কিনলো পর্তুগাল। এরইমধ্যে পর্তুগালের কাছে ১৮ সেটের ট্রেনটি হস্তান্তর করেছে চীন। মেট্রোরেলটি বুঝে নিয়েছে পর্তুগালের পোরতো মেট্রো কোম্পানি।

পর্তুগালে সরবরাহ করা মেট্রো ট্রেনটি তৈরি করে চীনের অন্যতম বড় উচ্চগতির ট্রেন ও মেট্রোযানবাহন প্রস্তুতকারক কোম্পানি সিআরআরসি টাংশান।

পোরতো’র কেন্দ্রীয় ট্রিনডাডে মেট্রো স্টেশনে ট্রেনটি প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। পর্তুগালের পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী দুয়ার্তে করডেইরো জানান, সাধারণ নাগরিকদের উন্নত মানের গণপরিবহন সেবা দিতে পারবে এই মেট্রোরেল।

পোরতো মেট্রো কোম্পানির প্রেসিডেন্ট টিয়াগো ব্রাগা জানান, এই পরিবহনটি একটি প্রতিকৃতি এবং রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হবে। মে মাসে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করবে এই ট্রেন। পরীক্ষামূলক চলাচল শেষে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ সবগুলো ট্রেন পর্তুগালের কাছে হস্তান্তর করবে চীনা কোম্পানি সিআরআরসি টাংশান।

পর্তুগালে নিয়োজিত চীনা রাষ্ট্রদূত ছাও বেনটাং বলেন, চীন-পর্তুগাল কৌশলগত সহযোগিতা কতোটা এগিয়ে যাচ্ছে তারই সফল উদাহরণ এই ট্রেন হস্তান্তর। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের যে সম্ভাবনা তা কাজে লাগাতে প্রস্তুত চীন।

চীনের সিআরআরসি টাংশানের মহাব্যবস্থাপক টান মু জানান, নতুন প্রজন্মের এই মেট্রোট্রেনটি যৌথভাবে ডিজাইন করেছে সিআরআরসি টাংশান ও পোরতো মেট্রো কোম্পানি। এখানে পছন্দ মতো ডিজিটাল প্রযুক্তির সংযোজন করা হয়েছে, ট্রেনটি তৈরি করা হয়েছে এমন সব উপাদান ব্যবহার করে যেন ওজনে হালকা হয়। ট্রেনটিতে কম জ্বালানী ব্যবহার করেই চালানো যাবে এমন উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপীয় সব মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে এই ট্রেনটি তৈরির ক্ষেত্রে।


একটি ট্রেনে ৬৪টি আসনে যাত্রী বসে যেতে পারবেন। দাঁড়িয়েসহ মোট যাত্রী পরিবহন করা যাবে ২৪৪জন। যাত্রীবোঝাই মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাং

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বাজার গবেষণা সংস্থা ক্যানালিসের প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে চীনে ফোনসেট বেচাকেনা হয় ২৮৭ মিলিয়ন। এই সংখ্যা তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালের পর এই প্রথম চীনে ফোন বিক্রির সংখ্যা ৩০০ মিলিয়নের নিচে নেমে যায়।

ফোনসেটের বাজারে এমন ধস নামার ফলে ভুগতে হয় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি কোম্পানি স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানি লিমিটেডকেও। তবে ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী অত্যাধুনিক ফোন উদ্ভাবন করে আবারো হারানো বাজার ধরার চেষ্টা করছে এই কোম্পানিটি।

সম্প্রতি চীনের বাজারে ক্রমেই ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বাড়াচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রযুক্তি কোম্পানি। বিশেষ করে চীনের স্মার্টফোন বাজারের একটি বড় অংশ দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে স্মার্টফোন উৎপাদনের হার ক্রমেই বাড়াচ্ছে স্যামসাং। আর সে কারণেই তরুণ প্রজন্মের ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে তারা বাজারে আনছে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ফোনসেট।

চলতি বছর স্যামসাং বাজারে আনে কোম্পানিটির সেরা মানের ৩টি ফ্ল্যাগশিপ ফোন গ্যালাক্সি এস-টুয়েন্টি থ্রি, গ্যালাক্সি এস-টুয়েন্টি থ্রি প্লাস এবং এস-টুয়েন্টি থ্রি আলট্রা। এসব ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ক্যামেরা। এসব ফোনে আছে উচ্চ রেজুলেশনের ইমেজ সেন্সর ও উদ্ভাবনী পিক্সেল প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে পেশাদার ও কাঙ্ক্ষিত মানের ছবি তোলার সুযোগ রাখা হয়। ফলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যায় স্যামসাং।

একা নয়, চীনের বাজারে প্রভাব সৃষ্টি করতে চীনা বেশ কয়েকটি অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে স্যামসাং।

চীনের সাংহাই ডিজনি রিসোর্টের সঙ্গে অংশীদারি ব্যবস্থায় এই থিমপার্কে স্থাপন করে পপ-আপ স্টোর। এখানে সুযোগ দেওয়া হয় গ্যালাক্সি এস-টুয়েন্টি থ্রি মডেলের ফোনের ক্যামেরা দিয়ে শর্ট ফিল্ম শুট করার সুযোগ। এর পাশাপাশি চীনের ম্যাঙ্গো টিভিতে লাইভ স্ট্রিমিং এবং পাইতু ইনকর্পোরেশনের সঙ্গে ভিডিও কনটেন্ট ও ইন্টারনেট অব থিংস বিষয়ক চুক্তি সই করে স্যামসাং।