আকাশ ছুঁতে চাই ১৫
2023-04-27 19:26:23

 

১. চীনে সার্জনের পেশায় এগিয়ে আসছেন নারীরা

২. গ্রামাঞ্চলে বিনোদন পৌঁছে দিচ্ছেন নারী প্রজেকশনিস্ট দল

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

চীনে সার্জনের পেশায় এগিয়ে আসছেন নারীরা

নারীরা অনেক বছর ধরে চিকিৎসা পেশায় থাকলেও সার্জেন হিসেবে কাজ করছেন এমন নারীর সংখ্যা এখনও অনেক কম। তবে দিনের পরিবর্তন হচ্ছে। পুরুষ প্রাধান্যের এই পেশাতেও এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা।

নারীরা চিকিৎসা পেশায় আছেন শতাধিক বছর ধরেই। কিন্তু সার্জন শুনলে এখনও পুরুষদের কথাই প্রথমে মনে আসে। কারণ সার্জনের পেশায় পুরুষের সংখ্যাই বেশি। তবে এই ধারণা পালটে দিচ্ছেন এই পেশায় এগিয়ে আসা নারীরা। খুয়াং চিয়ে একজন নারী সার্জন। শাংহাইয়ের একটি বিখ্যাত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রুইচিন হসপিটালের চিফ থায়রয়েড সার্ন তিনি। ২৫ বছর আগে যখন এখানে যোগ দেন তখন তিনি ছিলেন সাধারণ সার্জারি বিভাগের একমাত্র নারী।

তিনি জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পেশায় নারীদের সংখ্যা বাড়ছে। নিউরোসার্জারি এবং অর্থোপেডিকসের মতো মেলডমিনেটেড বা পুরুষশাসিত শাখাতেও নারীদের পদচারণা বাড়ছে।

অনেক বছর ধরেই রুইচিন হাসপাতালের প্রতি দশ সার্জেনের একজন নারী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অনুপাত ক্রমশ বাড়ছে।

চায়নিজ মেডিকেল ডকটর অ্যসোসিয়েশন এর সার্জিকাল শাখা ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায় দেশজুড়ে সার্জেনদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৬ শতাংশ।

খুয়াং জানান একসময় মনে করা হতো সার্জারির জন্য যে মানসিক ও শারীরিক চাপ নিতে হয় সেটা নারীর জন্য কঠিন। কিন্তু তিনি মনে করেন এখানে নারী পুরুষ কোন বিভেদ নেই। সকলের জন্যই ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ সার্জারির চাপ নেয়াটা কঠিন। পুরুষও ক্লান্ত হয়, নারীও। পুরুষও এই চাপ বহন করতে পারেন, নারীও পারেন। তিনি বলেন, ‘একজন পুরুষ, ঠিক নারী সার্জেনের মতোই দীর্ঘ সার্জারির পর ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। এখানে কোন জেন্ডার ভেদ আছে বলে আমি মনে করি না।’

খুয়াং মনে করেন চিকিৎসা পেশায় নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সমাজের সাংস্কৃতিক অগ্রসরতার সম্পর্ক রয়েছে। সমাজ যতো নারীর ক্যারিয়ার গঠনকে স্বাগত জানাবে ততো বেশি নারীরা ক্যারিয়ার গঠন করবেন।

খুয়াং একটি মজার অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন প্রথমদিকে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা অনেক রোগী একজন নারীকে সার্জন হিসেবে বিশ্বাস করতে পারতেন না। তারা নার্সদের জিজ্ঞাসা করতেন ওই নারী সত্যিই সার্জন কি না। পরবর্তিকালে এই ধারণার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

নারীদের সার্জারিতে আসার অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নারী রোগীরা নারী সার্জনের কাছে স্বস্তি বোধ করেন। ইন ওয়েনচিনেএকজন ব্রেস্ট সার্জন। এই বিভাগের তিনি প্রধান। তিনি বলেন, ,

‘অনেক রোগী বিশেষভাবে আমার কাছে আসেন কারণ তারা নারী সার্জন চেয়েছেন।’

দিনে দিনে নারী চিকিৎসকরা প্রমাণ করছেন যে তারা সার্জারিতে পুরুষের চেয়ে কোন অংশে কম দক্ষ নন। পেশায় তাদের এগিয়ে চলা অনুপ্রাণিত করছে অন্যদেরও।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

গ্রামাঞ্চলে বিনোদন পৌঁছে দিচ্ছেন নারী প্রজেকশনিস্ট দল

 

একদল নারী প্রজেকশনিস্ট। গ্রামে গ্রামে ঘুরে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে গ্রামের মানুষকে বিনোদন প্রদান করেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌছে দেন সংস্কৃতির ছোঁয়া। এই নারী দলকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন শুনবেন এখন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ জনগণকে আধুনিক সংস্কৃতির ছোঁয়া দিতে  কাজ করে চলেছেন একদল নারী। মধ্যচীনের হুবেই প্রদেশের শিইয়ান সিটির ইয়ুনইয়াং জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে কাজ করছেন এই নারী কর্মীর দল। তারা প্রজেকশনিস্ট। উন্মুক্ত আকাশের নিচে পর্দায় চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। ২০০৭ সালে জেলার ফিল্ম ডিসট্রিবিউশন অ্যান্ড এক্সিবিশন কর্তৃপক্ষ একদল নারীকে নিয়ে প্রজেকশনিস্ট গ্রুপ গঠন করেন। গ্রামাঞ্চলে সংস্কৃতির ছোঁয়া নামে জাতীয় কর্মসূচির আওতায় এই দল গঠিত হয়।

দলের প্রত্যেক সদস্য একটি করে এলাকার দায়িত্ব পান। প্রত্যেকটি গ্রামের গ্রামবাসীরা যেন চলচ্চিত্র দেখতে পারেন এবং জাতীয় সংস্কৃতির সাম্প্রতিক ধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন সে লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়। ৪৫ হাজার গ্রামবাসী এই উদ্যোগের উপকারভোগী হন।

এই দলের সদস্য ৪৬ বছর বয়সী সিয়ং ইয়ান বলেন,‘ আমি আমি অনেক স্থানে ভ্রমণ করেছি, অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এই ধরনের অনুভূতি শহরে কখনও হয়নি। আমি নিজের কাজ নিয়ে গৌরব বোধ করি। কারণ আমি গ্রামের মানুষের মধ্যে বিনোদনের ছোঁয়া দিতে পেরেছি, তাদের অবসর সময়কে আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছি।’

সিয়ং ইয়ান আগে শহরের একটি সিনেমা হলের প্রজেকশনিস্ট ছিলেন। তিনি তার আগের এবং বর্তমান কাজের মধ্যে তুলনা করে দেখতে পান যে এখনকার কাজে আনন্দ অনেক বেশি। তিনি গ্রামের মানুষদের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। দর্শকদের সঙ্গে বসে সিনেমাটি দেখেন। তাদের আনন্দ বেদনা অনুভব করেন। তারা যখন খুশি হয়ে তাকে ধন্যবাদ জানান তখন তার মন আনন্দে ভরে ওঠে।

তিনি বলেন, ‘আমি ও আমার সঙ্গীরা শহরে বড় হয়েছি। গ্রামের পরিবেশ বিষয়ে তেমন কোন ধারণা ছিল না। যন্ত্রপাতির ওজন প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম। এটা ওঠানামা করতেও  অনেক দৈহিক শক্তি লাগে। এগুলো নিজেদের যানবাহনে করে গ্রামে নিয়ে যেতে হয়। তবে এখন আমি গ্রামের প্রকৃতিকে ভালোবাসি। আলাদা আলাদা ফসল চিনি। গ্রামের মানুষ আমাকে অনেক সহায়তা করেন। প্রজেকশন যন্ত্রপাতি ওঠানো নামানোর কাজে তারা আমাকে সহায়তা করেন।’

এই নারীদলের কাজ চলে বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। বাকি সময়টা বেশি শীতের কারণে উন্মুক্ত প্রদর্শনী সম্ভব হয় না। বিরুপ প্রকৃতি ও রাস্তাঘাটের বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে সাহসের সঙ্গে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘোরেন এই নারীরা। তবে আগের চেয়ে এখন রাস্তাঘাট অনেক উন্নত হয়েছে।

এই দলের একজন সদস্য হু ছিন। জানালেন তার অভিজ্ঞতা। ২০১৯ সালের কথা। হু একটি গ্রামে যান প্রদর্শনীর জন্য। ওঠেন গ্রামের মোড়লের বাড়িতে। হু তখন তিনমাসের গর্ভবতী ছিলেন। মোড়লের স্ত্রী যখন তার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পারেন তখন হুয়ের জন্য  অনেক রকম পুষ্টিকর খাবার রান্না করেন। মায়ের মতো তার যত্ন নেন।

হু মনে করেন এমন আন্তরিকতা তিনি কখনও অনাত্মীয়দের কাছে প্রত্যাশা করেননি। তিনি যেখানেই গেছেন এমন আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা পেয়েছেন যা তাকে শ্রমের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।

এই নারী দল এভাবেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। তারা গ্রামাঞ্চলে সংস্কৃতি ও বিনোদন পৌছে দিয়ে ভরিয়ে তুলছেন গ্রামের অনেক বাসিন্দার জীবন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

কণ্ঠ: হাবিবুর রহমান অভি

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল