এপ্রিল ২৭: গত ২৬ এপ্রিল ওকিনাওয়ায় প্যাট্রিয়ট-৩ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়নের জন্য আত্মরক্ষী দল ও গাড়িবহর পাঠায় জাপান সরকার। একই দিনে জাতীয় অ্যালার্ম ব্যবস্থার আওতায় সংশ্লিষ্ট মহড়াও আয়োজিত হয়। সাইরেনের শব্দ শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন হন। তারা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, জাপানি সরকারের সামরিক সরঞ্জাম সম্প্রসারণের আচরণ শান্তিপূর্ণ সংবিধানের লঙ্ঘন এবং এতদঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
এদিকে, ওকিনাওয়াকে আবারও যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করা থেকে বিরত থাকার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ- সদস্যরা। তাঁরা, ওকিনাওয়ার ১৪ লাখ ৬০ হাজার বাসিন্দার পক্ষ থেকে, জাপানি সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর কেবিনেটের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। এতে জাপানি সরকারকে চীন ও জাপানের চারটি রাজনৈতিক দলিলের বিধিনিয়ম অনুসরণ করা এবং দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়। তবে, শান্তির জন্য দাবি জাপান সরকারের সুবুদ্ধি জাগ্রত করবে বলে মনে হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের রাজনৈতিক কাঠামোতে গভীর পরিবর্তন ঘটেছে। চীনকে শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করে ওয়াশিংটন এবং জাপানের ডানপন্থি শক্তিকে ক্রমগাত চীনের বিরুদ্ধে উস্কে দিতে থাকে। উস্কানির অংশ হিসেবে তথাকথিত ‘চীনা হুমকি’ তত্ত্ব উপস্থাপন করা হতে থাকে। জাপান সরকারও ব্যাপকভাবে সামরিক বাজেট বাড়িয়ে আক্রমণাত্মক অস্ত্র কিনেছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
গত ২৪ এপ্রিল স্টোকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিডিউটের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালে জাপানের প্রতিরক্ষা বাজেট ৫.৯ শতাংশ বেড়েছে, যা ১৯৬০ সালের পর সর্বোচ্চ। আগামী ৫ বছরে জন্য প্রণীত জাপানের সমুদ্র নিরাপত্তানীতির মূল লক্ষ্যও চীন। তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে প্রকাশ্যে চীনের সমালোচনা করা হচ্ছে, অথচ সেটি পুরোপুরি চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
বস্তুত, ইতিহাসে ওকিনাওয়া একটি স্বাধীন দেশ ছিল। ১৮৭৯ সালে জাপান তত্কালীন রিউকিউ রাজ্য দখল করে ওকিনাওয়া জেলা স্থাপন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ওকিনাওয়ার চার ভাগের এক ভাগ বাসিন্দা প্রাণ হারান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন সৈন্যদের ওকিনাওয়ায় মোতায়ন করা হয়। বর্তমানে জাপানে মোতায়নকৃত ৭০ শতাংশ মার্কিন সৈন্য ওকিনাওয়ায় আছে। মার্কিন সৈন্যদের নানান অপরাধের শিকার হয়েছেন ও হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
যুদ্ধের আঘাত সহ্য করা ওকিনাওয়ার জনগণ শান্তির জন্য আগ্রহী। তাদের প্রস্তাবে, জাপানি সরকারের সামরিক শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টার বিরোধিতা এবং চীনের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। তাদের যুক্তিযুক্ত দাবি শুনতে হবে জাপানি সরকারকে। আর তখনই কেবল সঠিকভাবে চীনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে জাপান। (সুবর্ণা/আলিম/রুবি)