এপ্রিল ২৭: গতকাল (বুধবার) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আমন্ত্রণে, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর সঙ্গে ফোনালাপে দু’দেশের সম্পর্ক ও ইউক্রেনের সংঘর্ষ নিয়ে মত বিনিময় করেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরেশিয়া বিভাগের উপপরিচালক ইউ জুন এদিন দু’নেতার ফোনালাপের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ইউ বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের অবস্থান স্পষ্ট এবং কখনো পরিবর্তন হয়নি। এ ব্যাপারে চীনের অবস্থান ন্যায্য অবস্থান। চীন বড় দেশ হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন।
ইউ জুন বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে ফোনালাপ দুটি পটভূমির উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
(রে ১)
“প্রথমত, চীন ও ইউক্রেন হলো পরস্পরের কৌশলগত অংশীদার। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৩১ বছর ধরে দু’দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীলভাবে উন্নত হয়েছে। দু’দেশ উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ বজায় রেখে চলেছে। ২০১৯ সাল থেকে চীন টানা চার বছর ইউক্রেনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। কোভিড-১৯ মহামারী ও ইউক্রেনের সংঘর্ষের পটভূমিতে, চীন-ইউক্রেন বাস্তব সহযোগিতায় কিছুটা ভাটা পড়ে। এবারের ফোনালাপে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, চীন ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। চীন ইউক্রেনের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা বজায় রাখতেও ইচ্ছুক। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনের সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই, একটি দায়িত্বশীল দেশ ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ হিসেবে, চীন ন্যায্য অবস্থান বজায় রেখেছে, শান্তি-আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে, এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে চলেছে। কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্ট সি রাশিয়া সফর করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে গভীরভাবে মত বিনিময় করেছেন। এ ছাড়া, ফরাসি প্রেসিডেন্ট, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টও সম্প্রতি চীন সফর করেছেন। এসব সফরে ইউক্রেনের সংঘর্ষ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। আন্তর্জাতিক সমাজও আশা করছে যে, চীন ইউক্রেনের সংকটে আরও বেশি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।”
ইউ জুন বলেন, বর্তমানে ইউক্রেনের সংঘর্ষ বিলম্বিত ও বর্ধিত হচ্ছে এবং স্পিলওভারের প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। অধিকাংশ দেশ উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানায় এবং যুদ্ধবিরতির জন্য শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক কণ্ঠস্বরকে সমর্থন করে। চীন বরাবরই শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে ইউক্রেনের সংঘাত বন্ধের পক্ষে। এ সম্পর্কে ইউ বলেন,
(রে ২)
“চীন ‘ইউক্রেন সংকট সমাধানের জন্য চীনা প্রস্তাব’ শীর্ষক দলিলপত্র প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা, ঠান্ডাযুদ্ধের মানসিকতা পরিত্যাগ করা, যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করা, শান্তি-আলোচনার সূচনা করাসহ ১২-দফা প্রস্তাব আছে এতে। এ ছাড়া, চীন ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় অসামরিক সহায়তাও দিয়ে আসছে। চীন আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে ইউক্রেন সংকট সমাধানের জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক।”
দুই প্রেসিডেন্টের আলোচনার ভিত্তিতে, চীন সরকার ইউরেশিয়াবিষয়ক প্রতিনিধি লি হুইকে ইউক্রেন সফরে পাঠাবে। তিনি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ইউক্রেন সংকট সমাধানের জন্য যোগাযোগ করবেন। চীনা সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির রাশিয়া, পূর্ব-ইউরোপ ও মধ্য-ইউরোপ গবেষণালয়ের প্রধান সুন চুয়াং চি এ সম্পর্কে বলেন,
(রে ৩)
“এতো জটিল একটি সমস্যা সমাধানের জন্য সব পক্ষের মাধ্যমে সম্পূর্ণ মতামত প্রকাশ করা প্রয়োজন, যাতে একটি ঐকমত্য তৈরি করা যায়। ইউক্রেনীয় সংকট চলছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। সেজন্য আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্বেগের জবাবে চীনও এমন স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেছে। কারণ এখন আরও বেশি দেশ আশা করছে, যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ হোক এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক।” (ছাই/আলিম)