চীনের বেইজিং শহরের চাও ইয়াং এলাকার হ্য পিং লি’র একটি বাস পার্কিং লটের বাইরে দাঁড় করানো বিশেষ একটি বাস সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ বাসে কোন যাত্রী নেই- বরং তাতে বিক্রি হচ্ছে তাজা ফল ও সবজি; যেমন: শসা, বেগুন ও কলা। দামও মোটামুটি সস্তা। দুপুর হলেও অনেকে এখনো কেনাকাটা করতে আসছেন।
বেইজিং বাস কোম্পানি এই ‘বাস দোকান’ খুলেছে। অব্যবহৃত এবং মেয়াদোত্তীর্ণ একটি বাসকে দোকানে পরিণত করা হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ ৩ বছরে এমন দোকান আরও ৩০০টি হবে।
এ বাসের রয়েছে চারটি জানালা। বাসের ওপরে লাগানো হয়েছে দোকানের চিহ্ন। এখানে দশ-বারো ধরনের সবজি ও ফল বিক্রি হয়। সাধারণ ফল ছাড়াও কিছু আমদানিকৃত ফল এখানে পাওয়া যায়। দামও বেশি না। যেমন: আধা কেজি শসা ১.৮ ইউয়ান এবং সবজি ১ ইউয়ানের চেয়ে কম ইত্যাদি।
এখন দুপুর ১২টা বাজে, তবে দোকানে আরও লোকজন আসছে। পাশের এলাকার বাসিন্দা ম্যাডাম সুন জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে এখানে সবচেয়ে ব্যস্ততা দেখা যায়। তাজা ফল ও সবজি কিনতে সকালে আসেন সবাই। তাদের অধিকাংশ আশেপাশের বাসিন্দা এবং অর্ধেকই বয়স্ক মানুষ। কারণ তারা দাম ও মানের উপর বেশ গুরুত্ব দেন। কম দামে ভাল মানের পণ্য কিনতে চান। তাই প্রবীণরা এ দোকান বেশ পছন্দ করেন।
লি দাদা জানিয়েছেন, তিনি প্রায় প্রতিদিনই এখানে আসেন এবং এই দোকানের একটি মেম্বারশিপ কার্ড করেছেন। মেম্বারশিপ কার্ড দিয়ে ডিসকাউন্ট পান। মেম্বারশিপ কার্ড দিলে আধা কেজি সবুজ পেঁয়াজের দাম মাত্র ০.৬ ইউয়ান, যা সুপার মার্কেটের চেয়ে অনেক সস্তা।
গত ৩১ মার্চ থেকে ‘বাস দোকান’ বেইজিংয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দাম কম বলে অনেক মানুষকে আকর্ষণ করেছে দোকানটি এবং তারা সবাই মেম্বারশিপ কার্ড করেছেন। মেম্বারশিপ কার্ড দিয়ে সব ধরনের পণ্যের আধা কেজির দাম গড়ে আরও ১ ইউয়ান কম হতে পারে।
বাসের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের দিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে পরিত্যক্ত বাস ব্যবহার করা হয় এবং প্রতিদিন বিশেষ পরিষ্কার কর্মী এসে তা পরিষ্কার করেন।
বাস দোকানের ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তাদের পণ্যের দাম কম হওয়ার কারণ হলো এটি একটি গণকল্যাণের প্রকল্প এবং তারা নিজেরাও একটি তাজা খাদ্য ব্যবসা কোম্পানি। তাদের ক্রয় ও গুদামজাতকরণ এবং লজিস্টিকসের ব্যবস্থা আছে। গ্রাম থেকে সরাসরি পণ্যগুলো আনতে পারে বলে ব্যয়ও কম হয়।
পাশের এলাকার বাসিন্দার মতে এমন দোকান খুব সুবিধাজনক এবং তারা ভাল মানের ও সস্তা সবজি ও ফল কিনতে পারেন। যদি বেইজিংয়ের অন্য জায়গায়ও এমন দোকান খোলা হয়, তাহলে আরও ভাল হবে।
আসলে ভবিষ্যতে বেইজিংয়ে আরও এমন দোকান হবে। বাস দোকান প্রকল্প কেবল শুরু হয়েছে। কমিউনিটির চাহিদা অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ বাস দিয়ে বিভিন্ন দোকান খোলা হবে। প্রতিটি দোকান খোলার আগে জায়গা বেছে নিতে হয়। সেখানে কমিউনিটি বেশি, মানুষ বেশি, পরিবহন সুবিধাজনক এবং কাছাকাছি দোকান কম- এমন জায়গায় বাস দোকান প্রতিষ্ঠা করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ৩ বছরে অন্তত ৩০০টি দোকান হবে। বেইজিং শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এর অন্তর্ভুক্ত হবেন।
বেইজিং বাস কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, নতুন বাস দোকানে যুক্ত করা হবে স্মার্ট লজিস্টিক, বিগ ডেটা ও খুচরা-বিক্রি ব্যবস্থা এবং তা নতুন করে ৩০০০টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
আসলে মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের ব্যবহার চীনে কোন নতুন খবর নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সি ছুয়ান, হু নান, কুয়াং তুং এবং হু পেইসহ চীনের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরণে বাস ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের জন্য নতুন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। দোকান ছাড়া, শীতকালে হিটিং রুম ও গ্রীষ্মকালে শীতল রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয় এসব বাস।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। হু নান প্রদেশের ইং চৌ শহরের মানুষকে ফল ও সবজি কেনাকাটায় সুবিধা দেয়ার জন্য চালু হয় বাস সুপারমার্কেট। বাইরে না গিয়ে মানুষেরা বাস সুপারমার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে কুয়াং তুং প্রদেশের হুই চৌ শহরে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস দিয়ে একটি দোকান করা হয়। ফল ও শাকসবজি ছাড়া সেখানে বিক্রি হয় তেল, চাল, মাছ, ইনস্ট্যান্ট খাবার ইত্যাদি।
২০২২ সালের গ্রীষ্মকালে হু পেই প্রদেশের ই ছাং শহরে কিছু বাসকে শীতল বাসে রূপান্তর করা হয়। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে যারা কাজ করেন; যেমন- নির্মাণকর্মী, ডেলিভারিকর্মী ও পরিষ্কারকর্মী, তারা এ বাসে বিনামূল্যে বিশ্রাম নিতে পারেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সি ছুয়ান প্রদেশের চেং তু শহরে চালু হয়েছে বাসের সেবা কেন্দ্র। বাসের সব চেয়ার সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং নতুন করে বড় বড় চেয়ার ও টেবিল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, গরম পানি ও ফোন চার্জিং ডিভাইসও সরবরাহ করা হয়েছে। বাইরে কাজ করার মানুষেরা শীতকালে এ বাসে বিশ্রাম নেন, গরম পানি পান করেন এবং ফোন চার্জ করতে পারেন। (শিশির/এনাম)