এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১. ধরিত্রী দিবস ২০২৩: বনায়নে এগিয়ে চীনের অন্তর্মোঙ্গোলিয়া
২. যে দেশে ভুট্টা ও সয়াবিন একসঙ্গে চাষ করা যায়
৩. ইয়াংজি নদীতে আবার দেখা যাবে ডাব্রিস স্টার্জন
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প”অনুষ্ঠানে।
১. ধরিত্রী দিবস ২০২৩: বনায়নে এগিয়ে চীনের অন্তর্মোঙ্গোলিয়া
পৃথিবীর বয়স বাড়ার সঙ্গে একরকম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর তাপমাত্রা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলবায়ু। এজন্য পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিবছর উদযাপন করা হয় আর্থ ডে বা ধরিত্রী দিবস।
গেল ২২ এপ্রিল বিশ্বের ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ এ দিনটিকে উদযাপন করেন। দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা রকম উদ্যোগ নেয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পরিবেশ কর্মী। এ বছর পৃথিবী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “ইনভেস্ট ইন আওয়ার প্ল্যানেট” যার অর্থ দাঁড়ায় পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের সবাইকে কিছু না কিছু বিনিয়োগ করতে হবে।
এ দিবসের সূচনা হয় ১৯৭০ সালে। ইউনেস্কোর এক শান্তিকর্মী সান ফ্রান্সিসকোতে দিবসটি উদযাপনের প্রস্তাবনা দেন। এরপর থেকেই বিশ্বের ১৯০টি দেশে বড় পরিসরে উদযাপন করা হয় ধরিত্রী দিবস।
বৃক্ষ রোপন, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারসহ নানা রকম উদ্যোগের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করতে বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানানো হয়।
দিবসটির মহৎ উদ্দেশ্যে উপলব্ধি করে সম্প্রতি চীনের অন্তর্মোঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে শুরু হয়েছে বৃক্ষরোপণ অভিযান।
এই অভিযানে অংশ নেয় ১০০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক।
বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের উপ-পরিচালক মা ছিয়াং জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা।
তিনি বলেন “গেল দশ বছর ধরে , প্রতি বছরে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জায়গাজুড়ে বনায়ন করেছে অন্তর্মোঙ্গোলিয়া। এছাড়া ৩০ মিলিয়ন মু পরিমাণ জমিতে ঘাস লাগিয়েছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই অঞ্চল।“
অন্তর্মোঙ্গোলিয়া প্রতি বছর গড়ে ১২ মিলিয়ন মু জমিতে বালি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী সম্পন্ন করেছে, যা সেই সময়ের মধ্যে দেশের মোট মরুকরণ নিয়ন্ত্রণ কাজের ৪০ শতাংশেরও বেশি।
চীনের বনায়ন এবং বালি নিয়ন্ত্রণ কাজে এগিয়ে আছে দেশের চারটি প্রধান মরুভূমি ও চারটি প্রধান বালি অঞ্চলের আবাসস্থল অন্তর্মোঙ্গোলিয়া।
সব মিলিয়ে পুরো দেশকে সবুজ চাদরে ঢেকে দিতে চীন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এজন্য পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখতে চীনের চলমান কার্যক্রমগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববাসী।
প্রতিবেদন: এইচ আর এস অভি
সম্পাদনা: এইচ আর এস অভি
২. যে দেশে ভুট্টা ও সয়াবিন একসঙ্গে চাষ করা যায়
চীনজুড়েই দেখা দেখা যায় ভুট্টা চাষের আধিক্য। সয়াবিনও একই মৌসুমের ফসল। কিন্তু এদিকে সয়াবিন ঘাটতি ও আমদানি কমাতে চীনের গবেষকরা এনেছে নতুন চাষপদ্ধতি। যে চাষ পদ্ধতিতে ভুট্টা ও সয়াবিন চাষ করা চাষ হচ্ছে একই সাথে। নতুন এই চাষ পদ্ধতি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে চীনে। বর্তমানে চীনে প্রায় ১ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমিতে চাষ করা হচ্ছে এই দুই ফসল।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছংতু শহর। যেখানে সারি সারি ভুট্টার গাছ। আর মাঝ দিয়ে লাগানো হয়েছে সয়াবিন। নতুন এই আন্তঃফসল পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছে চীনারা।
একই সাথে এই দু ফসল আবাদ একই সাথে কমিয়েছে অধিক কৃষি জমির ব্যবহার , কৃষকের পরিশ্রম আর উৎপাদন খরচ। অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে লাভবান হচ্ছেন খুব সহজেই।
চীন যখন সয়াবিনের ঘাটতির মুখোমুখি হয় বিশেষ করে তখন এই দুই ফসল একই সাথে আবাদের প্র্যোজনীয়তা উপলব্ধি করেন চীনা গবেষকরা। কেননা দেশটি প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন টন সয়াবিন আমদানী করেন। তাই সমগ্র চীনজুড়ে একই সাথে ভুট্টা-সয়াবিন চাষের কথা বলছেন চীনা গবেষকরা। ইয়াং ওয়েনিউ নামের এই চীনা গবেষক জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা।
বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে প্রোটিনের চাহিদা। একই সাথে সয়াবিন-ভুট্টার চাষ সেই চাদিহা পূরণেও রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
চীনের প্রায় এক মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমিজুড়ে চাষ করা হচ্ছে সয়াবিন-ভূট্টা। আর এর মাধ্যমে দেশের বার্ষিক সয়াবিন উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
নতুন এই চাষাবাদ পদ্ধতিতে ভুট্টার সারির মধ্যে রাখা হয় দুই মিটার জায়গা। যাতে করে মেশিন চালানোর জন্য সহজ হয় । আর এই চাষবাদ পদ্ধতির ব্যবসার সম্ভাবনা অনুধাবন করে, চীনের কয়েক ডজন কোম্পানি ইতিমধ্যেই বাজারে এনেছে সয়াবিন-ভুট্টা আন্তঃফসলের জন্য রোপণ ও ফসল কাটার যন্ত্রপাতি ।
সয়াবিন- ভুট্টার আন্তফসল চাষপদ্ধতিতে গবেষনায় ২৩ বছর পার হয়েছে ঈয়াং ওয়েনিউয়ের। তিনি চান এভাবেই দুই ফসল চাষে কৃষককে উৎসাহিত করে খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে।
প্রতিবেদন : আফরিন মিম
সম্পাদনা : এইচ আর এস অভি
৩. ইয়াংজি নদীতে আবার দেখা যাবে ডাব্রিস স্টার্জন
চীনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা কার্যক্রমের সুফল ফলতে শুরু করেছে। ইয়াংজি নদীতে আবার দেখা যাচ্ছে ডাব্রি’স স্টার্জন নামে বিপন্ন প্রজাতির মাছ। এই মাছ চীনের প্রথমশ্রেণীর জাতীয় সুরক্ষার আওতায় রয়েছে।
ডাব্রি’স স্টার্জনের আরেক নাম ইয়াংজি স্টার্জন । ইয়াংজি নদী বা ছাং চিয়াংয়ের উচ্চ অববাহিকায় এর আবাসস্থল।
জল দূষণসহ অন্যান্য কারণে মাছটি ২০০০ সাল থেকে তার প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষমতা হারায়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার গত বছরের জুলাই মাসে মাছটিকে বন্য অবস্থায় বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে , জলের নীচের ক্যামেরাগুলি সম্প্রতি ইয়াংজি স্টার্জনের প্রাকৃতিক জন্ম এবং ডিম থেকে পোনা তৈরির দৃশ্য ধারণ করেছে৷ এটি প্রমাণ করেছে যে ইয়াংজি স্টার্জনের বন্য অবস্থায় প্রজনন করার ক্ষমতা রয়েছে।
অতিরিক্ত মাছ ধরা একসময় একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ ছিল যা ইয়াংজি স্টারজন এবং ইয়াংজি নদীর অন্যান্য বিরল এবং স্থানীয় মাছের প্রজাতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল।
নদীর ধারে জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করার জন্য, চীন ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ইয়াংজি নদীর অববাহিকার ৩৩২টি সংরক্ষণ এলাকায় সম্পূর্ণ ভাবে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে। এক বছর পর, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ বছরের জন্য ইয়াংজি নদীর জলে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: এইচআরএস অভি
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ রেডিও অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা – এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী