‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ১৫
2023-04-25 17:47:52


এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। যে কারণে ভাইরাল চিন তিং সুয়ান রেস্টুরেন্ট!

২। মে দিবসের ছুটি: পর্যটন গন্তব্যে ছুটছে চীনারা

৩। বেইজিংয়ের ইউইউয়ানথান পার্ক

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া  

একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ঘুরে বেড়াই

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ১৫তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।   

১। যে কারণে ভাইরাল চিন তিং সুয়ান রেস্টুরেন্ট!

ঐতিহ্যাবাহী চীনা শৈলীর বৈশিষ্ট্যে সাজানো  চিন তিং সুয়ান। এটি বেইজিংয়ের ২৪ ঘন্টা খোলা থাকা একটি রেস্টুরেন্ট। সাধারণত ক্যান্টনিজ, সিচুয়ান, হুয়াইয়াং এবং বেইজিং খাবারের জন্য এই রেস্টুরেন্টের আছে সুপরিচিতি। চিংড়ির ডাম্পলিং এবং কাঁকড়া ডাম্পলিং, মূলা দিয়ে স্টিউড গরুর মাংস এবং কালো শিমের সসসহ পাঁজর সবই পাওয়া যায় এখানে।  

তবে আরেকটি বিশেষ কারণে এই রেস্টুরেন্ট সম্প্রতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কারণ এই রেস্টুরেন্টকে বলা হয়ে থাকে মধ্যবয়সী পুরুষদের শেষ আশ্রয়স্থল। জীবনের ধকল সামলাতে সেখানে গিয়ে একাকী সময় কাটাতে পারেন এই পুরুষেরা। এমনকি অনেকে কান্নাকাটি করে মন হালকা করেও নেন।


চিন তিং সুয়ানের বেশির ভাগ ক্রেতাই মধ্যবয়সী পুরুষ। তাদেরই একজন তাছি। তাছি এই ছদ্দনামে তিনি বলেন, এই রেস্টুরেন্টে আমি  পাঁচ বছর ধরে আসি । এখানে এমন কিছু সুবিধা রয়েছে, যা কেবল মধ্যবয়সী পুরুষদেরই মনে ধরবে। তাই এটি আমাদের জন্য দারুণ একটি জায়গা


চিং তিং সুয়ান রেস্তোরাঁটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকা এবং কোলাহল মুক্ত হওয়ার সুযোগ নেন তাছির মতোই আরেকজন। চাকরি বা পরিবার নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকলে তিনি সেখানে গিয়ে সময় কাটান।


পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি  বলেন, আমি এখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমাকে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। বিভিন্ন ধরনের মানুষ নানা ধরনের খাবার খাচ্ছে, এটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।

চিন তিং সুয়ানের একজন ব্যবস্থাপক কুয়ো। তিনি জানালেন, তাঁদের রেস্তোরাঁর বেশির ভাগ ক্রেতা মধ্যবয়সী পুরুষ এবং সন্ধ্যার পর সেখানে আসেন।

তিনি বলেন, ক্রেতারা এক-দুজন বন্ধু নিয়ে আসেন। দীর্ঘ সময় ধরে আড্ডান দেন। আবার অনেকে একাই আসেন। কেউ কেউ আবার একাকী বসে কাঁদেনও।


সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল এ রেস্টুরেন্ট  চলছে নানা আলোচনা। যেমন একজন বলেছেন, পুরুষেরাও মানুষ। মুক্তভাবে শ্বাস নেওয়ার জন্য তাঁদেরও কিছুটা সময় ও জায়গা প্রয়োজন।


এদিকে শুধু মধ্যবয়সী পুরুষদের জন্য এমন রেস্তোরাঁ থাকার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না অনেক নারীই। তাদেরও দাবী করছেন তাদের জন্যও চাই এমন রেস্টুরেন্ট।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা-শান্তা মারিয়া

 

২। মে দিবসের ছুটি: পর্যটন গন্তব্যে ছুটছে চীনারা

কর্মঠ জাতি হিসেবে সারাবিশ্বেই সুনাম রয়েছে চীন দেশের মানুষের। চীনের মানসম্মত পণ্যগুলো বিশ্ববাসীর হাতে পৌঁছে দিতে বছরজুড়েই পরিশ্রম করেন তারা। তাই কর্মীদের সতেজ রাখতে এবারের মে দিবসে ৫ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে চীন সরকার।

২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে, এ ৫ দিন নিজেদের মতো করে অবকাশ যাপনের সুযোগ পেয়ে ভীষণ খুশি দেশটির নাগরিকরা। আসলে চীন দেশের মানুষেরা ঘুরে বেড়াতে ভীষণ পছন্দ করেন। এসময়গুলোতে চীনের মেগাসিটিগুলো থাকে শীর্ষ গন্তব্যে।

অনলাইন ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম সি ট্রিপ জানায়, অভ্যন্তরীন পর্যটনে মেগাসিটি সাংহাই চীনের মানুষের কাছে শীর্ষ গন্তব্য। এর পরে রয়েছে রাজধানী বেইজিং ও নানচিং। শীর্ষ দশের অন্য মেগাসিটিগুলো হলো ছংতু, সিয়ান, হাংচৌ, ছাংশা, উহান, ছোংছিং ও ছিংতাও।

সি ট্রিপ জানায়, এবারের ছুটিতে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ বুকিং আগের বছরের চেয়ে ৩৯০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিমান টিকিট বুকিং বেড়েছে ২৯২ শতাংশ। চায়না স্টেট রেলওয়ে গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড বলছে মে দিবসের ছুটিতে ভ্রমণের চাপ সামলানোর জন্য ২৭ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে চালু করা হয়েছে ১৫শটি অতিরিক্ত যাত্রীবাহী ট্রেন।

এদিকে চীনের সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, মে দিবসের ছুটিতে চীনে বিমানে যাত্রা করবে ৯ মিলিয়ন পর্যটক। যাত্রীদের ভ্রমণের চাহিদা মেটাতে, দেশীয় ও বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো এই সময়ের মধ্যে ৩ হাজার ৫০০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে প্রশাসন।


প্রশাসন প্রত্যাশা করছে , অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ৬৫ হাজারে পৌঁছাবে এবং ১২ মিলিয়নেরও বেশি আসন পূর্ণ হবে, যা গেল বছর আগের মে দিবসের ছুটিতে চলা ফ্লাইটের চেয়ে বেশি।

সব মিলিয়ে এতসব কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো নাগরিকদের হাসি খুশি রাখা।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা-হাবিবুর রহমান অভি  

 

৩। বেইজিংয়ের ইউইউয়ান থান পার্ক

বেইজিংয়ের অন্যতম প্রধান পার্ক হলো ইউইউয়ান থান পার্ক। এখানে রয়েছে বিশাল জলাশয় যার নাম ইউ ইউয়ান। একে ঘিরে রয়েছে অনেক চেরি ফুলের গাছ।

এপ্রিল মে মাসে এই পার্কে দেখা যায় চেরিফুলের অপূর্ব শোভা। বেইজিংয়ের হাইডিয়ান জেলার দক্ষিণে ১৩৭ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে অপূর্ব সুন্দর এই পার্ক। এখানে রয়েছে ২০ প্রজাতির ২০০০ চেরি গাছ। এর মধ্যে দু'রকম ধরন রয়েছে। এক ধরনের গাছে ফুল আসে বসন্তের শুরুতেই। আর অন্য রকম গাছে একটু দেরিতে ফোটে ফুল।


এখানে হয়ে থাকে  চেরি ব্লজম ফেস্টিভ্যাল । কেননা এই  চেরিগাছগুলোর রয়েছে বিশেষ ঐতিহাসিক তাত্পর্য। চীন-জাপান স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ সালে বেইজিংকে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ১০০০ চেরি গাছ উপহার পাঠায় জাপান। তার মধ্যে ১৮০টি গাছ লাগানো হয় ইউইউয়ানথান পার্কে।

ইউইউয়ানথান পার্কে রয়েছে বিশাল লেক। ইস্ট লেক, ওয়েস্ট লেক, বায়ি লেক এবং ইনশুয়ি লেক। চারটি লেকের স্বচ্ছ নীল পানি সূর্যের আলোয় ঝলমল করে এখানে।

লেকে নৌকা ভ্রমণের রয়েছে সুব্যবস্থা। অনেক দর্শক নৌকা ভ্রমণ উপভোগ করেন এখানে। অপরূপ লেকের দৃশ্য মুগ্ধ করে সবাইকে। এছাড়া প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে পার্কের পাশে অবস্থিত ৪০৫ মিটার দীর্ঘ সিসিটিভি টাওয়ার। নীল আকাশের ক্যানভাসে সিসিটিভি টাওয়ারকে দেখতে অসাধারণ লাগে। লেকের পানিতে পড়ে টাওয়ারের ছায়া।


এই পার্কের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস । লিয়াও (৯০৭-১১২৫ খ্রিস্টাব্দ) এবং চুরছেন (১১১৫-১২৩৪ খ্রিস্টাব্দ) রাজবংশের সময়  বেইজিং ছিল দ্বিতীয় রাজধানী। তখন শহরের উপকণ্ঠে ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি চমৎকার জায়গা ছিল এখানকার বনভূমি।

তবে এখানে তখন লেক ছিল না। ছিং রাজবংশের সম্রাট ছিয়ানলং ১৭৭৩ সালে এখানে একটি প্রাসাদ গড়ে তোলেন। পরে জায়গাটি রক্ষাবেক্ষণের অভাবে পরিত্যক্ত হয়, লেকও প্রায় শুকিয়ে যায়।


১৯৬০ সালে চীন সরকার ইয়োনতিং নদী থেকে লেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা এবং স্থানটির সংস্কার করে। নব্বই দশকে পার্কটির বর্তমান স্থাপনাগুলো গড়ে তোলা হয়। এখন এটি বেইজিং মহানগরীর একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট।


বিশেষ করে বসন্ত ও গ্রীষ্মে এই পার্কে ফুলের শোভা দেখতে অনেকেই যান। এখানকার জলাশয়ে স্পিডবোট চালানোর ব্যবস্থাও রয়েছে।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম ও রফিক বিপুল  

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী