তাইওয়ান ইস্যু ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কিত না: আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী মিত্রের মতামত
2023-04-24 14:41:17

চীন সফরের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকখোঁর প্রাসঙ্গিক মন্তব্য উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং তার চীন নীতির বিবৃতি পশ্চিমা দেশগুলোতে উত্তেজনা ও কিছুটা অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। চীন সফরের পর ইউরোপীয়দের 'আমাদের নয়'- এমন সংকটে না-জড়ানোর পরামর্শ দেন ম্যাকখোঁ। তিনি বলেছিলেন যে ইউরোপকে তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অনুসরণ’ করা উচিত নয়। এই বিবৃতি যুক্তরাষ্ট্রে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। অর্ধ মাস নীরবতার পর গত বৃহস্পতিবার ম্যাকখোঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফোন করেন।

 

বাইডেন-ম্যাকখোঁর টেলিফোন আলোচনার ফলাফল কী ছিল? রয়টার্স লক্ষ্য করেছে যে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা বিবৃতি তাইওয়ান ইস্যুতে ভিন্ন।

এলিসি প্রাসাদের জারি করা বিবৃতিতে তাইওয়ানের কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, শুধুমাত্র বলা হয়েছে যে উভয় পক্ষই "সব ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নৌচলাচলের স্বাধীনতা-সহ আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখতে চায়"।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে এর বিপরীত কথা বলা হয়েছে, দুই নেতা "তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছেন"।

 

স্পষ্টতই, ফরাসি প্রেসিডেন্টের এবারের বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঐতিহ্যবাহী মিত্র দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে না কেন?

এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ ট্রিবিউন’ রয়টার্সের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে, তাইওয়ান ইস্যুতে চীন-মার্কিন উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটেও ইইউ’র কোনও নীতি নেই। এরপরও ইইউ নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাইওয়ান প্রণালীর বিষয়ে কি অবস্থান নেবেন তা নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছেন।

 

দীর্ঘ সময় জার্মান কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করা ওল্ফগ্যাং ইশিঞ্জার বলেছেন, কয়েকটি ইউরোপীয় ছোট দেশ খুব বেশি দিন আগে তাইওয়ান নিয়ে চীন-মার্কিন উত্তেজনায় কোনও নজর দেয় নি। এমন বৃহৎ ও জটিল ইস্যুতে তারা দূরে থাকতে পছন্দ করতেন।

তাইওয়ান নিয়ে ইউরোপের নীতির মূলকেন্দ্রে রয়েছে ‘এক-চীন নীতি’। প্রতিটি ইইউ সদস্যরাষ্ট্র তাইওয়ানকে ভিন্নভাবে দেখে। এই অবস্থা নির্ভর করে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা জোরদার হবে তার ওপর।

 

যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফোকাস তাইওয়ানকে সশস্ত্র আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। কারণ তাইওয়ানে হামলা হলে ইইউ ব্যাপক অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখে পড়বে। যেকোনো সংঘর্ষ ইউরোপীয় ও চীনা সরবরাহ লাইনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। এতে দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে পণ্য চলাচলে প্রভাব পড়তে পারে।

চীনকে দমন করতে "তাইওয়ান কার্ড" নিয়ে খেলতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রের তুলনা করে, ঐতিহ্যিক মার্কিন মিত্ররা ধীরে ধীরে সমস্যার সারমর্ম দেখতে পেয়েছে। চীন বিশ্বের বহুপাক্ষিকতা বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আজ চীনের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা এবং ইইউও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা যেতে পারে।

চীনের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিকে ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে হবে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রণালীর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করা যাবে না।

 

জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই