‘লিন জে সুই’ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত
2023-04-23 19:03:45

ত্রয়োদশ বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলাকালে গতকাল (শনিবার) ‘চীনা ভাষার মুভির শক্তি’ ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত ‘লিন জে সুই’-এর প্রিমিয়ার রাজধানী থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

 

প্রিমিয়ারে এর প্রধান নির্মাতা ও ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসের উপ-মহাপরিচালক কোং চি ছেং বলেন, ‘লিন জে সুই’ এবারের বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘বেইজিং ফিল্ম পানোরোমা’ ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তা প্রমাণ করেছে যে স্টেজ পারফর্মেন্স আর্ট এবং ফিল্ম আর্টের আন্তঃসীমান্ত সংহতকরণ আরও নিখুঁত এবং পরিপক্ব হয়ে ওঠছে। উপস্থাপনের এই পদ্ধতি কেবল শিল্প ও প্রযুক্তির আন্তঃসীমান্ত একীকরণের নতুন দিক নয়, বরং সকলের জন্য নান্দনিকতাকে জনপ্রিয় করে তোলার গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল। বর্তমানে মঞ্চ আর্ট ফিল্ম ইতোমধ্যে বিশ্বের বিখ্যাত থিয়েটারের উন্নয়নের দিক এবং অপারেশন পরিচালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখন পর্যন্ত ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস মোট ৩২টি মঞ্চ আর্ট ফিল্ম শুটিং এবং তৈরি করেছে।

 

‘লিন জে সুই’ ৮কে আলট্রা হাই ডেফিনিশন পদ্ধতি দিয়ে শুটিং করা হয় এবং নাটক মঞ্চে অভিনয়ের প্রতি সম্মান করার ভিত্তিতে ফিল্ম-স্তরের প্রযোজনায় শিল্পীদের চমৎকার অভিনয় রেকর্ড করা হয়। আগামি মাসে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব আলট্রা হাই ডেফিনিশন সম্মেলনে এ সিনেমার ৮কে’র সংস্করণ প্রথমবার স্ক্রিনিং হবে।

 

ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস সৃজনশীল ধারণা দিয়ে মঞ্চ নাটক কেবলমাত্র মঞ্চে সীমাবদ্ধ না করার চেষ্টা করে। সাধারণ সিনেমার চেয়ে ‘লিন জে সুই’ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, তা হলো এতে নৃত্য রয়েছে। মঞ্চের ডিজাইনার ছিও সিন বিশেষভাবে স্টেজটিকে ১১ ডিগ্রী পর্যন্ত কাত করে তুলেছেন। সামনের সারিতে থাকা দর্শকরা মঞ্চের গভীরতম অংশে কী ঘটছে- তা স্পষ্টভাবে দেখতে পারেন এবং দর্শকরা পিছনের সারিতেও মঞ্চের পিছনের সাথে একটি সমান দৃষ্টি রেখা পেতে পারেন।

 

কোরিওগ্রাফার হুয়াং তৌ তৌ দর্শকদের সঙ্গে কোরিওগ্রাফি’র পিছনের গল্প শেয়ার করেন। এগারো ডিগ্রী জায়গা আশেপাশের জীবনে খুব কম পাওয়া যায়, তাই তিনি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজের র‌্যাম্পে বারবার নাচের চল বিবেচনা করতেন।

 

নিজের এই শিল্পকর্ম নিয়ে খুব সন্তুষ্ট বলে এর মঞ্চ পরিচালক ওয়াং সিও তি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবশেষে এই সিনেমা তার কল্পনার চেয়ে আরও ভালো হয়েছে। তিনি আশা করেন, সবাই প্রেক্ষাগৃহে এই সিনেমা দেখতে যাবেন।

 

প্রিমিয়ারে সাংবাদিকরা দেখতে পান যে যারা এ সিনেমার প্রিমিয়ার দেখতে আসেন, তারা বিভিন্ন শ্রেণীর বয়সের লোক। এক তরুণ মা নিজের ছোট বাচ্চাকে নিয়ে মুভি দেখতে আসেন। তিনি বলেন, লিন জে সুই হলেন চীনের জাতীয় বীর। তার উদ্যোগ ‘হুমেনে আফিমের ধ্বংস’ চীনের ইতিহাসে দারুণ বিখ্যাত। এই ঘটনাটি পরবর্তীতে প্রথম আফিম যুদ্ধের ফিউজে পরিণত হয়। আজ আমি বাচ্চাকে নিয়ে এ মুভি দেখতে আসি। আশা করি, ছোটবেলা থেকে চীনের ইতিহাস সম্পর্কতে সে জানতে পারবে।

  

বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের একটি স্থায়ী ইউনিট হিসেবে ‘চীনা ভাষার মুভির শক্তি’ ইউনিট তরুণ চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃষ্টিতে মনোযোগ দিতে থাকে এবং তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আবিষ্কার ও প্রচারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠেছে।

 

উল্লেখ্য, ‘লিন জে সুই’ চীনের এই বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্যক্তির নামে নামকরণ করা হয়। এই বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা সঠিকভাবে তুলে ধরতে ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস এবং চীনের কুয়াং তোং ড্রামা আর্ট সেন্টার মনোযোগ দিয়ে সংগঠন এবং পরিকল্পনা করেছে। নির্মাণ দলের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে  হুমেন, ইলি, বেইজিং এবং ফুচৌসহ অনেক জায়গায় গিয়েছিল, যেখানে লিন জে সুই বাস করতেন।

 

যখন চীনা জাতি সংকটে ছিল এবং ছিং রাজবংশের বিশৃঙ্খল শাসনামলে ছিল। তখন লিন জে সুই রাজনীতির উন্নতি, দুর্নীতি দমন এবং মন্দকে নির্মূল করতে অনেক কাজ করেছেন। তিনি দেশের সমৃদ্ধি এবং গণজীবিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আফিম যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ আগ্রাসীদের গানবোটের মুখোমুখি হয়ে তিনি হাতে পুরানো অস্ত্র নিয়ে বারবার শত্রুদের পরাজিত করেছিলেন। তিনি পাশ্চাত্যের উন্নত সামরিক প্রযুক্তি শেখার মাধ্যমে আগ্রাসন প্রতিরোধ ও দেশকে শক্তিশালী করার উপায় অনুসন্ধান করার প্রস্তাব দেন। বলা যায়,তার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিহাসের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে যায়।

 

ত্রয়োদশ বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলাকালে ‘চীনা ভাষার মুভির শক্তি’ ইউনিটে ছোট এবং মাঝারি খরচের চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে।

 

সবাই জানেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ ব্যয়বহুল একটি কাজ। দারুণ একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে অনেক জনশক্তি এবং সম্পদ ব্যবহৃত করতে হয়।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে ছোট এবং মাঝারি খরচের চলচ্চিত্রগুলো আরও বেশি মনোযোগ পাচ্ছে। বিভিন্ন জাতীয় নীতির দৃঢ় সমর্থনে ছোট এবং মাঝারি খরচের চলচ্চিত্রগুলো শুধুমাত্র সৃষ্টির বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক নয়, বরং চলচ্চিত্র বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়ে ওঠেছে।

 

লিলি/এনাম/রুবি