মাটির ভাস্কর্যের শিল্পী সুই উই লিং
2023-04-20 14:30:03

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাটির ভাস্কর্যের সঙ্গে তার প্রথম যোগাযোগ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়। তার একজন বন্ধু, যিনি ভাস্কর্য নিয়ে অধ্যয়ন করেন, নিজের শিল্পকর্ম উপভোগ করতে তাকে আমন্ত্রণ জানান।

 

টেবিলের মাটি দেখে আমি হাত দিয়ে খেলতে শুরু করলাম। বন্ধুর সাহায্যে তিনি একটি ভেড়া বানিয়েছিলেন। তখন থেকে মাটির ভাস্কর্যের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তবে, সেই সময় মাটির ভাস্কর্য শুধুমাত্র তার একটি সখ ছিল।

 

সুই উই লিংয়ের একটি অভিভাবক পরিবার আছে। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয় তার। বাবা প্রবীণ হয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা স্কুলের ফি এবং দৈনন্দিন খরচ বহন করতে টাকা উপার্জন করেন। নিজের লেখাপড়ায় নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে স্থিতিশীল আয় করতে চাইলে তিনি একটি পার্ট-টাইম চাকরি খুঁজে পেয়েছেন।

 

তায়কোয়ান্দো সহকারী হিসেবে তিনি একটি পার্ট-টাইম চাকরি পান। ধীরে ধীরে তিনি তায়কোয়ান্দো সহকারী থেকে কোচ পর্যন্ত হয়ে ওঠেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর তিনি বন্ধুর সঙ্গে মিলে একটি তায়কোয়ান্দো শিক্ষাদান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।

 

এই প্রক্রিয়ায় সুই উই লিং কখনও মাটির ভাস্কর্য ছেড়ে দেন নি। তবে, তিনি কখনও এটিকে আনুষ্ঠানিক ক্যারিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেননি। তারপর মহামারী এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তায়কোয়ান্দো শিক্ষাদানের কেন্দ্রটি বন্ধ করতে বাধ্য হন তিনি। তখন ২০১৯ সালের একটি ব্যাপার তার মনে পড়ে।

 

যখন তিনি তায়কোয়ান্দো শিক্ষাদানের কেন্দ্রে কাজ করতেন, তখন একজন ছাত্রের মা জেনে নিলেন যে তিনি মাটির ভাস্কর্য তৈরি করতে পারেন, তাই তিনি আমাকে তার বাবা মা’র জন্য মাটির ভাস্কর্য বানানোর অনুরোধ করেন। তার বাবা জীবিত ছিলেন এবং এখন তার বয়স ৭০ বছরেরও বেশি এবং তার মা ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে মৃত্যুবরণ করেন। তার কাছে মা’র একটি খুব পুরানো ছবি আছে এবং এটি খুব স্পষ্টও নয়, প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াকরণের পরও স্পষ্ট হয়নি। তাই তিনি মাটি ভাস্কর্যের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করতে চান একে। তার এই অনুরোধে সুই উই লিং রাজি হন। মাটির ভাস্কর্য সম্পন্ন করার পর তিনি অবাক হওয়ার সাথে সাথে দারুণ মুগ্ধও হন। তিনি বলেন, ‘আপনার তৈরি এই মাটির ভাস্কর্য আমার মা’র সঙ্গে দারুণভাবে মিলে গেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ, আমি আবার মা’র সঙ্গে দেখার অনুভব বোধ করছি।’

 

এই ব্যাপারটা সুই উই লিংকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তিনি ভাবেন, মাটির ভাস্কর্যের এই নৈপুণ্য অন্যদের উষ্ণতা বয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আলোকিত করে তুলতে সক্ষম। তাই তিনি মাটির ভাস্কর্যকে পেশা হিসেবে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেন।

 

২০২১ সালে ২৯ বছর বয়সী সুই উই লিং পেশাগত একজন ভাস্কর্য মাস্টারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাটির ভাস্কর্য শিখতে শুরু করেন। কিছু লোক এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ অনুভব করতে পারেন। তবে, সুই উই লিং খুব শান্ত বোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ৫৫ বছর বয়সে নিজের উদ্যোগে প্রথাগত চীনা মেডিসিন শিখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। তিনি এ সংক্রান্ত অনেক বই কিনেছেন এবং মুখস্থ করেছেন। প্রায় ৬০ বছর বয়সে তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা দিতে চান। আমার বাবা সব সময় আমাকে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন ব্যক্তি কিছু শিখতে চায়, ততক্ষণ সে বয়স এবং অসুবিধাকে ভয় পায় না।’

 

মাটির ভাস্কর্য তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর ভিত্তি আছে। তাই খুব দ্রুত শিখতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমার শিক্ষক আমাকে বলেন, হস্তশিল্প তৈরি করার দিকে সব সময়ই নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হয়।’

 

শিক্ষক খুব কঠোরভাবে সুই উই লিংকে শিক্ষাদান করেন। অত্যন্ত ছোট্ট একটি সমস্যা হলেও শিক্ষক তাকে আবার তৈরি করার কথা বলেন।

 

এখন অনেক লোক নিজের আত্মীয়স্বজনের ছবি নিয়ে সুই উই লিং’র কাছে চলে আসেন। তারা আশা করেন, সুই উই লিং এসব ছবি অনুযায়ী মাটির ভাস্কর্যের মাধ্যমে তাদের মৃত আত্মীয়স্বজনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করবেন।

লিলি/এনাম/রুবি