চলচ্চিত্র কীভাবে বিদেশী দর্শকদের কাছে চীনকে তুলে ধরছে?
2023-04-20 14:25:13

‘হিস্ট্রি অব চায়নিজ সিনেমা’ নামের বইয়ের ইংরেজি সংস্করণটি সম্প্রতি বিদেশী ভাষা পাবলিশিং হাউস দ্বারা প্রকাশিত হয়। এটি চীনা চলচ্চিত্রের ইতিহাস এবং বিকাশ সম্পর্কে চীনের প্রকাশিত প্রথম ইংরেজি ভাষার রচনা, যা ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

 

চীনা চলচ্চিত্রের বিকাশের প্রেক্ষাপট কী? চলচ্চিত্র সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহক। এটি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে কী কী ভূমিকা পালন করে? ‘হিস্ট্রি অব চায়নিজ সিনেমা’ নামের বইয়ের ইংরেজি সংস্করণের প্রকাশ কীভাবে চলচ্চিত্র ইতিহাসের ক্ষেত্রে চীনা চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক প্রভাব শক্তিশালী করে তুলবে? এসব নিয়ে ‘হিস্ট্রি অব চায়নিজ সিনেমা’ নামের বইয়ের লেখক তিং ইয়া পিং সম্প্রতি চায়না নিউজ সার্ভিসের কাছে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

 

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে তাঁর সেই সাক্ষাৎকারটি শুনবো।

 

প্রশ্ন: চীনা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কি ধরনের উন্নয়ন দেখা যায়?

তিং ইয়া পিং: ফ্রান্সের প্যারিসের একটি কফি হাউসে ওগেস্তে লুমিয়েরে ভাইয়েরা দর্শকদের কাছে মুভি তুলে ধরার পরের বছর চীনের শাংহাই শহরে মুভি প্রদর্শিত হয় এবং সেই বছরকে চীনের স্ক্রিনিং শিল্পের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, চীনা চলচ্চিত্র বিশ্ব চলচ্চিত্রের সাথে প্রায় একই সাথে যাত্রা শুরু করে। চীনের পাঁচ হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জাতীয় চেতনা এবং জাতীয় উপকথা এই শিল্প বিভাগে একীভূত হয়েছে, যা সঙ্গীত, নৃত্য এবং সাহিত্যের চেয়ে অনেক পরে জন্মেছিল।

 

চীনা চলচ্চিত্রের একশ বছরেরও বেশি সময়ের বিকাশের দিকে ফিরে তাকালে চলচ্চিত্র তার বহুমাত্রিক চিত্র কল্পনার সাথে আধুনিক চীনা সমাজের দুর্দান্ত প্রক্রিয়াকে প্রতিফলিত করেছে এবং চলচ্চিত্রের কার্যকারিতা, নির্মাণের ব্যবস্থা, ট্রান্সমিশন মেকানিজম এবং শৈল্পিক নান্দনিকতাসহ নানা ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট জাতীয় ছাপসহ চীনা চলচ্চিত্র উন্নয়নের ল্যান্ডস্কেপ গড়ে তুলেছে।

 

চলচ্চিত্রের জন্ম থেকেই ব্যবসার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে। বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রাথমিক প্রযোজনা মডেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সামাজিক প্রভাব বেড়ে যাচ্ছে। বিংশ শতাব্দীর ৩০’র দশকে উদীয়মান চলচ্চিত্র আন্দোলন চলচ্চিত্র নির্মাণকে বাস্তববাদের দিকে নিয়ে যায়। তারপর থেকে সামাজিক, রোমান্টিক, মানবতাবাদী বা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সৃষ্টিতে সামাজিক বাস্তবতা এবং সময়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নির্মাতাদের চিন্তাভাবনা করতে দেখা যায়।

 

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীনা চলচ্চিত্রে বাস্তববাদ সৃষ্টির গুরুত্ব পুনঃনিশ্চিত করা হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে সাহিত্য ও শৈল্পিক চলচ্চিত্রও দেখা দিয়েছে। নতুন যুগে প্রবেশের পর চীনা চলচ্চিত্র সামগ্রিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে বৈচিত্র্যময়, সুশৃঙ্খল এবং দৃঢ় নতুন প্যাটার্ন উপস্থাপন করছে।

 

প্রশ্ন: চীনের চলচ্চিত্র সংস্কৃতিতে কি কি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়?

 

তিং ইয়া পিং: সংস্কৃতি হল একটি দেশ বা জাতির আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, জীবনধারা, এবং সামাজিক আদর্শের একটি ঘনীভূত অভিব্যক্তি। একটি সাংস্কৃতিক পণ্য হিসাবে চলচ্চিত্র রাজনীতি, সমাজ, নীতিশাস্ত্র এবং শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রের প্রতিফলন ঘটায়। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া সাংস্কৃতিক মূল্য দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য কিনা, তা হল বাজারের প্রতিযোগিতায় চলচ্চিত্রের সাফল্যের চাবিকাঠি। বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়কাল, যুগের পরিবেশ, সামাজিক বাস্তবতা এবং দর্শকের নান্দনিকতায় ভিন্নতা চলচ্চিত্র সংস্কৃতিকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। সাধারণভাবে বলা যায়, চীনা চলচ্চিত্রগুলো সর্বদা ঐতিহ্য এবং আধুনিকতা, ইতিহাস এবং বাস্তবতার সংমিশ্রণে সাংস্কৃতিক মূল্যের নির্মাণ ও প্রসারকে বাস্তবায়ন করেছে।

 

প্রশ্ন: গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক বাহক হিসেবে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রচারে চলচ্চিত্র কী ভূমিকা পালন করছে?

 

তিং ইয়া পিং: চলচ্চিত্র হচ্ছে বিশ্বের কাছে চীনা সংস্কৃতিকে তুলে ধরার একটি নামকার্ড। যুগ, দেশ, সংস্কৃতি, জাতীয়তা এবং অন্যান্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মানব প্রকৃতির গভীর খনন এবং মানবজাতির আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের ভাষায় মিল আছে।

 

ভৌগলিক অবস্থান এবং জীবনযাত্রার রীতিনীতির মধ্যে পার্থক্যের কারণে পূর্ব এবং পশ্চিমে বিভিন্ন ইতিহাস, রঙ, পটভূমি এবং উপাদানের সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। চলচ্চিত্র পণ্যদ্রব্য, শিল্পকর্ম এবং সাংস্কৃতিক বাহক হিসেবে একাধিক ভূমিকা পালন করছে। সাংস্কৃতিক বিনিময়ে চলচ্চিত্রের তাৎপর্য শুধুমাত্র চলচ্চিত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সহ-প্রযোজনা, আমদানিকৃত চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্র উৎসব এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শন সপ্তাহসহ নানা কার্যক্রম যোগাযোগ এবং সংলাপের জন্য সীমাহীন সম্ভাবনা এবং সুযোগ প্রদান করছে।

 

দীর্ঘদিন ধরে হলিউডের চলচ্চিত্রগুলো হলো আমেরিকান মূল্যবোধ রপ্তানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। যুক্তরাষ্ট্র তার সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের বিশাল প্রভাবের কারণে বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র বাজারকে প্রসারিত করতে পারছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে চীনা চলচ্চিত্রের বাজারের অবস্থান অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০২০ এবং ২০২১ সালে চীন টানা দুই বছর ধরে বিশ্ব চলচ্চিত্র বাজারে বৃহত্তম হয়ে উঠেছে।

 

প্রশ্ন: ‘হিস্ট্রি অব চায়নিজ সিনেমা’ নামের বইয়ের ইংরেজি সংস্করণটি চলচ্চিত্র ইতিহাসে চীনা চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক প্রভাব কিভাবে বাড়াতে পারে?

 

তিং ইয়া পিং বলেন: বইটি হলো চীনের প্রকাশিত চীনা চলচ্চিত্র ইতিহাস সম্পর্কে প্রথম ইংরেজি বই। ইংরেজি হলো সারা বিশ্বে সবচেয়ে ব্যবহৃত ভাষা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যারা চলচ্চিত্র নিয়ে গবেষণা করেন তাদের বৈচিত্র্যময় তথ্য-উপাত্ত ও বিশেষ দৃষ্টিকোণ যোগিয়েছে এ বই। আরও বেশি লোক এ বইয়ের মাধ্যমে চীনা চলচ্চিত্রের ইতিহাস, উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে পারবেন। এ বইটি যেন একটি জানালার মতো, সারা বিশ্ব এই জানালার মাধ্যমে ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশি ধারণা পাবেন। যা চীনা চলচ্চিত্রের সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক প্রচার এবং চীনা চলচ্চিত্র নিয়ে গবেষণা প্রসারিত করবে এবং অতি সক্রিয় প্রভাব ফেলবে।