আকাশ ছুঁতে চাই ১৪
2023-04-20 19:41:31

 

১. চীনের মুসলিম নারীদের ঈদ  

২.  মা সালমা

২.  বর্ষসেরা নারী ফুটবলার  ওয়াং শান শান

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক।

চীনের মুসলিম নারীদের ঈদ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে একইভাবে বাংলাদেশের ও চীনের মুসলিমরাও পালন করছেন ঈদ উল ফিতর । চীনে মুসলিম নারীরা ঈদের সময় মেতে ওঠেন উৎসবের আনন্দে।

চীনে যে দশটি জাতির মানুষ ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করেন তারা হলেন হুই, উইগুর, তাজিক, কাজাখ, পাওআন, সালার, কিরগিজ, তাতার, তুংসিয়াং ও উজবেক। এই জাতির মুসলিম নারীরা ঈদ উৎসবের সময় তাদের জাতির ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সামগ্রী তৈরি করেন। তারা ঐতিহ্যবাহী বিশেষ রঙিন পোশাক পরেন এবং নানা রীতি রেওয়াজের মধ্য দিয়ে ঈদের উৎসব পালন করেন। ঈদের জন্য তারা বিশেষভাবে ঘর সাজান এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও অংশ নেন।

উইগুর নারীরা ভেড়ার মাংসের তৈরি বিশেষ এক ধরনের ঝোল জাতীয় ডিশ তৈরি করেন। সঙ্গে থাকে বিশেষ পোলাও। উইগুরদের পোলাওয়ের নাম পোলার। চাল ভেড়ার মাংস, ভেড়ার চর্বি, তেল, পিঁয়াজ ও গাজর দিয়ে এই পোলাও রান্না করা হয়।

তাজিক নারীরা ঈদের সময় বিশেষ নকশা করা রঙিন স্কার্ট পরেন। সঙ্গে থাকে লাল রঙের বুট ও সুন্দর নকশা করা টুপি। উজবেক নারীরাও ঈদের দিনে রঙচঙে পোশাক পরেন।

তাতার নারীরা ঈদের উৎসবে ফুলের নকশা করা মুক্তা বসানো টুপি পরেন। সাদা, হলুদ, লাল বা গোলাপি রঙের কুচি দেয়া লম্বা কুর্তি পরেন নারীরা। ঈদের দিনে তাতার নারীরা অনেক রকম অলংকার পরেন। ঈদে একটা বিশেষ রকমের নকশা করা দুল, ব্রেসলেট, নেকলেস পরেন।

ঈদে তাতারদের ঐতিহ্যবাহী কিছু খাদ্য আছে। তাতার নারীরা পেস্ট্রি ধরনের একটি খাদ্য তৈরি করেন । এর নাম কুপাইতিয়াই। পনির, শুকনো এপ্রিকট, ও চাল দিয়ে এটি তৈরি হয়।

সিনচিয়াংয়ের কাশগরে ঈদের দিন নামাজের পর ঈদকাহ মসজিদের সামনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। ওই অনুষ্ঠানে নারী পুরুষ সকলেই অংশ নেন। এই অনুষ্ঠানের জন্য নারীরা বিশেষভাবে নতুন পোশাক বা উৎসবধর্মী পোশাক পরেন।

চীনের হুই মুসলিমসহ বিভিন্ন জাতির মুসলিম নারীরা ঈদের জামাতে অংশ নেন। তারা ঈদের দিনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনাতেও অংশ নিয়ে থাকেন। ঈদ উপলক্ষে মেলাতে বিভিন্ন স্টলে বেচাকেনায় নারীদের বিপুল উপস্থিতিও চোখে পড়ে।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

‘মা সালমা’

 

চীনে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন এমন অনেক বিদেশি আছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন অনেক নারী। বিদেশিরা চীনের জীবন যেমন উপভোগ করছেন তেমনি তাদের দেশ ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ গড়ে তুলতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন। অনেক বিদেশি নারী চীনে শিক্ষকতা করছেন। এদেরই একজন হলেন সালমা ইব্রাহিম। তাকে সবাই ডাকেন মা সালমা নামে।

চীনের ছাত্রছাত্রীরা তাকে ডাকে ‘মামা সালমা’ বা ‘মা সালমা’। কারণ স্নেহে ও সহযোগিতায় অনেক শিক্ষার্থীর মনে মায়ের আসন অধিকার করেছেন তিনি।

সালমা ইব্রাহিম ২০০৮ সাল থেকে চীনে বসবাস করছেন। ছোংছিং মহানগরীর সিচুয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভারসিটির তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক।

সালমার বয়স এখন ৭৩ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চীনে আরবি ভাষা ও সাহিত্যই কেবল শিক্ষা দিচ্ছেন না , পাশাপাশি সিরিয়া ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সৌহার্দ্য গড়ে তোলার কাজও করে চলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে সাংস্কৃতিক দূত বলে মনে করি।’

তিনি অনেক আরব বিশ্ববিদ্যালয় ও সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষার্থী বিনিময়ের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেছেন। চীনের জীবন তিনি খুব ভালোবাসেন। চীন তার দ্বিতীয় জন্মভূমিতে পরিণত হয়েছে।

তিনি চীনকে যেমন ভালোবাসেন তেমনি তার ছাত্রছাত্রীরাও তাকে মায়ের মতো ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে।

সালমা ইব্রাহিম মনে করেন দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ যত বৃদ্ধি পাবে ততো বন্ধুত্ব ও পারষ্পরিক বিনিময় বৃদ্ধি পাবে। এভাবে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে উঠবে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

কণ্ঠ: আবদুল্লাহ আল মামুন

 

বর্ষসেরা নারী ফুটবলার ওয়াং শান শান

সম্প্রতি বর্ষসেরা চীনা নারী ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন ওয়াং শান শান। ২০২২ এএফসি নারী  এশিয়ান কাপের ২০তম প্রতিযোগিতায় দুর্দান্ত পারফন্সের জন্য তাকে ভূষিত করা হয়েছে এই সম্মাননায়। ১৬ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর গেল বছর ভারতে অনুষ্ঠিত এএফসি  নারী এশিয়ান কাপে চীনকে জয় এনে দিতে ভালো খেলেছিলেন ওয়াং।

৩৩ বছর বয়সী চীনের নারী খেলোয়াড় ওয়াং শানশান। গেল বছর ভারতে অনুষ্ঠিত এএফসি নারী এশিয়ান কাপের ২০তম আসরে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের জন্য গেল শুক্রবার এই বর্ষসেরা সম্মাননা পান ওয়াং শান শান।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে ওয়াং শান শান তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন,  "এই পুরষ্কারটি সেই সব মানুষদের জন্য যারা আমাকে সমর্থন করে এবং আমি আমার কোচ, সতীর্থ এবং প্রতিটি স্টাফ সদস্যকে ধন্যবাদ জানাতে চাই,"  

১৬ বছরের অপেক্ষার পর এএফসি নারী এশিয়ান কাপে ২০২২ এ নিজ দেশকে জিততে সাহায্য করেন ওয়াং। অলরাউন্ডার এই খেলোয়ার সেমিফাইনালে জাপানের বিপক্ষে এবং ফাইনালে  দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে  দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন।

এই নিয়ে ওয়াং বলেন, "আমি একজন ফরোয়ার্ড খেলোয়াড় হিসেবে ভালো ,তবে কোচ যদি দলের প্রয়োজনে বিকল্প কিছু চিন্তা করেন তাহলে আমি যেকোন অবস্থানে খেলার  চেষ্টা করতে পারি,"  

ওয়াং শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে চীনা দল গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাদের সেরা দিকটি দেখাবে এবং সামনে যেকোন সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

ওয়াং বলেন , "প্রতিটি টুর্নামেন্ট আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আমরা ধাপে ধাপে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।  বিশ্বকাপ এবং অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমরা চীনা নারী ফুটবলের চেতনা এবং সেরা দিকটি দেখাতে চাই।" 

ওয়াং মনে করেন নিজেদের সর্বোচ্চটা দিলে জয়ী হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। ওয়াং বলেন, "যখন আমরা বিশ্বমানের প্রতিপক্ষের সাথে খেলবো তখন আমরা যদি শারীরিকভাবে তাদের মতো শক্তিশালী না হই, সেই সময়  আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুবিধাগুলোকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে।

 

এদিকে শুক্রবার একইসাথে চীনের বর্ষসেরা চীনা ফুটবল কোচের সম্মাননা পান   চীনের নারী জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ শুই ছিংসিয়া ।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিদায় নেবার আগে সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক।  আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল