ফেব্রুয়ারি ১৯: “সফররত মার্কিন দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার লরা রিচার্ডসন আর্জেন্টিনার কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে এ সময়, তিনি ‘ল্যাটিন আমেরিকায় চীনের প্রভাব’ নিয়ে কথা বলেছেন। আর্জেন্টিনা সময় ১৭ এপ্রিল, দেশটির গণমাধ্যম সে খবর জানিয়েছে। এর আগে, মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান আর্জেন্টিনা সফরের সময়ও বলেছেন, আর্জেন্টিনার উচিত ‘সাবধানে’ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা।
শুধু এ দুজন কর্মকর্তাই নয়, বরং অনেক মার্কিন কর্মকর্তা সম্প্রতি আর্জেন্টিনা সফর করেছেন। এ মাসের শুরুতে মার্কিন রিপাবলিকান দলের সেনেটর জন কর্নি একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আর্জেন্টিনা সফর করেছেন। তখন আর্জেন্টিনা ও চীনের সহযোগিতামূলক প্রকল্প নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন। এরপর, মার্কিন পরমাণু নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান ক্রিস্টোফার হ্যানসন-ও আর্জেন্টিনা সফর করেছেন। তিনি জানান, আর্জেন্টিনা ও চীনের সঙ্গে পরমাণু খাতে সহযোগিতায় ঝুঁকি ও ‘অসুবিধা’ রয়েছে।
‘যুক্তরাষ্ট্র চীন-আর্জেন্টিনা সম্পর্ককে নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’ আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম ‘পেজিনা-১২’ পত্রিকার এক প্রবন্ধে এ মন্তব্য প্রকাশিত হয়। এতে আরো বলা হয়, এটা হলো মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঘনঘন আর্জেন্টিনা সফর করার লক্ষ্য। গণমাধম্যের প্রবন্ধে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র মনে হয় সবসময় চীন-ল্যাটিন আমেরিকা সহযোগিতা, বিশেষ করে চীন-আর্জেন্টিনা সহযোগিতা পর্যবেক্ষণ করছে। চীন-আর্জেন্টিনার স্বাভাবিক সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অস্বস্তিকর’।
যুক্তরাষ্ট্র কেন এমন মনে করছে? আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুসারে, বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়ে চীনকে চাপ প্রয়োগ করা ও তার উন্নয়নে বাধা দেওয়ার নীতি আরো জোরদার করেছে। তারা চীনের উন্নয়ন দেখতে চান না। আর্জেন্টিনা হচ্ছে লাতিন আমেরিকার বড় দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন-আর্জেন্টিনার বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহতভাবে উন্নত হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, লাতিন আমেরিকার প্রথম বড় দেশ হিসেবে আর্জেন্টিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছে। যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মান, পারস্পরিক কল্যাণ ও উভয়ের জয়ের জন্য বাস্তবসম্মত পথ। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, চীন ও আর্জেন্টিনার সহযোগিতা তার স্বার্থের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে এবং তার আধিপত্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। তাই যুক্তরাষ্ট্র সব শক্তি দিয়ে তা নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
২০১৩ সালের নভেম্বরে, তত্কালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক ভাষণে বলেন, ‘মনরোইজমের যুগ শেষ হয়েছে।’ তবে, বাস্তবতা থেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র এখনও লাতিন আমেরিকা অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। যাতে লাতিন আমেরিকা থেকে অব্যাহতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কাঁচামাল সরবরাহ হয়, পণ্য ডাম্পিংয়ের বাজার ও সাংস্কৃতিক কলোনি হয়ে থাকতে পারে।
কিন্তু, বর্তমান যুগ আগের মত নাই। লাতিন আমেরিকা একতা, সহযোগিতা, উন্নয়ন ও স্বাধীনতার কণ্ঠ দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। কলম্বিয়ার জনৈক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মনরোইজম বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ করার জায়গা নাই।
১৯ শতকের শেষ দিকে, মেক্সিকোর সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসে দিয়াজ মোরি মন্তব্য করেন যে মেক্সিকো ‘ঈশ্বর থেকে অনেক দূরে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের খুব কাছে’। বর্তমানে লাতিন আমেরিকাতে যা ঘটেছে, তা আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমের ধারণা প্রমাণ করেছে। তা হলো ‘উদীয়মান বাজার রাষ্ট্র উন্নত হওয়ার চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষাপটে লাতিন আমেরিকা ‘যুক্তরাষ্ট্রের খুব কাছে’- এ অবস্থা অবশ্যই পরিবর্তন হবে।
(আকাশ/তৌহিদ)