চায়ের দেশ চীন | শেকড়ের গল্প | পর্ব ১৪
2023-04-19 17:32:24

               

                                

চায়ের দেশে শুরু হয়েছে পাতা তোলার মৌসুম

বিশ্বের জনপ্রিয় পানীয় চায়ের সঙ্গে রয়েছে চীন দেশের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। দেশটিতে চা সংস্কৃতিও খুব বিখ্যাত। সম্প্রতি এ দেশের চা সংস্কৃতি ইউনেসকোর অবৈষয়িক সংস্কৃতির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

চীনের চা শুধু পানীয় হিসেবে নয়, ভেষজ হিসেবেও নামকরা। এর বিভিন্ন প্রদেশে রয়েছে সুবিশাল চা বাগান। বিশেষ করে পূর্ব, মধ্য ও দক্ষিণ চীনে চা পাতার আবাদ করা হয় পরম যত্নে।

সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন প্রদেশের চা বাগানগুলোতে চলছে চা পাতা সংগ্রহের মৌসুম। বলা হয়ে থাকে এপ্রিলে সংগ্রহ করা চা পাতা সবচেয়ে ভালো স্বাদ ও সুঘ্রাণযুক্ত হয়ে থাকে। দেশটির সংস্কৃতি অনুযায়ী ছিংমিং দিবসের পর থেকে চা পাতা সংগ্রহ করার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় শুরু হয়।

 

এপ্রিলের ৫ তারিখে এবার ছিংমিং ফেস্টিভ্যাল ছিল। তাই এপ্রিল ও মে মাস জুড়ে চা পাতা সংগ্রহের মৌসুম চলছে। চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা শহরের চা বাগানগুলোতে এখন চলছে চা পাতা সংগ্রহের মৌসুম। চা পাতা সংগ্রহ এবং উচ্চমান সম্পন্ন চা পাতা বিক্রিতে এখন ব্যস্ত চা চাষীরা।

 

ওয়াংছাং উশান ট্রিবিউট টি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ১২৬০ মু বা ৮৪ হেকটর জায়গা জুড়ে স্থাপিত চা বাগান। চলতি বছর এই বাগান থেকে ৬০ হাজার চিন বা ৩০ হাজার কিলোগ্রাম চা পাতা সংগ্রহ হবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে।

চা পাতা বিক্রির জন্য সরাসরি গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের জন্য রয়েছে লাইভ স্ট্রিমিং ব্যবস্থা। এখান থেকে ক্রেতারা সরাসরি তাজা চা সংগ্রহ করতে পারছেন। চা পাতা সংগ্রহের পর পাতা রোস্টিং বা শুকানোর জন্যও প্রয়োজন হয় বিশেষ প্রশিক্ষণের। কিছু কিছু বাগানের ও স্থানের চা পাতা রোস্টিং করা হয় বিশেষ পদ্ধতিতে। এগুলো শিখতে দীর্ঘ অনুশীলন ও কারিগরী দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

চা বাগানগুলোকে ঘিরে এখন স্থানীয় পর্যটন শিল্পও বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে। অনেকেই চা বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসছেন, গ্রামের ভিতরে স্থাপিত ছোট ছোট হোমস্টে হাউজে থাকছেন। সরাসরি বাগান থেকে তাজা চা পাতা কিনে নিচ্ছেন।

সব মিলিয়ে চা শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজারো পরিবারের স্বপ্ন। শুধু আয় উপার্জনের জন্য নয়, বরং স্থানীয় ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেও চা শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন অনেক মানুষ।

 

প্রতিবেদন  ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা:  এইচ আর এস অভি

 

 

 

 

 

 

ঈদ উপলক্ষ্যে জমে উঠেছে কাশগড়ের পশুর বাজার

কয়েকদিন পরেই ঈদ । তাই  জমে উঠেছে কাশগড়ের গবাদি পশুর বাজার। উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের এই বাজারটিতে প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউয়ানের কেনাবেনা হয়। আর বিশেষ দিনগুলোতে এই কেনাবেচা আরও বেড়ে যায়। আশে পাশের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে মানুষজন আসেন এই হাঁটে। জনতার স্রোতে জমজমাট হয়ে ওঠে এই পশুর বাজার।

দূর দুরান্ত থেকে নিজেদের গবাদি পশু নিয়ে হাটে এসেছেন অনেকেই।

ব্যস্ত এই বাজারটি চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের হুয়াংতি এলাকায় অবস্থিত, যা গড়ে তোলা হয়েছে ৬ হেক্টরেরও বেশি জায়গা জুড়ে।

 

প্রতি রোববার এখানে বসে গবাদি পশুর হাট । এখানে আসা ক্রেতারা পশুর দাঁত, আকার ও রং দেখে গবাদি পশু কেনেন। আর এখানে একটি প্রচলিত ঐতিহ্য হলো টাকা পরিশোধের পর ক্রেতা ও বিক্রেতার একে অপরের সঙ্গে হাত মেলানো।এখানে যে পশুগুলোকে আনা হয়, তার মধ্যে বেশিরভাগই ভেড়া ও গরু।

ভালো ওজনের মাঝারি মানের ভেড়াগুলো বিক্রি হয় প্রতিটি দেড় হাজার থেকে ২ হাজার ইউয়ানে। কিছু বিশেষ ও বিরল প্রজাতির ভেড়া রয়েছে, যেগুলো শুধু ওজন দেখে নয়, দাম নির্ধারণ করা হয় পশুর বিশেষত্ব দেখে। কিছু ভেড়ার দাম ১০ হাজার ইউয়ান পর্যন্তও হয়ে থাকে।  

সব মিলিয়ে প্রতিদিন এখানে কেনাবেচার পরিমাণ ৩ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। আর উৎসবের দিনগুলোতে এর পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।

 

প্রতিবেদন  ও কণ্ঠ: এইচ আর এস অভি

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

 

চীনের কৃষিতে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া

বহু আগেই থেকেই চীন দেশের কৃষিতে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। তাইতো দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশটির কৃষিখাত। আর এভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি চীনকে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। এতে করে একদিকে যেমন বেড়েছে কৃষি কাজের পরিসর, তেমনি কমেছে উৎপাদন খরচ। একইসঙ্গে স্বস্তি পেয়েছেন দেশটির কৃষকরা। 

চীনের হেনান প্রদেশ। যেখানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার পালটে দিয়েছে স্থানীয় কৃষকের জীবন।

আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবনে কৃষককে সহযোগিতা করছেন হেনান একাডেমি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস-এর বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা। নিয়মিতভাবে স্থানীয় কৃষকদের আধুনিক বীজ-প্রজনন প্রযুক্তির ব্যবহারে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তারা। সেখানকার গম ইন্সটিটিউটের পরিচালক লেই চেনশেং কৃষকদের সঙ্গে কাজ করার সময় নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “উন্নত মানের শস্য জাত গবেষণায় কাজ করে যাচ্ছি আমরা  । বর্তমানে যে জাতগুলো রোপণ করা হয়েছে সেগুলো উচ্চ ও স্থিতিশীল ফলন এবং  রোগ-প্রতিরোধী ক্ষমতার বৈশিষ্ট্যযুক্ত”।

এদিকে পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের লাইক্সিং শহর। যেখানে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে গরুর খামারীরা পাচ্ছে ব্যাংকঋণ । আর সেখানে জামানত হিসেবে কাজ করছে গরু।

আর এই উদ্যোগের ব্রোকার হিসেবে কাজ করছে স্থানীয় সরকার। প্রত্যেক ঋণ গ্রহীতাকে একটি নতুন প্রযুক্তি বিতরণ করে তারা। যা ডিজীটাল কানের দুল নামে পরিচিত। প্রতিটা গরুর কানের মধ্যে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় সেই দুল। আর এর মাধ্যমে গরুর পুষ্টি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানা যায় খুব সহজেই।

এদিকে ব্যাংকগুলোও খুব খুশি খামারগুলোতে ঋণ দিয়ে সরাসরি তা তদারকি করতে পারছে।  এবং তথ্য পোর্টালে আপডেট করতে পারছে। চু ইয়ানচিয়া এক নারী জানিয়েছেন প্রযুক্তি সহজ করেছে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম।

ইন্টারনেট সুবিধা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সবকিছুকে করেছে আগের চেয়ে অনেক সহজ। শুধু শহর নয়, গ্রামেও পৌছে গেছে সেই সুবিধা।

 

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদনা: হাবিবুর রহমান অভি

 

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান।  যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ রেডিও অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।