‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ১৪
2023-04-18 13:57:59

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। চীনের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ হুয়াইশাং

২। চীনের যে গ্রামে গেলে পাবেন শহরের মত ইন্টারনেট সুবিধা

৩। দক্ষিণ চীনের মনভোলানো গ্রাম চেনশান

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ১৪তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।   

১। চীনের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ হুয়াইশাং

চীনের সবচেয়ে পুরনো মসজিদ হলো কুয়াংচোও শহরের হুয়াইশাং মসজিদ। বাতিঘর মসজিদ নামেও পরিচিত এই মসজিদ । পাশাপাশি ক্যান্টনের গ্রেট মস্ক নামেও পরিচিতি আছে এই মসজিদের। কারণ কুয়াংচোও শহরের আগের নাম হচ্ছে ক্যান্টন। 

৬২৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এ মসজিদটি মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর মামা সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রা.) গড়ে তোলেন । ইসলাম পূর্ব সময় থেকেই এই বন্দর নগরীতে আরব বণিকদের এক সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। তাদের মধ্যে ইসলাম প্রচারের জন্যই এই মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল।

এই মসজিদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর মিনার। এটি সমান ও লম্বা। ৩৬ মিটার উঁচু মিনারটি দেখতে অনেকটা বাতিঘরের মতো। সেখান থেকেই এর এই নামকরণ। এর উপরে কোন গম্বুজ নেই। একে প্লেইন প্যাগোডাও বলা হয়।

এটা ঠিক যে এই মসজিদ চীনের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ এবং সপ্তম শতকেই এটা গড়ে তোলা হয়। থাং ও সং রাজবংশের সময় এখানকার মুসলিমরা এই মসজিদে নামাজ পড়তেন ।পরবর্তি বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি পুনর্নিমিত হয়, সংস্কার কাজও চলে।

 

১৩৪৯ সালে এখানে যে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানটি ব্যবহৃত হতো তারও প্রমাণ রয়েছে। রামাদান ইবন আলাউদ্দিন নামে একজন মুসলিমের কবর এখানে রয়েছে। রামাদান ইবন আলাউদ্দিন হলেন কোরিয়ার প্রথম মুসলমান।

এই মসজিদ নির্মাণের পিছনে একটি চমৎকার গল্প রয়েছে। এই গল্প কতটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত ও কতটা মিথ তা নির্ধারণ করা যায় না। এখানে বলা হয়েছে, সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা.)যখন এখানে ইসলাম প্রচার করছিলেন তখন আরব বণিকদের মধ্যে তার অনেক অনুসারী হয়। স্থানীয় মানুষও তার কাছে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকেন। অন্যদিকে আরবদের মধ্যে যারা ইসলাম ধর্মে ঈমান আনেনি তারা তার বিরোধিতা করেন।  দুইপক্ষে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই সময় সাদ ইবন ওয়াক্কাস (রা.) তাঁর অনুসারীদের নিয়ে অরণ্যের ভিতরে আশ্রয় নেন। তারা মাটির দেয়াল গড়েন আত্মরক্ষার জন্য। এবং একটি মসজিদ গড়ে সেখানে আশ্রয় নেন। বিরোধীরা তাদের ঘিরে ফেলে। এরমধ্যে মুসলিমদের পানীয় জল ফুরিয়ে যায়। সেই সংকটময় সময়ে অলৌকিকভাবে মাটির একস্থান থেকে পানি উঠতে থাকে। সেখানে একটি কুয়া তৈরি হয়। এই পানি পান করে মুসলিমরা নবশক্তিতে বলীয়ান হয়ে শত্রুদের পরাজিত করেন। সেই কুয়াটি এখনও আছে। সেখান থেকে মসজিদের ওযুর পানি ও খাবার পানি সরবরাহের লাইন রয়েছে।

১৩৫০ সালে এই মসজিদের অনেক অংশ সংস্কার করে বাড়ানো হয়। ১৬৯৫ সালে আগুন লেগে মসজিদের অনেক অংশ পুড়ে গেলে আবার নির্মাণ করা হয়। বাতিঘর টাওয়ার বা মিনারটি উনবিংশ শতকে কুয়াংচোও (ক্যান্টন) শহরের প্রতীকি স্থাপনা হিসেবে গণ্য হতো। মসজিদের মূল ভবনটি চীনা হান স্থাপত্যরীতিতে গড়ে তোলা হয়েছে। ভিতরে প্রশস্ত নামাজ কক্ষ।

মসজিদটির মূল ভবন ও মিনার এখনও ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন মাটির দেয়ালের নমুনাও সংরক্ষিত আছে। এই মসজিদকে ঘিরে এই এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিমের বসবাস রয়েছে। চীন সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর বর্ধিতকরণের খরচ দেওয়া হয়। কুয়াংচোও মেট্রোর দক্ষিণপূর্ব লাইনে সিমেনখোও স্টেশনে নামলেই এই মসজিদের মিনার চোখে পড়ে। স্টেশন থেকে হাঁটা দূরত্বে এই মসজিদ।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

২। চীনের যে গ্রামে গেলে পাবেন শহরের মত ইন্টারনেট সুবিধা

 

তথ্যপ্রযুক্তিতে সর্বত্রই এগিয়ে চীন। শহর থেকে গ্রামে তথ্যপ্রযুক্তির ছোয়া লেগেছে দেশজুড়েই। সম্প্রতি শানতং প্রদেশের প্রাচীন গ্রামেও পৌছে গেছে ৫ জি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি। এতে করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিতসা, ব্যবসা বানিজ্যে সর্বক্ষেত্রেই লেগেছে এর ছোয়া।

 

 

চীনের শানতোং প্রদেশের প্রাচীন গ্রাম শিচিকো।  পুরনো এই গ্রামে মিং ও ছিং রাজবংশের সময় থেকেই রয়েছে প্রায় একশো পাথরের উঠোন। গ্রামীন পর্যটন শিল্পকে চাংগা করতে পরবর্তীতে যেখানে গড়ে তোলা হয়েছে হোমস্টে। এখানে গ্রামীন পরিবেশ উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে আসেন পর্যটকরা।

 

প্রাচীন এই গ্রামে সুবিধাজনক পরিবহন, আরামদায়ক বাসস্থান এবং পছন্দসই পরিষেবা ছাড়াও, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য ইন্টারনেট সুবিধাও গুরুত্বপূর্ণ৷ সম্প্রতি ৫জি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির আওতায় আসা এই গ্রাম পর্‍্যটকদের এই আকর্ষণ যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুন।

 

 

নিজ শহরের মত ইন্টারনেট সুবিধা পেয়ে খুশি ঘুরতে আসা পর্‍্যটকরা।

পর্যটক চাং জানায়,"এখানে আমি মনে করি ইন্টারনেটের গতি বেশ দ্রুত। আমি দেখছি এখানকার ল্যান্ডস্কেপ খুব সুন্দর এবং আমি এটা আমার পরিবারের সাথে শেয়ার করতে চাই। তাই আমি আমার শহরের মতো একই গতিতে ভিডিও পাঠাতে পারছি এখান থেকে ," ।

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরতে আসা পর্‍্যটকদের শেয়ার করা বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠছে গ্রামটি। দিন যত যাচ্ছে তত জনপ্রিয় উঠছে গ্রামটি।

 

 

যতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গ্রাম ততই ডিজিটাল অর্থনীতির সমৃদ্ধির পথে হাটছে গ্রামবাসী। স্থানীয় পর্যটন শিল্প বিকাশের পাশাপাশি , পুরো গ্রামজুড়ে ৫জি নেটওয়ার্ক কাভারেজ দিতে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক অপারেটরের সাথে একযোগে কাজ করছে গ্রাম কর্তৃপক্ষ।

 

 

 

এছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ গ্রামবাসীকে উদ্ভুদ্ধ করেছে অনলাইন ব্যবসায়। এতে করে খুব সহজেই অনলআইনে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন গ্রামবাসী। ৫জি নেটওয়ার্ক স্মার্ট পর্যটন, স্মার্ট হোমস্টে এবং লাইভ-স্ট্রিমিং ই-কমার্সের বিকাশে যেমন সহযোগিতা করছে তেমনি গ্রামবাসীদের আয় বাড়িয়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুন।

 

প্রতিবেদন-আফরিন মিম

সম্পাদনা- সাজিদ রাজু

 

 

৩। দক্ষিণ চীনের মনভোলানো গ্রাম চেনশান

 

পর্যটকরা যখন মনস্থির করতে পারেন না তারা পাহাড়ের দৃশ্য বেশি ভালোবাসেন না বেলাভূমির দৃশ্য—তখন তারা বেছে নিতে পারেন চেনশান গ্রামকে। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের কুইইয়াং শহর সংলগ্ন একটি গ্রাম হলো চেনশান।

 

 

চেনশান উপদ্বীপ এই গ্রামটির তিনদিকে রয়েছে জল। আরও রয়েছে পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দেখা যায় চারিদিকে সুনীল জলের দৃশ্য। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিই নয়, এই গ্রাম সাংস্কৃতিক দিক থেকেও সমৃদ্ধ।

 

 

 

১৫৭৩ থেকে ১৬২০ সালের মধ্যে গড়ে ওঠে এই গ্রাম। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসী বুয়ি এথনিক গ্রুপের মানুষ।

 

 

২০০০ সালে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে ইকোমিউজিয়াম। বুয়ি সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য স্থাপিত এই মিউজিয়ামে রয়েছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন।

 

 

চীনে বর্তমানে যে গ্রাম পর্যটন জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাতে পর্যটকদের কাছে চেনশান গ্রামের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে কিছুটা সময় অতিবাহিত করতে এই গ্রামে আসেন পর্‍্যটকরা।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা-শান্তা মারিয়া

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী