চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
১৪তম পর্বে যা থাকছে:
* বিদ্যুৎচালিত গাড়িশিল্প সমৃদ্ধ করতে চায় চীনা বিনিয়োগকারীরা
* চীনের চেচিয়াং-এ চা পাতা তুলতে রোবটের ব্যবহার
* নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ল চীনের ‘কৃত্রিম সূর্য’
বিদ্যুৎচালিত গাড়িশিল্প সমৃদ্ধ করতে চায় চীনা বিনিয়োগকারীরা
বিদ্যুৎচালিত গাড়ির উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায় জোর দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া। জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যেই বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। আর তাদের এই যাত্রায় প্রযুক্তি ও কারিগরী দক্ষতা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে চীন।
২০২৫ সালের মধ্যে নতুন বিক্রি হওয়া গাড়ির ২০ ভাগই হবে বিদ্যুতচালিত, এমন একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। আর এই উদ্যোগের অংশীদার হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে চীন।
ইন্দোনেশিয়ার ইলেকট্রিক গাড়িশিল্পকে সমৃদ্ধ করতে নিজেদের দক্ষতা ও প্রযুক্তি বিনিময় করতে শুরু করেছে চীনা কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে চীনা অটোফার্মগুলো উৎপাদন সুবিধায় বিনিয়োগ করার মধ্য দিয়ে সহযোগী হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বিদ্যুৎচালিত গাড়িশিল্পে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার গাড়ির বাজার সবথেকে বড়। ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কমিশনার আগুস জাহাজানা ভিরাকুসুমাহ জানান এ কারণে বিনিয়োগকারীদের জন্যেও এটি একটি আদর্শ জায়গা।
তিনি বলেন, “চীনা কোম্পানি সিএটিএল ইন্দোনেশিয়াতে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যাটারি তৈরির জন্য কাঁচামালের সন্ধান করছিলো। আর আমাদের নিকেলের বেশ বড় মজুদ রয়েছে। শুধু তারাই না, বিওয়াইডি’র মতো আরো অনেক বড় বড় কোম্পানি আমাদের দেশের বিনোয়োগ করতে আসছে। প্রক্রিয়া এখনো চলমান আছে তবে কোম্পানিগুলো বড় অংকে বিনিয়োগ করছে।“
স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, কেবল ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, ইন্দোনেশিয়াতে বিদ্যুৎচালিত গাড়িশিল্পের বিকাশ ঘটলে তা পরিবেশের জন্যেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
কার্বন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ নোভিয়া সু বলেন, “ইন্দোনেশিয়া এখন একটি খুব চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সামনে আছে। আমাদের ক্রয় ক্ষমতা সীমিত। সেক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের তুলনামূলক কম দামের মধ্যে একটি ভালো ব্র্যান্ড ও মডেল বাছাই করতে হয়। আর সীমিত দামের মধ্যে বৈচিত্র্যময় গাড়ি সরবরাহ করে চীনা কোম্পানিগুলো আমাদের সাহায্য করতে পারে।“
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্দোনেশিয়ার বিদ্যুৎচালিত গাড়িশিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই শিল্প সম্প্রসারণে এগিয়ে এসেছে চীনা বিনিয়োগকারীরাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মধ্যদিয়ে পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো ইন্দোনেশিয়া।
|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন
|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু
চীনের চেচিয়াং-এ চা পাতা তুলতে রোবটের ব্যবহার
চীনে এখন চলছে বসন্তকালীন সেরা মানের চা বা প্রিমিয়াম চা তোলার মৌসুম। আর পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশে এই চা পাতা তোলার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রোবট! প্রতিটি চা পাতা মাত্র দেড় সেকেন্ডে অবলীলায় তুলে নিতে সক্ষম এই রোবট।
রোবটটির ওজন ৫৫০ কেজি এবং এর মাথায় সোলার প্যানেল দিয়ে বানানো একটি টুপি আছে। সারি সারি চা গাছ থেকে প্রতিটি চা পাতা মাত্র দেড় সেকেন্ডে অবলীলায় তুলে নিতে সক্ষম এই রোবট।
এই রোবটে দেওয়া হয়েছে বাইনোকুলার স্টেরিও ভিশন প্রযুক্তি। এর সাহায্যে রোবটটি চা পাতার অবস্থান নির্ণয় করতে পারে এবং সেগুলিকে সুনির্দিষ্টভাবে কেটে সংগ্রহ করতে পারে। তৈরি করার পর এখন পর্যন্ত কয়েক ধাপে মানোন্নয়ন করা হয়েছে রোবটটির।
রোবটটি তৈরির কারিগর চেচিয়াং সাই-টেক ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক চিয়া চিয়াংমিং জানান স্থানীয় চা বাগানে লোকবল কম থাকায় ২০১৯ সালে তিনি চা তুলতে সক্ষম এমন রোবট বানানোর কাজে হাত দেন।
তিনি বলেন, “চা পাতা তোলার কাজ পুরোপুরি মেশিনের সাহায্যে করানোটা সহজ ছিলো না। কেননা ভালো চা পাতা চেনার কাজটা মানুষরাই ভালো পারে। তবে বর্তমানে চা শ্রমিকদের অধিকাংশই পঞ্চাশ থেকে ষাটোর্ধ হওয়াতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম একটা সময় চা পাতা তোলার জন্য কাউকে পাওয়া যাবে না। সেজন্যই ২০১৯ সালে আমরা এই উদ্যোগ নেই।“
গবেষকরা জানান, সামান্য বেকায়দায় চা পাতা তোলা হলে গাছের অন্যান্য পাতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তা ব্যবহার উপযোগী থাকে না। তাই রোবটটিতে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে অতি সুক্ষ্ম পরিমাপ নিপুনভাবে করতে পারে।
আরেক গবেষক চেন চিয়ানমেং বলেন নতুন প্রজন্মের রোবটগুলোর দক্ষতা মানুষের মতোই। মানুষের মতোই নির্ভুল ভাবে চা তুলতে পারে এই রোবটগুলো।
চলতি বছরের শুরু থেকে চেচিয়াং-এ ব্যবহার করা হচ্ছে এই ধারার পঞ্চম প্রজন্মের একটি রোবট। গবেষকরা বলছেন গত বছরে ব্যবহৃত তৃতীয় প্রজন্মের রোবটের তুলনায় এখন চা তোলায় সাফল্যের হার বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ।
|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন
|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু
নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ল চীনের ‘কৃত্রিম সূর্য’
চীনের কৃত্রিম সূর্য এবার এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলো। গত ১২ এপ্রিল টানা ৪০৩ সেকেন্ড স্থিরভাবে প্লাজমা অপারেশন চালিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে চীনের এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক (ইএএসটি) যেটাকে কৃত্রিম সূর্য হিসাবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ফিউশন চুল্লির উন্নয়নে এটি ছিলো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
কৃত্রিম সূর্য নিয়ে বেশ অনেকদিন ধরে কাজ করে আসছে চীন। হেফেইতে চীনের বিজ্ঞান একাডেমির অধীন প্লাজমা ফিজিক্স ইনস্টিটিউটে অবস্থিত কৃত্রিম সূর্য প্রজেক্টের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো সূর্যের মতো পারমাণবিক ফিউশন তৈরি করা। প্রচুর পরিমাণে সামুদ্রিক পদার্থ ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব শক্তির একটি কার্যকর ও টেকসই শক্তির উৎস তৈরি করা।
সম্প্রতি নির্বিঘ্নে ৪০৩ সেকেন্ড প্লাজমা অপারেশন চালিয়ে নিজেরই ২০১৭ সালের ১০১ সেকেন্ডের রেকর্ড ভেঙে দিলো চীনের কৃত্রিম সূর্য। তবে রেকর্ড গড়ার পথটা সহজ ছিলো না। ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশিবার প্রচেষ্টার পরই ধরা দিয়েছে এই সাফল্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সাফল্য আন্তর্জাতিক থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টর ও ফিউশন রিঅ্যাক্টর পরিচালনার পরীক্ষামূলক ভিত্তি আরও জোরদার করবে।
প্রকৃতিতে জীবাশ্ম জ্বালানী, যেমন কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অসীম নয়। এবং এর ব্যবহারে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে কৃত্রিম সূর্যের জন্য যে কাঁচামাল প্রয়োজন, তা পৃথিবীতে প্রায় সীমাহীন। পাশাপাশি গবেষকরা মনে করেন, ফিউশন শক্তি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব। তাই মানবজাতির জ্বালানীর ভবিষ্যত হিসেবে এটিকেই আদর্শ চূড়ান্ত শক্তি বলছেন গবেষকরা।
চীনে কৃত্রিম সূর্যের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালে। এরপর থেকে এটি চীন ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের জন্য ফিউশন-সম্পর্কিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা পরিচালনার একটি উন্মুক্ত পরীক্ষা-নীরিক্ষার জায়গা হয়ে উঠেছে।
|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন
|| সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান
অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।
পরিকল্পনা, প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: সাজিদ রাজু, শিহাবুর রহমান
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী