গত শনিবার ১৩৩তম চীন আমদানি-রপ্তানি মেলা বা ক্যান্টন ফেয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। দেশি-বিদেশি অনেক ব্যবসায়ী এতে আগমন করেছেন। ফলে মেলায় অনেক ভিড় দেখা গেছে। এর মাধ্যমে তিন বছর পর পুনরায় অফলাইনে চালু হয়েছে ক্যান্টন ফেয়ার।
প্রথমে আমরা কিছু পরিসংখ্যান দেখবো। এবারের মেলার আয়তন আগেকার ১১.৮ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৫ বর্গমিটার ছাড়িয়েছে। স্টোরের সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ হাজারে ছাড়িয়েছে। জানা গেছে, এবারে অফলাইনে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে। নতুন করে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান তাতে অংশগ্রহণ করেছে। অনলাইনে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৯২৮১। এবারের মেলার আকার, আয়তন এবং অংশগ্রহণকারীর দিক দিয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
এবারের মেলা অনেক চমক দেখিয়েছে। অনেক হাইটেক সবুজ ও স্মার্ট নতুন পণ্যের প্রথম উন্মোচন হয়েছে এখানে। এ মেলায় স্থাপিত হয়েছে নতুন জ্বালানি-চালিত গাড়ি এবং বুদ্ধিমান নেটওয়ার্ক সংযুক্ত গাড়ির প্যাভিলিয়ন। নতুন থিমকে কেন্দ্র করে অনেক নতুন পণ্য প্রদর্শিত হয়েছে এখানে। যেমন: চালক বিহীন উড়োযন্ত্র। এটি এ পণ্য প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হচ্ছে। ২৫০ কেজি জিনিস বহন করতে পারে এটি।
চালকবিহীন উড়োযন্ত্র ছাড়াও নতুন প্যাভিলিয়নে রয়েছে অন্য চালকবিহীন পণ্যগুলো। যেমন, চালক বিহীন টেক্সি, মালামাল যানবাহন, বাস এবং স্যানিটেশন যানবাহন। যা অনেক ব্যবসায়ীকে টেস্ট ড্রাইভ অভিজ্ঞতা নিতে আকর্ষণ করেছে। এবারের মেলা অনলাইন ও অফলাইনে নতুন পণ্যের জন্য ৩০০টিরও বেশি উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তাতে শিল্প উত্পাদন, ইলেকট্রনিক হোম যন্ত্রপাতি, ফ্যাশনসহ নানা পণ্য রয়েছে।
উল্লেখ্য, মেলায় অনলাইনে প্রদর্শিত নতুন পণ্যের সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে নিম্ন কার্বন জনিত পণ্যের সংখ্যা ৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। তা মোট পরিমাণের তুলনায় অনেক বেশি। তাতে সবুজায়ন, নিম্ন কার্বন নির্গমন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কার্যকারিতার ওপর প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।
এ মেলায় আরেকটি বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে: উত্পাদন প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবার প্রাধান্য পেয়েছে। মেলাটিতে উত্পাদন প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ অর্ধেক এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অনেক অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান তাদের কয়েক বছর ধরে উদ্ভাবিত নতুন পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে। পণ্যগুলোর কয়েক দশকের পেটেন্ট রয়েছে। উজবেকিস্তানের জনৈক ক্রেতা বলেন, ‘আমরা তিন বছর চীনে আসি নি। আগে কেবল উইচ্যাট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। এবারের মেলায় তাদের পণ্য দেখতে এবং স্পর্শ করতে আসি। খুব ভালো লাগছে।
ক্যান্টন মেলা প্রতিষ্ঠা থেকে গত ৬৭ বছরে তাতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ১.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রথম মেলায় ১৯টি দেশ ও অঞ্চলের ক্রেতা থেকে বেড়ে এবারের মেলায় ২২০টি দেশ ও অঞ্চলের ক্রেতারা অংশগ্রহণ করেছেন। এ মেলা চীনের উচ্চ উন্মুক্তকরণের প্রতীকে পরিণত হয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।