মহামারী পরবর্তী বৈশ্বিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে, চীনে অফলাইন প্রদর্শনীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেশীয় এবং বৈশ্বিক উভয় অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন-সাইট কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হওয়ার পথ ধরে দক্ষিণ চীনের কুয়াতং প্রদেশের কুয়াংচৌতে ১৩৩তম চীন আমদানি ও রপ্তানি মেলা বা ক্যান্টন ফেয়ার শুরু হয়েছে। এর আগে সাফল্যের সঙ্গে শেষ হলো দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ প্রদেশ হাইনানে তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্য মেলা বা হাইনান-এক্সপো। আর ২০তম সাংহাই আন্তর্জাতিক অটোমোবাইল শিল্প প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ১৮ এপ্রিল।
হাইনানের হাইকোতে সদ্য-সমাপ্ত তৃতীয় চীন আন্তর্জতিক ভোগ্যপণ্য মেলায় ৩ লাখ ২০ হাজার দর্শনার্থী পরিদর্শন করেছে। যেখানে গত বছর এর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার।
এবারের হাইনান এক্সপোতে ৬৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৩ হাজার ৩৮২টিরও বেশি ব্র্যান্ড অংশগ্রহণ করে। বিশ্বের সেরা ৫০০ কোম্পানির ৩০ জন প্রধান নির্বাহীসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা যোগ দেন মেলায়। ২ হাজারেও বেশি বিদেশী ক্রেতা আসে ব্যবসার খোঁজে।
চীন তার কোভিড প্রতিক্রিয়া অপ্টিমাইজ করার পর হাইনান এক্সপো ছিল সরাসরি প্রথম বড় মাপের আন্তর্জাতিক মেলা। সে অনুযায়ী এটি দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ী মহলে কাঙ্খিত সাড়া ফেলেছে।
শনিবার কুয়াংচৌতে শুরু হওয়া ক্যান্টন ফেয়ারে ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড বরাবর উদীয়মান বাজারগুলোসহ রেকর্ড সংখ্যক ২২০টিরও বেশি দেশ এবং অঞ্চল যোগ দিচ্ছে।
এ বছরের অফলাইন প্রদর্শনীর স্থান ১.৫ মিলিয়ন বর্গমিটার বিস্তৃত। প্রায় ৩৫ হাজার প্রদর্শকের জন্য প্রায় ৭০ হাজার বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
রপ্তানি বিভাগে নেতৃস্থানীয় ব্র্যান্ড বা প্রযুক্তিসহ প্রায় ৫ হাজার ৭০০টি প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থান বরাদ্দ হয়েছে। আমদানি বিভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, জার্মানি এবং স্পেনসহ ৪০টি দেশ এবং অঞ্চলের ৫০৮টি কোম্পানির জন্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকছে।
১৯৫৭ সালে চালু হওয়া এবং বছরে দুবার অনুষ্ঠিত এই মেলাটিকে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি প্রধান পরিমাপক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ মেলাটিও বিপুল সংখ্য দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী ও ক্রেতা আকর্ষণে সক্ষম হবে এমন আশা করাই যায়।
ক্যান্টন ফেয়ারের নিয়মিত অংশগ্রহণকারী মালয়েশিয়া-চীন চেম্বার অফ কমার্স সহযোগিতার আরও সুযোগ খোঁজার আশায় এ বছরের ইভেন্টে ২০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে এসেছে।
এর প্রধান লু কোক সিওং মেলার বিষয়ে খুবই আশাবাদী। তিনি বলেন ‘মালয়েশিয়ার উদ্যোক্তাদের দৃষ্টিতে, ক্যান্টন ফেয়ার চীনের সেরা ব্যবসা এবং সর্বোচ্চ মানের পণ্যের সমাবেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা অতুলনীয় সম্পদ এবং বাণিজ্যিক সুযোগ প্রদান করে। এটি অন্যান্য প্রদর্শনীর চেয়ে আলাদা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চাইনিজ একাডেমি অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের গবেষক বাই মিং বলেন, শিল্পের উদ্ভাবনী আপগ্রেড এবং নতুন পণ্য প্রদর্শন করবে ক্যান্টন ফেয়ারে অংশ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চীনের মোট পণ্য আমদানি ও রপ্তানি ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪.৮ শতাংশ বেড়েছে। কাস্টমসের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একজন কর্মকর্তা লিউ তালিয়াং বলেন, ‘ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বৈদেশিক বাণিজ্যের মান উন্নত করার জন্য একটি ভিত্তি স্থাপন করেছে’।
ক্যা্ন্টন ফেয়ার উদ্বোধনের সময় চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হ্য লিফেং অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, চীন ভোগপ্রবণতা আপগ্রেড করবে, সক্রিয়ভাবে আমদানি সম্প্রসারণ করবে, শিল্প রূপান্তর ও আপগ্রেডিংকে বাড়িয়ে তুলবে, পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্যের সমন্বিত বিকাশকে উন্নীত করবে, বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যবসার ধরণে উদ্ভাবনকে সমর্থন করবে এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে প্রসারিত করবে।
এদিকে, ১৮ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত হতে যাচ্ছে ২০তম সাংহাই আন্তর্জাতিক অটোমোবাইল শিল্প প্রদর্শনী। এটি অটো সাংহাই ২০২৩ নামেও পরিচিত। এটি প্রথম শ্রেণির আন্তর্জাতিক অটো প্রদর্শনী।
আয়োজক কর্তৃপক্ষ বলছে, সারা বিশ্ব থেকে এক হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তা নিবন্ধন করেছে এতে অংশগ্রহণের জন্য। ১৩টি ইনডোর প্রদর্শনী হলসহ ৩ লাখ ৬০ হাজার বর্গ মিটারেরও বেশি জায়গা নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রদর্শনীটি।
অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বিশ্বাস বিশ্বব্যাপী অটো বাজারে দারুণ আত্মবিশ্বাস ও প্রাণবন্ততা আনবে অটো সাংহাই-২০২৩।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।