দেহঘড়ি পর্ব-০১৪
2023-04-16 13:23:32

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং আগুনে দগ্ধ হলে করণীয় কী সে সম্পর্কে একটি বিশেষ আলোচনা।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

পরিপাকতন্ত্র ঠিক রাখতে টিসিএম

একটি সুস্থ পরিপাকতন্ত্র শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বের কারণে অন্ত্রকে ‘দ্বিতীয় মস্তিষ্ক’ হিসাবে গণ্য করা হয়। অন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা হরমোন তৈরি করে, বর্জ্য পরিষ্কার করে, কোষে পুষ্টি যোগায় করে এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করে।

একটি ভারসাম্যহীন অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম কেবল অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না বরং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ও অঙ্গ ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করে। এটি ত্বকের ফুসকুড়ি, ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ, ফোলাভাব, অ্যালার্জি, অ্যাসিড প্রতিবাহ, ক্লান্তি ও কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটাতে পারে।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএমে পরিপাকতন্ত্রকে শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা হয় এর খাদ্য ভাঙ্গার, পুষ্টি শোষণ করার, কোষে পুষ্টি যোগানোর এবং বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করার ক্ষমতার কারণে। টিসিএমে মনে করা হয়, বদহজম হয় পেটে খাবার জমা হওয়ার কারণে। অনুপযুক্ত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত খাওয়া এবং দুর্বল পরিপাকতন্ত্রের কারণে বদহজম হতে পারে।

সকালে বেশি, রাতে কম খান

টিসিএমে বিশ্বাস করা হয়, সকাল ৭ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত পেট ও প্লীহা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। তাই এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাবার খাওয়া উচিত। একটি পূর্ণ প্রাতঃরাশ গ্রহণ করুন, দুপুরে তার চেয়ে কম খান এবং রাতে আরও কম খান। গভীর রাতে খাবার খেলে তাতে শরীরে অধিক শক্তি প্রবেশ করে এবং পরিপাকতন্ত্রের উপর চাপ তৈরি হয়। এ কারণে সহজেই স্থূলতা ও বদহজম হতে পারে। এছাড়া পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে পুষ্টি সঠিকভাবে শোষিত হতে পারে না, যার জন্য বমি, ক্ষুধামন্দা ও ডায়রিয়া হতে পারে।

ভালভাবে রান্না করা গরম খাবার খান

ঠান্ডা বা ভালভাবে রান্না না করা খাবার খেলে বাহ্যিক ঠাণ্ডা শরীরে প্রবেশ করে, যার ফলে হজমের সমস্যাজনিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, ক্ষুধামন্দা ও পেটে খিঁচুনি হয়। শরীর খাদ্যকে ‘পরিপাক অগ্নি’ দিয়ে গরম করে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে এবং এই কারণে ভালভাবে রান্না করা খাবার সহজে হজম হয়। অন্যদিকে ঠান্ডা পরিপাকতন্ত্রের জন্য হজমকে কঠিন করে তোলে। এ কারণে, ঠান্ডা ও কাঁচা খাবার যেমন আইসক্রিম ও সালাদ খাওয়া কমান এবং ভালভাবে রান্না করা গরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

আর কী কী খাবেন?

ভাত, দারুচিনি, হথর্ন বেরি ও কমলালেবুর খোসার মতো হজম-বান্ধব খাবার খেয়ে আপনি আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারেন। ভাত হজম করা সহজ এবং এটা পেটের জন্য আরামদায়ক। এছাড়া ভাত শরীরের ক্লেদ পরিষ্কার করে। দারুচিনির বৈশিষ্ট উষ্ণ এবং এটা প্লীহায় পুষ্টি যোগানোর মাধ্যমে হজমে সাহায্য করতে পারে। হথর্ন বেরি প্লীহাকে শক্তিশালী করে, কোলেস্টেরল কমায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং দ্রুত চর্বি পোড়ায়। কমলালেবুর খোসা ডায়রিয়া, বমি ও বমি-বমি ভাবের চিকিত্সার জন্য দারুণ কাজ করে। এটি ক্লেদ ও কফও দূর করে।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

ওয়েসিস ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল

ওয়েসিস ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত একটি বেসরকারি জেনারেল হাসপাতাল। এ হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা প্রদান করে। হাসপাতালটির বয়স খুব বেশি হয়নি। ২০১২ সালে এটি চালু হয়। তবে সেবা প্রদানের দিক থেকে এটি ইতোমধ্যে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে।

পনর হাজার বর্গমিটার ফ্লোর স্পেসের এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান বেইজিংয়ের ৭৯৮ আর্ট ডিস্ট্রিক্টে। ৬০-শয্যার হাসপাতালটিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জরুরী যত্নসহ সেবা দেওয়া হয়। এর কর্মীরা বহুভাষিক এবং চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত। এখানকার চিকিৎসকরা যেসব ভাষায় কথা বলতে পারেন সেগুলো হলো ইংরেজি, চীনা, জাপানি, ফরাসি, স্প্যানিশ, জার্মান, ডাচ, কোরিয়ান ও ফার্সি। আন্তর্জাতিক বীমা পলিসির গ্রাহকদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া হয় পলিসির আওতায়।

বিশ্বমানের সেবা প্রদানের কারণে আন্তর্জাতিক জেসিআই মেডিকেল স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেশন পেয়েছে এ হাসপাতাল। ইন্টারনাল মেডিসিন, সার্জারি, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, শিশুরোগ, দন্তরোগ ও টিসিএমের মতো বিস্তৃত ক্ষেত্রে সেবা প্রদানের জন্য এখানে রয়েছেন চীনসহ বিশ্বের নানা দেশের চিকিৎসক। এ হাসপাতালে যেসব রোগীকে সেবা দেওয়া হয়, তাদের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষিত থাকে চীনা ও ইংরেজি ভাষায়।

 

#বিশেষ আলোচনা

আগুনে পুড়লে কী করবেন?

আপনি যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানে যদি কোনও কারণে হঠাৎ আগুন লেগে যায়, সে আগুন লাগতে পারে আপনার শরীরেও। এমন হলে করণীয় কী? শরীরে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কিছু পরামর্শ আছে। আজ জানিয়ে দেবো তেমন কিছু পরামর্শ।

শরীরে পানি ঢালুন: আগুনে পোড়ার প্রথম আধঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসময় রোগীর শরীরে যত বেশি সম্ভব পানি ঢালুন। পানি ঢেলে পোড়ার পরিমাণ কমানো সম্ভব। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভাষ্য হলো দগ্ধ হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে দগ্ধস্থান অন্তত ২০ মিনিট ধরে ধুতে হবে। তবে বরফ, বরফ শীতল পানি, কোনো ধরনের ক্রিম, তৈলাক্ত পদার্থ ও মাখন দগ্ধস্থানে দেওয়া যাবে না।

শরীর গরম রাখুন: পানি ঢালার পর রোগীর শরীর গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে। কারণ পানি ঢালার ফলে হাইপোথারমিয়া হতে পারে। তাই পানি ঢাকাল পর শরীর কাঁথা বা কম্বল দিয়ে জড়িয়ে নিন। তবে দগ্ধস্থানে যাতে কোনও ধরনের কাপড় লেগে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পোশাক ও গহনা খুলুন: কারও শরীরে আগুন লাগলে যত দ্রুত সম্ভব পরনের পোশাক ও গহনা খুলে ফেলুন। শিশুদের ক্ষেত্রে ন্যাপি বা ডায়াপার থাকলেও খুলে ফেলুন। তবে পোড়া চামড়া বা পেশীর সাথে কোনো ধাতব পদার্থ বা কাপড়ের অংশ আটকে গেলে সরানোর চেষ্টা করবেন না। এতে ক্ষত বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

দ্রুত হাসপাতালে নিন: আগুনে পোড়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ের মধ্যে দগ্ধ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে। এতে মৃত্যুঝুঁকি থাকলে অনেকটাই কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্যালাইন দেওয়ার কারণে যে উপকার হয়, পরে সেটি হয় না। এ ২৪ ঘণ্টাকে দগ্ধ ব্যক্তির জন্য ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলা হয়।

ক্ষতিকর উপাদান দিবেন না: অনেকে দগ্ধস্থানে টুথপেস্ট, লবণ বা ডিমের সাদা অংশ দেন। এটা একদম ঠিক না। এসব দিলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। হাসপাতালে নেওয়ার পর এগুলো পরিষ্কার করতে হয়। তখন এগুলো জমাট বেঁধে থাকায় চামড়া ওঠার আশঙ্কা থাকে। ক্ষত আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি মুখ বা চোখ পুড়ে যায়, তাহলে যতক্ষণ সম্ভব সোজা করে বসিয়ে রাখতে হবে। এতে ফোস্কা পড়া বা ফুলে যাওয়া কমে।

তরল খাওয়ান: আগুনে পোড়া ব্যক্তিকে যদি স্যালাইন দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে মুখে স্যালাইন, ডাবের পানি বা তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়ান। এ ছাড়া ক্যালরি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার, যেমন ডিম বা মুরগি খাওয়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।