দূর থেকে যুদ্ধবিমানের গর্জন নীরবতা ভেঙে দিল। লম্বা "থান্ডার রোজ" "ফ্লাইং লেপার্ড" যুদ্ধবিমান থেকে বেরিয়ে এসে তাঁর হেলমেট খুলে ফেললেন। তিনি হলেন কাও ফু ইউ, যুদ্ধবিমানের একজন নারী পাইলট।
চীনের উত্তরাঞ্চলের বিমানবাহিনীর একজন ডেপুটি ক্যাপ্টেন হিসেবে কাও ফু ইউ ইতোমধ্যে দুই বার তৃতীয়-শ্রেণীর পুরষ্কার জিতেছেন এবং “জাতীয় ৮ই মার্চ রেড ব্যানার বেয়ারার” পদকে ভূষিত হয়েছেন। তিনি দ্বৈত ডিগ্রিধারী নারী যুদ্ধবিমান চালকদের প্রথম ব্যাচের পাইলট, "ফ্লাইং লিওপার্ড" যুদ্ধবিমানের সামনের কেবিনে নারী পাইলটদের প্রথম ব্যাচের সদস্য, এবং বিমানবাহিনীর প্রকৃত যুদ্ধ ব্র্যান্ডের সাথে দুটি প্রশিক্ষণ সেশনে গ্রহণকারী প্রথম নারী পাইলট।
তার দৃষ্টি দৃঢ় ও কঠিন। সেখানে একটি "নির্মম" ভাব রয়েছে। তাঁর সহকর্মীদের দৃষ্টিতে, তিনি পুরো ব্রিগেডে স্বীকৃত উড়ন্ত বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন মূলত তার নিজের প্রতি তার "নির্মমতার" কারণে।
পাইলট হওয়া মানে একের পর এক "সরু গেট" দিয়ে যাওয়া। যুদ্ধবিমানের পাইলটদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা খুবই কম। কাও ফু ইউ’র পক্ষে পাইলট হওয়া ছিল একটি দুঃসাহসিক যাত্রার মতো।
তিনি এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যদিও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলেন, তারপরও সেখানকা কঠোর শৃঙ্খলা ও শারীরিক প্রশিক্ষণের মাত্রা তার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে "পাইলট" হওয়ার পথে দুর্দান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে এগোচ্ছিলেন।
২০০৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ২১ বছর বয়সী কাও ফু ইউ বিমান চালনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং তাকে বিমানবাহিনীর একটি ব্রিগেডে নিয়োগ দেওয়া হয়।
একজন পাইলটের জন্মপ্রক্রিয়া নৃশংস। একের পর এক পরীক্ষার পর, একই ব্যাচের মাত্র কয়েকজন নারী পাইলটই নীল আকাশে উড়তে পারেন। তিনি দৃঢ়ভাবে অনুভব করেছিলেন, যে নীল আকাশে ছুটে যায়, সে একা উড়ছে না, তার একই ব্যাচের বোনদের উড়ন্ত স্বপ্ন সাথে নিয়ে উড়ছে।
তারকাখচিত "ডাবল ব্যাচেলর" যুদ্ধবিমান পাইলট দলে, কাও ফু ইউ "তার শক্তি প্রদর্শন" এবং "তার তলোয়ার দেখানোর" সাহসের জন্য বিখ্যাত। তিনি একক রাতের ফ্লাইট প্রশিক্ষণে থম বিশাল তারার আকাশের উপরে নাইট স্কাই টহল সম্পন্ন করেন। এই ছোট্ট মেয়েটিকে সত্যিকারের নায়ক বলা যেতে পারে।
২০১৫ সালে, তিনি ও অন্য পাঁচ জন নারী পাইলট চীনে উত্পাদিত "ফ্লাইং লিওপার্ড" ফাইটার জেটের সামনের কেবিনটি রিফিট করার কাজে অংশগ্রহণ করেন। "ফ্লাইং লিওপার্ড" ফাইটার জেটের সামনের কেবিনে কোনো নারী পাইলট না-থাকার বিষয়টিকে ইতিহাসে পরিণত করেন।
"গোল্ডেন ডার্ট" চীনা বিমানবাহিনীর পাইলটদের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার, যা প্রতিটি পাইলট কামনা করেন। কাও ফু ইউ ২০১৮ সালে ব্রিগেডের পক্ষ থেকে "গোল্ডেন ডার্ট" মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করেন। ২০২১ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো "গোল্ডেন ডার্ট" মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম বারের চেয়ে দ্বিতীয় বারের পরীক্ষা ছিল বেশি কঠিন। কাও ফু ইউ পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তাঁর বিমান থেকে ছুড়ে দেওয়া রকেটটি নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছিল।
১৪ বছর সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন, কাও ফু ইউ কঠোর অনুশীলন করেন, আকাশে যুদ্ধ করেন, একা আকাশে ওড়েন, এবং লাইভ গোলাগুলিতে অংশ নেন। তিনি সর্বদা তার সহকর্মীদের সামনে থাকেন। কাও ফু ইউ তার অবসর সময়ে বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে ঝাঁপিয়ে পড়েন, গুছিন বাজান, জলরঙে ছবি আঁকেন, স্কেটিং করেন, নাটক দেখেন, স্ন্যাকস খান... ঠিক সাধারণ নারীদের মতো।
বর্তমানে, চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারী পাইলটসমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। কাও ফু ইউয়ের মতো নারী পাইলট দেশের বিমানবাহিনীর উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। (ইয়াং/আলিম/ছাই)