আকাশ ছুঁতে চাই ১৩
2023-04-15 18:53:15

কী রয়েছে এবারের পর্বে:

 

১.  গভীর সমুদ্রে চীনা নারী বিজ্ঞানীর জয়যাত্রা

২. সকলের জন্য মায়ের মমতা

৩. চীনা ভাষায় কবিতা লেখেন রুশ নারী কবি

 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

গভীর সমুদ্রে চীনা নারী বিজ্ঞানীর জয়যাত্রা

 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমরা কথা বলবো একজন সাহসী নারীর চমকপ্রদ সাফল্য নিয়ে ।

ওশেনিয়ার গভীর সমুদ্রের কার্মাডেক ট্রেন্স জয় করলেন চীনা নারী বিজ্ঞানী তেং ইউছিং। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের আরেক নারী বিজ্ঞানী কারিন শ্নাবেল। এ দুই সাহসী নারীর নেতৃত্বে গভীর সমুদ্র অভিযানে চমক দেখিয়েছে চীনা বিজ্ঞানীদের একটি দল। অভিযানে পাওয়া গেছে সাগরের তলদেশের পলি, পাথর ও জীবন সম্পর্কে নতুন ধারনা।

ফেনতৌছে সাবমার্সিবল। এটিতে করেই ওশেনিয়ার গভীর সমুদ্রে অভিযান পরিচালনা করেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এই এলাকায় এটাই ছিলো চীনা বিজ্ঞানীদের প্রথম অভিযান।

 

 

শুধু তাই নয়, ওশেনিয়ার কার্মাডেক ট্রেন্সের গভীরখাদ পর্যন্ত পৌঁছে চালানো হয় গবেষণা।

২০২২ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া এই মিশনে নামে অভিযাত্রিকরা। সব মিলিয়ে ২২ হাজার নটিক্যাল মাইল পরিভ্রমণ করেন তারা। অবশেষে মোট ১৫৭ দিনের দীর্ঘ অভিযাত্রা শেষে তীরে ফিরেছেন বিজ্ঞানীরা। ফিরেছেন দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের তীরবর্তী শহর সানিয়ায়।

 কেমন ছিলো এই অভিযাত্রা? চীনের ডিপ-সি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং জানায়, এই মিশন পরিচালনা করা হয় চীনের সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা জাহাজ টানসৌ-১ এর মাধ্যমে। এই জাহাজে করেই বহন করা হয় ডিপ-সি ম্যানড সাবমার্সিবল ফেনতৌছে। আর এই সাবমার্সিবলে করে সমুদ্রচারীরা পৌঁছে যান প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমের কার্মাডেক ট্রেন্স এবং ভারত সাগরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ডায়ানটিনা ট্রেন্সে।

  অভিযানে যোগ দেয় ১০জন চীনা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। এদেরই অন্যতম চায়নিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এর অধীন ইন্সটিটিউট অব ডিপ-সি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নারী কর্মী তেং ইউছিং। তিনি জানান, পুরোটা সময়ে কার্মাডেক ট্রেন্সে ৬৩টি ডাইভ সম্পন্ন করে ফেনতৌছে সাবমার্সিবল। পৌছে যায় ট্রেন্সের ১০ হাজার মিটার গভীরে। অন্যদিকে ডায়ামানটিনা ট্রেন্সে সম্পন্ন করে ৩০টি ডাইভ।

 

তেং ইউছিং, সমুদ্র বিজ্ঞানী, ইন্সটিটিউট অব ডিপ-সি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। তিনি বলেন,

“প্রথমবারের মতো ফেনতৌছে সাবমার্সিবলে করে বিদেশি বিশেষজ্ঞসহ সমুদ্রের গভীরে এসেছি। যদিও অপারেশন এলাকায় ব্যাপক বাতাস, প্রচণ্ড স্রোত ও ঢেউ আছে। এই পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই খুব কঠিন ও বিপজ্জনক। এমন অবস্থায় গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে যাওয়াও অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে আশার কথা ফেনতৌছে সাবমার্সিবল এর আগেও বিভিন্ন সময় ডাইভে অংশ নিয়েছে।“

  চীনের নারী বিজ্ঞানীর সঙ্গে যোগ দেন নিউজিল্যান্ডের একজন নারী বিজ্ঞানীও। নিউজিল্যান্ডের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক রিসার্চের সদস্য কারিন শ্নাবেল। তিনি প্রথমবারের মতো যোগ দেন এই অভিযাত্রায়। অভিযানে অংশ নেয় অকল্যান্ড মিউজিয়ামও।

  চায়নিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস বলছে, এই অভিযানের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সাগরের তলদেশে জমে থাকা পলি, পাথর ও জীবন সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া গেছে। কারমাডেক ট্রেন্সে ভূমিকম্পের আলামতও পেয়েছছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি তলদেশের গহীনে বসবাস করা প্রাণিদের জৈবিক বিষয়বস্তুর প্রবাহ সম্পর্কেও সম্মক ধারনা পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, সাগরের সাড়ে ৫ হাজার মিটার গভীরেও তিমির দেখা পাওয়া চীনা অভিযাত্রীদের গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপের অগ্রগতি বলেও মনে করা হচ্ছে। 

প্রতিবেদন  ও কণ্ঠ: সাজিদ রাজু

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

সকলের জন্য মায়ের মমতা

একজন নারী যখন মাতৃত্ব অর্জন করেন তখন তার সামনে খুলে যায় এক বিস্ময়কর জগত। আবার অনেক নারী তার মাতৃত্বের স্নেহ ও শক্তি দিয়ে অন্য অনেক শিশুর জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসেন।

দক্ষিণ চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের  ফুচৌ শহরের এক সাধারণ মা লান লিনসিয়াং। সাধারণ নারীর মতোই ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে লানের এক বছর বয়সী ছেলের ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার বা অটিজম ধরা পড়ে। প্রথমে ভেঙে পড়েছিলেন লান। তার ছেলে অন্য দশটি শিশুর মতো নয় একথা মানতে কষ্ট হয়েছে তার। তার ছেলে কথা বলতে পারতো না। বইও পড়তে পারে না। লান তাকে নিয়ে যান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের রিহ্যাব সেন্টারে। সেখানে তিনি দেখতে পান তার ছেলের মতোই আরও অনেক শিশু রয়েছে।

তিনি চিন্তা করেন যদি নিজেদের এলাকায় এমন একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে আরও অনেক শিশু ও তাদের অভিভাবকদের উপকার করা যাবে।

এরপর থেকে নিজের এলাকায় রিহ্যাব সেন্টার খোলার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন তিনি। তার দৃঢ় মনোবল ও প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে ফুচৌ শহরের ইয়ংথাই কাউন্টিতে অটিস্টিক শিশুদের প্রথম রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। লান নিজে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই শিশুদের কিভাবে যত্ন নেয়া যায়, তাদের কিভাবে জীবনে চলার পথের জন্য উপযুক্তভাবে গড়ে তোলা যায় সেই শিক্ষাটি তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্য অভিভাবকদের মধ্যেও। পরম মমতায় তিনি অন্য শিশুদের সাহায্য করছেন। এই সেন্টারে শিশুদের টিউশন ফিও অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে ওঠানামা করে। দুর্বল আর্থিক অবস্থার শিশুদের জন্য টিউশন ফি মকুবও করে দেয়া হয়।

লানের ছেলের এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। নিজের সন্তানের সমস্যাগুলো থেকে লান বুঝতে পারেন অন্য শিশুদের ও তাদের অভিভাবকদের কি ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেই সহমর্মিতা বোধ থেকেই তিনি অন্য অনেক শিশুর জীবনকে সুন্দর করে তোলার প্রচেষ্টায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদন: রহমান

 

চীনা ভাষায় কবিতা লেখেন রুশ নারী কবি

 

গত এক দশক ধরে চীনা কবিতা লিখছেন রাশিয়ান নারী কবি পোদারেভা। রাশিয়ান ও ইংরেজী ভাষায় কবিতা লেখার পর চীনা ভাষায় কবিতা লেখায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। চীনা ভাষা তাকে চীনা কবিতা লিখতে আকৃষ্ট করেছে সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি তার লেখা চীনা কবিতাকে গানে পরিণত করেছেন তিনি। গেয়েছেনও নিজেই । এরইমধ্যে তার কবিতা ও গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে চীনাদের কাছে।

রাশিয়ান কবি ২৮ বছর বয়সী এনেস্তাসিয়া পোদারেভা, চীনা নাম থাং শিলান। ছোটবেলা থেকেই কবিতার প্রতি ঝোঁক ছিলো তার। বাবা বিখ্যাত রাশিয়ান কবিদের বইও কিনে দেন তাকে। ধীরে ধীরে কবিতার জগতের নিজের আগ্রহকে মিলাতে শুরু করেন তিনি।

কবিতা লেখা শুরু করেন পোদারেভা। শুরুতে নিজের ভাষাতেই কবিতা লেখা শুরু করলেও পরবর্তীতে ইংরেজী ভাষাতেও লিখতে শুরু করেন। বর্তমানে চীনা ভাষাতেও শুরু করেছেন কবিতা লেখা। 

পোদারেভা ২০১৩ সালে আসেন চীনে।শিখতে থাকেন চীনা ভাষা ।  এরপর তার কাছে সহজ হতে থাকে চীনা সাহিত্য। চীনার ভাষা আয়ত্ত্বের পর তার চীনা ভাষায় শুরু করেন কবিতা লেখা।

চীনে থাকাকালীন গত এক দশকে পোদারেভা অংশগ্রহণ করেছেন বেশকিছু কবিতা লেখার প্রতিযোগিতায়। জিতেছেন পুরষ্কার । পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন তার নিজের চীনা কবিতার সংকলন।  এছাড়া চীনের শীর্ষস্থানীয় কবিতার থিমের টিভি প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে একটি চীনা কবিতা সম্মেলনে অংশও নেন তিনি।

সম্প্রতি নিজের কবিতাকে গানে পরিণত করেছেন তিনি। নিজের কন্ঠে গাওয়া এই গান এরমধ্যে সাড়া ফেলেছে চীনে। এই গান মহামারী করোনার সময় লেখেন এই এই তরুণ কবি। মহামারীর

প্রতিকূলতার সময় চীনের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিষয়গুলো উঠে এসেছে তার কবিতায় । চীনের প্রতি তার অনুভূতি প্রসঙ্গে পোদারেভা বলেন,   "কিছু লোক খুব সহজবোধ্যভাবে চীনের প্রশংসা করতে পারে, তবে আমি বিভিন্ন ধারার কবিতার মাধ্যমে দেশ সম্পর্কে আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে পছন্দ করি।"

চীনের ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট পিলিপিলি ও তুইনে রয়েছে পোদারভার নিজস্ব প্রোফাইল। যেখানে আছে তার ২৩০টিরও বেশি কবিতা।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল