চীনা ভাষায় স্কুলের নাম 'চেং ইয়ান খ্যে'। তবে, এটি ইতালির হাইস্কুল। এর শিক্ষার্থী লাকোপো গের্মোলে ২০১৯ সালে আয়োজিত 'চীনা ভাষা সেতু' শীর্ষক বিশ্ব হাইস্কুল শিক্ষার্থী চীনা ভাষার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার পর তিনি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন।
১৭ বছর বয়সী লাকোপো রোম সরকারি আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন। ২০২২ সাল তাঁর জন্য অবিস্মরণীয় বছর। এ বছর তিনি ইতালির পক্ষ থেকে চীনে পশ্চাদশ 'চীনা ভাষা সেতু' বিশ্ব হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। দুই সপ্তাহের প্রতিযোগিতায় ১০৫ দেশের ১২৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং তাঁর চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, যত প্রচেষ্টা তত সাফল্য। আমি ভাবিনি যে, আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবো। কিন্তু আমি ইউরোপের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এর মাধ্যমে আমি মনে করেছিলাম, আমি আরও ভালো করব বা করার সামর্থ্য আমার আছে। আমার মনে হয়, সবই সম্ভব। এ ছাড়াও এবারের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। চীনা স্বেচ্ছাসেবক ও শিক্ষার্থীরা অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ।'
লাকোপো ভাল চীনা ভাষা বলতে পারেন। চীনা হাতের লেখা ও তাই চি জানেন তিনি। লাকোপোর স্কুল রোম সরকারি বিদ্যালয় অনেক বিখ্যাত। ২০০৯ সালে বিদ্যালয়টি বিশেষ করে চীনা ভাষার কোর্স চালু করে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইতালি সফরের সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রেসিডেন্ট সি-কে একটি চিঠি লেখেন। পরে প্রেসিডেন্ট সি তাঁদের চিঠির উত্তর দেন। সে ঘটনার একজন সাক্ষী হিসাবে লাকোপো বলেন, চিঠিতে প্রেসিডেন্ট সি'কে চীনা ভাষা শিক্ষার সুযোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। লাকোপো বলেন, 'আমরা ভাবিনি যে, প্রেসিডেন্ট সি আমাদের চিঠির উত্তর দেবেন। আসলে আমরা আমাদেরকে চীনা ভাষা শেখা ও চীনকে জানার সুযোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। আমার যতদূর মনে আছে, প্রেসিডেন্ট সি তাঁর চিঠির শেষ দিকে লিখেছেন: যৌবন এতো সুন্দর, নিরাশ হয় না। তিনি আশা করেন, আমরা তরুণ-তরুণীরা যৌথভাবে আরো সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করবো।'
২০২২ সালে লাকোপো হান ভাষার ষষ্ঠ পর্যায়ের পরীক্ষা পাস করেন। সে বছর তিনি হাইস্কুল থেকে স্নাতক হন। নিজের ভবিষ্যত-পরিকল্পনা ঠিক করেন। তিনি জানান, ২০১৯ সালে নয়াচীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী। ২০২০ সাল হলো ইতালির চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। তিনি ভবিষ্যতে দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি চীনে গিয়ে চীনা ভাষায় আরও দক্ষ হতে চাই। আমি চীনকে আরো ভালোভাবে জানতে চাই। চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রডকাস্ট হোস্ট বিভাগ আছে। কিন্তু ইতালিতে নেই। আমি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হতে চাই। আগে আমি জানতাম না, দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের এতো দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেজন্য আমি ইতালির আরো বেশি যুবককে চীন সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো।'
পাঁচ বছর আগে লাকোপো চীনা ভাষা শেখা শুরু করেন। তিনি প্রতিবছর চীনে গিয়ে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে অংশ নিতেন। তিনি চীনের পান্ডা ও মহাপ্রাচীর দেখেছেন। চীনে আসলে তিনি অ্যাপসের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করতে পারেন এবং শেয়ার সাইকেল ব্যবহার করতে পারেন। চীনে অনেক সুন্দর ও আধুনিক জিনিস আছে বলে তিনি মনে করেন। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের বিরাট পরিবর্তন ও উন্নয়ন বিশ্বের অনেকের মতো তাকেও অবাক করেছে। তিনি বলেন, 'একটি ভাল চলচ্চিত্র দেখার কথা বলি। প্রথম বার দেখলে গল্প সম্পর্কে জানা যায়। দ্বিতীয় বার দেখলে আরো বেশি বিস্তারিত বোঝা যায়। তৃতীয় বার দেশলে চলচ্চিত্র শুটিংয়ের প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা যায়। আমি প্রতিবার চীনে এসে নতুন জিনিস আবিষ্কার করি। আমার মা শাংহাইয়ে কাজ করেন। তিনি সবসময় বলেন, যদিও আমি চীনে কাজ করি, তবুও সবসময় নতুন জিনিস আবিষ্কার করতে পারি।'
লাকোপো বর্তমানে চীন ও ইতালিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি সবসময় ব্যস্ত থাকেন। তিনি চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুষ্ঠানে হোস্টের কাজ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে তাঁর সাফল্য চীনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, 'চীনা ভাষা শেখা শুরু করার প্রথম দিকে আমি ঠিক জানতাম না, কেন চীনা ভাষা শিখছি। অনেকেই মনে করেছিল এটা একটা সাহসী সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখন সবাই জানতে চান, চীন কেমন দেশ? আপনি কি চীনে গিয়ে কাজ করবেন? আমার মনে হয়, বর্তমান আন্তর্জাতিক সমাজে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়েছে। আমার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। আমার মনে হয়, চীনা ভাষা শেখার কারণে আমার জন্য অনেক বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।'
২০২৩ সালে রোমের হাইস্কুলের শিক্ষার্থী লাকোপো হয়তো চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করবেন। চীনা ভাষা তাঁর জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে। চীনা সংস্কৃতি তাঁর চিন্তাভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। (ছাই/আলিম)