এপ্রিল মাসের চীনের হাইনান প্রদেশ সবখানে বসন্তের প্রাণচঞ্চল আমেজ উপভোগ করা যায়। এখানের হাই খৌ শহরে তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্য মেলা ১০ থেকে ১৫ এপ্রিল এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের মেলার প্রতিপাদ্য হল ‘যৌথভাবে উন্মুক্তকরণের সুযোগ শেয়ার করা, যৌথভাবে সুন্দর জীবন উন্মোচন করা’। চীনে মহামারি প্রতিরোধের নতুন পর্যায় শুরু হলে, চীনে আয়োজিত প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মেলা হিসেবে, এবারের ভোগ্যপণ্য মেলা আগেরবারের মেলার তুলনায় অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা আরো বেড়েছে, ব্র্যান্ড আরো বেশি হয়েছে, ক্রেতার সংখ্যাও আরো বেড়েছে। চীনা অর্থনীতি উন্নয়নের শক্তি সারা বিশ্বে ফুটে উঠেছে।
‘চীনের উন্মুক্তকরণের দরজা বন্ধ হবে না, বরং আরো বড় হবে’। এটি শুধু একটি প্রতিশ্রুতি নয়, বরং চীনের বাস্তব ব্যবস্থা। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রথম আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্য মেলায় দেওয়া শুভেচ্ছাবাণীতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এই মেলা হল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভোগ্যপণ্য বিনিময় ও প্রদর্শনের মঞ্চ। তা বিশ্বে চীনের দৃঢ়ভাবে উন্মুক্তকরণ বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে।
এবারের ভোগ্যপণ্য মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য হল ‘প্রভাবশক্তি বাড়ানো ও আন্তর্জাতিক মনোভাব প্রদর্শন’। প্রদর্শনীর মোট আয়তন ১.২ লাখ বর্গমিটারেরও বেশি। যা আগের মেলার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। ৬৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৩৩০০টিরও বেশি ভোগ্যপণ্য ব্র্যান্ড এতে অংশ নিয়েছে। পেশাদার দর্শক ও ক্রেতার সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এবারের মেলায় আরসিইপি অর্থাত্ আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারি সম্পর্ক চুক্তির ১০টি সদস্য দেশ অংশ নিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশগুলোর শ্রেষ্ঠ পণ্য সবার কাছে হাজির হয়েছে।
মেলার পুরানো বন্ধুদের কাছে, ভোগ্যপণ্য মেলা শুধু চীনের উন্মুক্তকরণে অংশ নেয়ার একটি নতুন সুযোগ নয়, বরং তা চীনের বিশাল বাজারে প্রবেশের একটি সোনালি চাবি।
থাইল্যান্ডের টিসিপি গ্রুপ কোম্পানির সিইও সুই সিন সুং বলেন, এবারের ভোগ্যপণ্য মেলা চীনের উন্মুক্তকরণ জোরদার করার সক্রিয় ইঙ্গিত দিচ্ছে। যা বৈদেশিক পুঁজি প্রতিষ্ঠানের চীনের উন্নয়নে যোগ দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। তার কোম্পানি চীনা বাজারের সুযোগ উপভোগ করতে পারছে, আস্থাও আরো বাড়ছে।
চীনের বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের রিপোর্টে জোর দিয়ে বলা হয় যে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে, অর্থনীতির উন্নয়নে ভোগের মৌলিক ভূমিকা জোরদার করতে হবে।
বর্তমানে ভোগ-বাজারে আস্থা প্রতিষ্ঠা করা সোনার চেয়েও মূল্যবান। তাই, অব্যাহতভাবে ভোগ্য-পণ্য সরবরাহের গুণগতমান বাড়লেই কেবল, সর্বাত্মক মাত্রায় ভোগের আস্থা চাঙ্গা হবে।
এবারের ভোগ্যপণ্য মেলা হল ‘ভোগ চাঙ্গা করার বর্ষ’ আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে বিশ্বের ৩৩০০টিরও বেশি শ্রেষ্ঠ ভোগ্য ব্র্যান্ড আছে, বিভিন্ন দেশের শীর্ষকোম্পানি এই প্রথমবারের মত মেলায় অংশ নিচ্ছে। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানকে চীনা বাজারের সুযোগ শেয়ার করার জন্য সুবিধা দিয়েছে।
এ ছাড়া, মেলায় শতাধিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। যেমন ফোরাম, সেমিনার ইত্যাদি। দুই শতাধিক দেশ-বিদেশের তথ্যমাধ্যম সার্বিকভাবে মেলার বিভিন্ন তথ্য প্রচার করেছে।
এবার মেলা আয়োজনের স্থান চীনের হাই নান প্রদেশের অবাধ বাণিজ্যবন্দর নির্মাণ করার পর থেকে ১৮০টিরও বেশি নীতিগত বিষয় কার্যকর করেছে। বিভিন্ন শুল্ক সুবিধাজনক নীতি চালু করা হয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠান হাই নান অবাধ বাণিজ্য বন্দরের সুবিধা কাজে লাগিয়ে হাই নানে কারখানা স্থাপন করেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান হাই নানে আঞ্চলিক সদরদপ্তর স্থাপন করেছে। হাই নান প্রদেশের মাধ্যমে আরো বেশি শ্রেষ্ঠ মানের ভোগ্যপণ্য চীনে নিয়ে আসছে।
২০০২ সালে হাই নানে ভোগ্যপণ্যের আমদানির পরিমাণ ছিল ৪০ বিলিয়ন ইউয়ান, যা প্রদেশের আমদানির মোট পরিমাণের ৩০ শতাংশের মত। দেশের গড়পড়তা মানের চেয়ে ২০ শতাংশেরও বেশি।
আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্য মেলাসহ বিভিন্ন মঞ্চের সাহায্যে, সম্প্রতি বছরগুলোতে হাই নান এবং আরসিইপি সদস্য দেশের সহযোগিতা অব্যাহতভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালে হাই নান প্রদেশ এবং আরসিইপি সদস্য দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭১.১৮ বিলিয়ন ইউয়ান; যা আগের বছরের চেয়ে ২৩.৭ শতাংশ বেশি।
অনুমান করা যায়, আরো বেশি দেশের ভোগ্যপণ্যের ব্র্যান্ড এবং ভোক্তা, হাই নানের উন্মুক্ত দরজার মাধ্যমে অবাধ বাণিজ্য বন্দরের সুযোগ ও সুফল শেয়ার করবে। এর মাধ্যমে চীনের বৈশিষ্ট্যময় অবাধ বাণিজ্য বন্দর নির্মাণ আরো সুষ্ঠু হবে।
(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)