তৃতীয় প্রজন্মের মরুকরণ প্রতিরোধ কর্মী
2023-04-14 14:29:38

কুও সি চীনের কান সু প্রদেশের কু লাং জেলার বা বু শা বন খামারের একজন মরুকরণ প্রতিরোধ কর্মী। বন খামারের তৃতীয় প্রজন্মের মরুকরণ প্রতিরোধ কর্মী হিসেবে তিনি নিজের চাচার সঙ্গে মরুকরণ প্রতিরোধের পদ্ধতি শেখার পাশাপাশি সবসময় একাই মরুভূমিতে থাকেন। কঠিন পরিবেশ ও একাকী জীবন, তরুণ মানুষের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ।

কুও সি বলেন, শুরুতে এখানে আসতে চাইতাম না। একাই দশ-বারো দিন ধরে মরুভূমিতে থাকা, মোবাইল ফোনের সিগনাল না পাওয়া, বিদ্যুত্ না থাকা- এ অবস্থায় অধিকাংশ তরুণ মানুষ এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে।

 

চীনে মরুভূমির আয়তন দেশের মোট ভূখণ্ডের ২৭.২ শতাংশ। বিশ্বে মরুকরণের আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড়, এতে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রভাবিত হয় এবং বালিঝড়ের সবচেয়ে গুরুতর ক্ষয়ক্ষতির দেশ চীন। কু লাং জেলা চীনের চতুর্থ বৃহত্ মরুভূমি-টেঙ্গার মরুভূমির কাছে অবস্থিত। গত শতাব্দীর ৭০ দশকে, চীন সরকার মরুকরণ প্রতিরোধ কার্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৮১ সালে কু লাং জেরার ছয়জন বৃদ্ধ সবার আগে যৌথভাবে ভাড়া করে উত্পাদন এবং পরিচালনার পদ্ধতিতে বা-বু-শা যৌথ বন খামার স্থাপন করেছিলেন। স্থানীয় মানুষ তাঁদেরকে ‘ছয় বৃদ্ধ’ বলে উল্লেখ করে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। চীন সরকার যথাক্রমে কয়েক কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করে গুরুতর মরুকরণের জায়গাগুলোর পরিচালনা করেছে। বা-বু-শা বন খামারের বন ও ঘাসের আয়তন আগের ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে হয়েছে ৭০ শতাংশ। এর ফলে দক্ষিণ থেকে উত্তরে ১০ কিলোমিটার, পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৮ কিলোমিটারের সবুজ করিডোর তৈরি হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করে পাওয়া এই সাফল্য মজবুত করার জন্য ‘ছয় বৃদ্ধের’ বংশধররাও ধারাবাহিকভাবে এই কাজ করে আসছেন।

 

কুও সি বলেন, দাদারা মৃত্যুর সময় এমন একটি সবুজ প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন। প্রত্যেক পরিবারে একজন করে বা বু শা বন খামারের কাজে অংশ নিতে হবে। তাই আমি ভাবছি, দাদার প্রজন্মের মানুষ খালি পিঠে, সারা জীবন মরুকরণ প্রতিরোধে কাজ করেছে। তাঁদের কঠিন পরিবেশ ও ক্লান্তি আমার কাছে কিছুই না। কারণ আমি অনেক তরুণ মানুষ।

এভাবে কুও সি বন খামারে থাকতে শুরু করেন। নতুন প্রজন্মের মরুকরণ প্রতিরোধ কর্মী হিসেবে, কুও সি এবং তাঁর সহকর্মীরা এক দিকে প্রকল্প নির্মাণ করে মরুকরণ প্রতিরোধ করেন, অন্যদিকে মরুভূমিতে চাষ করা হ্যালোক্সিলন গাছের নিচে সিস্তানচে জোড়কলম বসান। এভাবে স্থানীয় মানুষের ধনী হওয়ার পদ্ধতি আরো বেশি হয়। হ্যালোক্সিলন গাছ মরুভূমিতে জন্ম নেওয়া এক ধরনের উদ্ভিদ। খরায় এর কোনো সমস্যা হয় না। এই গাছের মূলে যে সিস্তানচে  (cistanche) জোড়কলম বসানো হয়, তা এক ধরনের মূল্যবান চীনা ঐতিহ্যবাহী ওষুধ। দুটো সংযুক্ত হলে এক দিকে মরুকরণ প্রতিরোধ করা যায়, অন্যদিকে ভালো আর্থিক মুনাফাও হয়।

 

কুও সি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আমরা এটা চাষ করছি। এখানকার জমিতে গুরুতর মরুকরণ হয়েছিল। শস্য চাষ করা যেত না। হ্যালোক্সিলন বাতাস ও বালিঝড় প্রতিরোধ করতে পারে। আর সিস্তানচে’র সঙ্গে সংযুক্ত হলে আর্থিক মুনাফা সৃষ্ট হয়।

মরুভূমিতে থাকা মানুষের কাছে, যা একদম অসহ্য তা বালিঝড় নয়, বরং একাকীত্বের অনুভূতি। মরুভূমিতে প্রতি ৩০ কিলোমিটার পর পর একটি স্টেশন আছে। বন খামারের কর্মীরা দু’জন একটি গ্রুপ করে পালাক্রমে সেখানে টহল দেন। তাঁদের দৈনন্দিন কাজ হল একাই বন খামারে টহল দেওয়া। প্রতিদিন তাঁরা খামারে দুই-তিন বার টহল দেন। তারা দেখেন, কোনো অনুমোদন ছাড়া পশু চারানো মানুষ আছে কিনা এবং পাহাড়ে আগুণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে কিনা।

 

 

কুও সি বলেন, এটা হল মরুভূমির শ্যালট। চলতি বছর বৃষ্টি বেশি হয়েছে। দেখুন, এর ফুল কত সুন্দর। এটা তুলে গরম পানিতে সিদ্ধ করে, তারপর খাওয়া যায়, অনেক সুস্বাদু। দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র আমি কখনই দেখি নি, তবে আমাদের মরুভূমিতে ফুলের সাগর আছে।

আগে বালি খুব ঘৃণা করতাম। এখন এভাবে চিন্তা করি না। আপনি প্রকৃতিকে সেবা দিলে, প্রকৃতি নিশ্চয় আপনাকেও প্রতিদান দেবে।

গত দশ বছরে, চীন ১৮৮ লাখ হেক্টর জমি মরুকরণ থেকে রক্ষা করেছে। দেশের অর্ধেকেরও বেশি মরুভূমির জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। মরুভূমিতে প্রতিটি সবুজ দৃশ্যের পিছনে একটি গল্প আছে। কেউ মরুভূমিকে ‘পৃথিবীর ক্যান্সার’ মনে করে। তবে কুও সি’র মত অসংখ্য মানুষ, এখানেই তাদের বংশধরদের জন্য আরো সুন্দর বাড়ি তৈরি করছেন।