গোল্ডেন ক্যামেলিয়া চাষে সমৃদ্ধি অর্জন
2023-04-14 15:06:59


চীনের বসন্তকালের সব উদ্ভিদই প্রাণবন্ত হয়। কুয়াং সি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ফাং ছেং কাং শহরের ফাং ছেং অঞ্চলের ঘন জঙ্গলে ‘উদ্ভিদ জগতের পান্ডা” খ্যাত ফুল ফুটছে। এটি হলো গোল্ডেন ক্যামেলিয়া।

 

গোল্ডেন ক্যামেলিয়াতে সোনালি পাপড়ি এবং গাঢ় লাল পুংকেশর রয়েছে। সবুজ পাতার পটভূমিতে সোনালি পাপড়ি এবং জেড পুংকেশরের ফুলগুলি উজ্জ্বল ও অসাধারণ সুন্দর দেখায়। এ ফুল গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে ফাংছেং অঞ্চলের একটি বড় এলাকাজুড়ে রোপণ করা হয়েছে। ফুল এবং পাতাগুলো চা তৈরি করতে এবং ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা স্থানীয়দের সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য একটি সোনালী শিল্পে পরিণত হয়েছে।

 

গোল্ডেন ক্যামেলিয়া অতি পুরোনো এক উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদ আবিষ্কৃত হওয়ার আগে মানুষেরা শুধু লাল ও সাদা রঙের ক্যামেলিয়া দেখতে পেয়েছে। গোল্ডেন ক্যামেলিয়া অনেকের কল্পনার বাইরে রয়েছে। গত শতাব্দীর ৬০ ও ৭০-এর দশকে চীনের উদ্ভিদবিদরা কুয়াং সি’র পবর্তাঞ্চলে গোল্ডেন ক্যামেলিয়া আবিষ্কার করেন। তারপর গোল্ডেন ক্যামেলিয়া মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। ১৯৯৪ সালে ছাং ছেং কাং শহরে গোল্ডেন ক্যামেলিয়ার জন্য জাতীয় প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

 

 এক সময় গোল্ডেন ক্যামেলিয়া কেবল উপভোগের জন্য বিরল ছিল। তবে গবেষণার পর এ উদ্ভিদের ফুল ও পাতা রক্তের লিপিড, রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে। তাই ২০১১ সাল থেকে ফাং ছেং অঞ্চলে এ ফুল চাষকে কেন্দ্র করে অনেক প্রকল্প চালু হয়েছে। বিরল এ ফুলটি ব্যাপক পরিমাণে কৃত্রিমভাবে রোপণ ও চাষ করতে সক্ষম হয়েছে তারা।

 

গোল্ডেন ক্যামেলিয়ার পাতা ও ফুল উভয়ই খাওয়া যায়। গোল্ডেন ক্যামেলিয়ার চাষি তেং সি চি এ কথা বলেন। তেং সি চি’র পরিবারের আছে ৪০ হেক্টর গোল্ডেন ক্যামেলিয়া চা। বার্ষিক শুকনো ফুলের উৎপাদনের পরিমাণ ২৫০০ কেজি, যার মূল্য ২০ লাখ ইউয়ানের বেশি।

 

ফাং ছেং অঞ্চলে বড় চাষি এবং নেতৃস্থানীয় এন্টারপ্রাইজকে সমর্থন করে এবং ‘নেতৃস্থায়ী প্রতিষ্ঠান যোগ ভিত্তি যোগ কৃষি পরিবার’ সংক্রান্ত উন্নয়নের পদ্ধতি সম্প্রসারণ করে। যাতে হাজার হাজার পরিবারের যৌথ অংশগ্রহণ করতে পারে এমন কাঠামো গড়ে তোলা যায়।

তেং সি চি বলেন, ‘আগে প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি জানতাম না। মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে ফুলটা শুকাতে হয়। যার কারণে ভালো দামে বিক্রি হতো না। বর্তমানে আমার আছে গোল্ডেন ক্যামেলিয়া চাষ ঘাঁটির পাশাপাশি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা। তাজা ফুল যন্ত্রে দশাধিক ঘণ্টা ধরে প্রক্রিয়াকরণের পর শুকনো ফুলে পরিণত হয়, যার ফলে আরও ভালো দামে বিক্রি করা যায়।”

 

২০২২ সালে ফাং ছেন অঞ্চলে গোল্ডেন ক্যামেলিয়া ফুলের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার কেজি। শুকনো ফুলের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪০ কেজি। তাজা পাতার পরিমাণ ছিল ৪০০ টন এবং চারার পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার। গোল্ডেন ক্যামেলিয়ার মধ্য দিয়ে ওরাল লিকুইড, ফেসিয়াল মাস্ক, টিনজাত ভেষজ চা, টিব্যাগ, প্যানকেক চাসহ নানা পণ্য তৈরি হয়েছে, যার মূল্য ২৬ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়েছে।

 

ফাং ছেং অঞ্চলকে চীনের গোল্ডেন ক্যামেলিয়া টাউন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ অঞ্চল নিজের বৈশিষ্ট্যময় গোল্ডেন ক্যামেলিয়ার সম্পদ কাজে লাগিয়ে কৃত্রিমভাবে রোপণ এবং পণ্য উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে। এ অঞ্চলে গোল্ডেন ক্যামেলিয়ার মানসম্পন্ন উৎপাদনের দৃষ্টান্তমূলক ঘাঁটি, গোল্ডেন ক্যামেলিয়ার চা পাতা প্রক্রিয়াকরণ গবেষণা কেন্দ্র গঠিত হয়েছে। নানা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণালয়ের সঙ্গে গোল্ডেন ক্যামেলিয়া চাষ ও পণ্য উন্নয়নে সহযোগিতা চালাচ্ছে ফাং ছেং অঞ্চল।

 

 বর্তমানে ফাং ছেং অঞ্চলে গোল্ডেন ক্যামেলিয়ার কাঁচামাল ঘাঁটির সংখ্যা ১৫টি। সে সবে পাতা ও তাজা ফুল নিয়ে ধারাবাহিক চা, পানীয় ও ত্বকের যত্ন পণ্যসহ ৮০টিরও বেশি প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরি হয়েছে। সেসব পণ্য দেশ-বিদেশে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

(রুবি/এনাম)