রুবি: প্রিয় বন্ধুরা, কেমন আছেন। আমি ওয়াং তান হোং রুবি।
এনাম: হাই, আমি মো. এনামুল হাসান।
রুবি: এনাম, আপনি জানেন কি? বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ ও বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগের পরে সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট আরেকটি নতুন উদ্যোগ উত্থাপন করেছেন। সেটি হলো বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগ।
এনাম: জানি তো। গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারা বিশ্বের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) উচ্চপর্যায়ের এক সংলাপে এ উদ্যোগের উত্থাপন করা হয়। তাতে সি চিন পিং বিশ্ব সভ্যতা নিয়ে তাঁর নতুন চিন্তাভাবনা তুলে ধরেছেন।
রুবি: জ্বি, আসলে ২০১৪ সালের মার্চ মাসেই ইউনেস্কোয় ভাষণ দেওয়ার সময় সি চিন পিং বলেছিলেন, “সবার উচিত বিভিন্ন সভ্যতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও সম্প্রীতিময় সহাবস্থান বেগবান করা, যাতে সভ্যতার আদান-প্রদান বিভিন্ন দেশের জনসাধারণের মৈত্রীর সেতু এবং মানব জাতির অগ্রগতির চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়”।
বলা যায় যে, এ নিয়ে তিনি সব সময় চিন্তাভাবনা করেন। বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগে তাঁর চিন্তাভাবনাগুলোকে আরও বিস্তারিত এবং সুসংহত করা হয়েছে। আপনি দেখুন, বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগে রয়েছে চারটি বিস্তারিত ও প্রধান বিষয়। সেগুলো হলো যৌথভাবে বিশ্ব সভ্যতার বৈচিত্র্যকে সম্মান করা, মানব জাতির অভিন্ন মূল্যবোধ সম্প্রসারণ করা, সভ্যতাকে ধরে রাখা ও এর উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও সহযোগিতাকে জোরদার করা।
এনাম: এ পর্যায়ে আমি আমার সাম্প্রতিক সময়ে চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের ছুয়ান চৌ শহর ভ্রমণ সম্পর্কে বলতে চাই । ছুয়ান চৌ শহরে অতীতকালের বিশ্ব সভ্যতার সমাবেশ দেখতে পেয়েছি আমি। ছুয়ান চৌতে আমি সহস্রাধিক বছরের প্রাচীন একটি ঐতিহাসিক মসজিদ তথা ছিং চিং মসজিদ দেখতে পেয়েছি। এ মসজিদটি এক সময় ছুয়ান চৌতে আসা আরবদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এ মসজিদের অদূরেই রয়েছে চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম মন্দির তথা খাই ইউয়ান মন্দির। তা ছাড়া, আরও রয়েছে পৃথিবীর একমাত্র টিকে থাকা মণি গুয়াংফোর পাথরের মূর্তি ইত্যাদি। ছুয়ান চৌ’র আওতাধীন হুয়া জেলার সিরামিক বিশ্ববিখ্যাত। সব মিলিয়ে বলা যায়, অতীতকাল থেকেই বিশ্বের সঙ্গে চীনের যোগাযোগ অনেক ঘনিষ্ঠ ছিল।
রুবি: জ্বি, আপনি জানেন, ছুয়ান চৌ শহরে রয়েছে ২২টি সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি। ফলে ২০২১ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য সম্মেলনে ম্যাকাও ছাড়া চীনের একমাত্র ছুয়ান চৌ শহরকে জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এনাম: তা থেকেই বোঝা যায়, অতীতে ছুয়ান চৌ’র সভ্যতা কতটি সমৃদ্ধ ছিল। ছুয়ান চৌ সামুদ্রিক রেশম পথ ধরে সারা বিশ্বের নানা সভ্যতার সঙ্গে আদান-প্রদান করেছে। তার ওপর নির্ভর করে ছুয়ান চৌ’র সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে উঠেছে।
রুবি: এটি আসলে চীনে প্রচলিত একটি প্রবাদের মতো: আদান-প্রদানে সভ্যতা বৈচিত্র্যময় হয়; পরস্পর থেকে শিক্ষা গ্রহণে সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়। এখানে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। কারণ চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন মানব সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ নতুন রূপ বলা যায়।
এনাম: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নকে ব্যাখ্যা করার সময় বেশ কিছু কথা বলেছেন। সেসব আমার মনে ছাপ ফেলেছে।
তিনি বলেছেন, ‘আধুনিকায়ন অনুসরণ করলে যে কোনো দেশকে যৌথ প্রতিষ্ঠা, যৌথ বিনিময় এবং যৌথ অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে হবে। চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন ঐতিহাসিক সংস্কৃতি ধরে রাখার পাশাপাশি আধুনিক সভ্যতার সংমিশ্রণ ঘটাবে, চীনা জনগণের কল্যাণ সৃষ্টির পাশাপাশি বিশ্ব উন্নয়নকে বেগবান করবে।’
তাই আমি চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের পথের ভালো ভবিষ্যৎ দেখি। আমার মনে হয়, মানব সভ্যতার নতুন রূপের একটি হলো চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন। এটি বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার সঙ্গে একে অপরের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বিশ্ব সভ্যতার ফুল উদ্যানকে আরও রঙিন ও বর্ণাঢ্য করবে।
রুবি: প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এ পর্যন্ত। দেখা হবে আগামী অনুষ্ঠানে।