চীনে ইনজুরি হল মনোকুলার অন্ধত্বের প্রধান কারণ, তারপরে চোখের টিউমার এবং অন্যান্য অনাক্রম্য রোগ। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দেশব্যাপী ৫০ লাখেরও বেশি এক চোখের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে।
বেশির ভাগ এক চোখের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য সিনথোং তাদের জন্য কৃত্রিম চোখ তৈরির মাধ্যমে জীবন কাটানোর নতুন উপায় প্রদান করেছে।
২০১৩ সালে সিনথোং এবং তার বাবা-মা গাড়ি চালিয়ে ইনার মঙ্গোলিয়া থেকে শানসি প্রদেশে যাওয়ার পথে হঠাত্ গাড়ি উল্টে তিনি গাড়ির বাইরের পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
জ্ঞান ফেরার পর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলেন। কোমায় চলে যাওয়ার ৩ ঘণ্টার পর তিনি যে প্রথম খবর শুনেছেন তা হলো নিজের ডান চোখের গোলা ফেটে গেছে এবং শিগগিরই অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। সিনথোংয়ের ডান চোখের গোলা অপসারণের পর তার জীবন পুরোপুরি বদলে যায়।
গাড়ি দুর্ঘটনার তিন মাস ছিল তার আপাতত জীবনে সবচেয়ে অন্ধকার সময়। তিনি সহজেই রাগ করতেন এবং খুব সংবেদনশীল হতেন।
আট বছর বয়সে তিনি নাচ শিখতে শুরু করেন। গাড়ি দুর্ঘটনার পর নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায়। মঞ্চে দাঁড়ানোর সুযোগ আর নেই। তার স্মার্ট চোখ এবং ভারসাম্যের অনুভূতি আর নেই। তার জন্য তিনি যা হারিয়েছেন তা কেবল তার ডান চোখই নয়, নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার ভবিষ্যতও। অস্ত্রোপচারের অর্ধেক বছর পর সিনথোং আবার স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেন।
২০২০ সালে সিনথোং নৃত্য শিক্ষক হিসেবে স্থিতিশীল চাকরি ছেড়ে দেন এবং কৃত্রিম চোখ তৈরির একজন শিল্পী হয়ে উঠার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। শুরুতে পরিবারের সদস্যরা তার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিত করেন। কারণ নৃত্য শিক্ষক হিসেবে এই পেশা’র বেতন স্থিতিশীল। কৃত্রিম চোখ তৈরির প্রযুক্তি শুরু থেকে শিখলে তা সহজ ব্যাপার নয়।
তবে সিনথোং নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে কৃত্রিম চোখ তৈরির শিল্পের উন্নয়নের অবকাশ নিঃসন্দেহে বিশাল হবে।
পদত্যাগের পর সিনথোং কৃত্রিম চোখ তৈরি’র শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। আসলে প্রথম এক বছরে তার কাজ সুষ্ঠুভাবে চলেনি। কারণ চীনে কৃত্রিম চোখ তৈরি’র ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থাগত প্রশিক্ষণের কোর্স নেই। খুব ছোট একটি খাত হলেও এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম নয়।
চীনে দুই রকম কৃত্রিম চোখ পাওয়া যায়। গতানুগতিক কৃত্রিম চোখ এবং কাস্টমাইজড বা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী কৃত্রিম চোখ। সিনথোং সিদ্ধান্ত নেন, কাস্টমাইজড কৃত্রিম চোখ তৈরি করবেন। তিনি প্রথমে ক্রেতাদের পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের অক্ষিকোটর, চোখের রং, চেহারার গঠন ইত্যাদি স্টাডি করেন। এরপর তাদের চেহারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চোখ তৈরি করেন। এজন্য তাকে চোখের চিকিৎসা বিজ্ঞানও পড়তে হয়। সাধারণভাবে বলা যায়, একটি কৃত্রিম চোখ তৈরি করতে ৩ বা ৫ দিন লাগে। বাজারে কৃত্রিম চোখের উপকরণ ভিন্ন বলে এর দামও ভিন্ন। কয়েক হাজার ইউয়ান থেকে ১০ হাজারেরও বেশি পর্যন্ত।
২০২২ সালে সিনথোং বেইজিংয়ে নিজের স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। দৈনন্দিন জীবনে তিনি কৃত্রিম চোখ তৈরি করা ছাড়াও, প্রতিসপ্তাহে তিনি ২ বা তিন ঘণ্টা ইন্টারনেটে লাইভ সম্প্রচার করে থাকেন। লাইভ সম্প্রচারে তিনি নেটিজেনদের প্রশ্নের জবাব দেন। যেমন, কার জন্য কি রকমের কৃত্রিম চোখ সামঞ্জস্যপূর্ণ? কিভাবে হীনমন্যতা থেকে মুক্তি পাবে ইত্যাদি। তিনিই যেন আলো’র মতো চোখে প্রতিবন্ধীদের জীবনে আলোকিত করে তুলেছেন।