আগে হাইনান মানেই ছিল সুন্দর দ্বীপের মনোরম দৃশ্য ও চমত্কার বাসযোগ্য একটি জায়গা। এখন হাইনানের আরও একটি আকর্ষণ আছে, আর তা হল শুল্কমুক্ত কেনাকাটা। সুন্দর হাইনান দ্রুত উন্মুক্ত হচ্ছে বিদেশিদের জন্য। আর, চীনের আন্তর্জাতিক ভোক্তা পণ্যমেলা (সংক্ষেপে ‘হাইনান মেলা’) বিশ্বের সাথে সুযোগ ভাগাভাগি করার একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।
২০১৮ সালে "চীনা বৈশিষ্ট্যময় অবাধ বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণ" পরিকল্পনা পেশ করা হয়। ২০২০ সালে হাইনান অবাধ বাণিজ্যবন্দরের ১১টি মূল পার্ক একযোগে চালু হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, হাইনান অবাধ বাণিজ্যবন্দর দ্বীপব্যাপী কার্যকর হতে শুরু করে। হাইনান অবাধ বাণিজ্যবন্দরের নির্মাণকাজ ক্রমশ উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। বিগত বছরের তুলনায়, চলতি বছর তৃতীয় হাইনান মেলায় অবাধ বাণিজ্যবন্দরের বৈশিষ্ট্য আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
এ বারের হাইনান মেলায় মোট প্রদর্শনী-এলাকা হল ১.২ লাখ বর্গমিটার, যা আগের বারের তুলনায় ২০% বেশি। ৬৫(পয়ষট্টি)টি দেশ ও অঞ্চলের ৩ সহস্রাধিক ব্র্যান্ড প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করছে। চীন ছাড়াও মোট ১০টি আরসিইপি সদস্যদেশ এই মেলায় অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম রাষ্ট্রীয়প্যাভিলিয়ন আকারে প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। তৃতীয় হাইনান মেলায় প্রধান অতিথিদেশ হিসেবে ইতালি অংশগ্রহণ করছে। ইতালির একটি রাষ্ট্রীয় প্যাভিলিয়ন এবং একটি এন্টারপ্রাইজ প্যাভিলিয়ন রয়েছে মেলা প্রাঙ্গনে। দুই প্যাভিলিয়নে ১.৮ হাজার বর্গমিটারের একটি প্রদর্শনী এলাকায় ১৪৭(একশ সাতচল্লিশ)টি ব্র্যান্ডের পণ্য রয়েছে, যা আগের বারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
অধিকতর কোম্পানির অংশগ্রহণ থেকে দেখা যায় যে, আরও বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক কোম্পানি চীনের ভোক্তাবাজারের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। তারা হাইনান মেলাকে বিশ্বব্যাপী ভোক্তাপণ্য প্রদর্শনের একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গণ্য করছে।
বর্তমানে, চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালে, চীনের ভোগ্যপণ্যের মোট খুচরা বিক্রয় ছিল ৪৪(চুয়াল্লিশ) ট্রিলিয়ন ইউয়ান এবং সেবছর চীন ১.৯৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের ভোগ্যপণ্য আমদানি করে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৭৫.৮(পচাত্তর দশমিক আট)% বেশি। চীন অটোমোবাইল, প্রসাধনী, চামড়াজাত পণ্য, পোশাক এবং গয়নার আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বাজার হয়ে উঠেছে।
হাইনান মেলার প্রতি ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ ও উত্সাহ কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদা পুনরুদ্ধারের সংকেতবহ নয়, বরং চীনের অর্থনীতিতে ভোগের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রতীকও বটে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন দেশ কঠোর পরিশ্রম করছে। এসব দেশের জন্য চীনের সুপার-লার্জ-স্কেলের বাজারের সুবিধা আকর্ষণীয়। অনেক দেশ হাইনান মেলার মাধ্যমে চীনের বৃহৎ ভোক্তাবাজারের সুযোগ ভাগাভাগি করার আশা করছে।
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন উপমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা তানোসোদিজো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “তৃতীয় হাইনান মেলার মাধ্যমে আমরা বাজার সম্প্রসারণ এবং আরও সহযোগিতার সুযোগের অন্বেষণ করতে চাই।” বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী রাডোভান ভিশকোভিচ বলেছেন, হাইনান দ্বীপে তিনি প্রথমবারের মতো চীনা ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি আশা করেন, মেলার মাধ্যমে সফলভাবে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে।
হাইনান অবাধ বাণিজ্যবন্দরের নীতির ভিত্তিতে, হাইনান মেলা বৈশ্বিক ভোক্তা উদ্যোগগুলোর জন্য একটি প্রদর্শনের জানালা এবং বাণিজ্যের মঞ্চ তৈরি করেছে। "বিশ্ব থেকে কেনা এবং বিশ্বের কাছে বিক্রি করা" হল এ মেলার উদ্দেশ্য। হাইনান মেলা বৈশ্বিক কম্পানিগুলোর জন্য চীনা বাজার ভাগাভাগি করার এবং চীনা কম্পানিগুলোর বিশ্বের কাছে যাওয়ার জন্য সুযোগ তৈরি করছে। (স্বর্ণা/আলিম/ছাই)