চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে দূরত্ব ১৮৮০০ কিলোমিটার। তারা পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দুটো দেশ। ১২ এপ্রিল ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা তাঁর চীন সফর শুরু করছেন। এর মাধ্যমে সমুদ্রের ব্যবধান অতিক্রম করে দুটি দেশ আবার সহযোগিতা জোরদার করবে। ১১ এপ্রিল চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) এক সম্পাদকীয়তে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, এটি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের চীনে তৃতীয় রাষ্ট্রীয় সফর এবং গত জানুয়ারিতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ওই অঞ্চলের বাইরে তাঁর প্রথম সফর। চীনা জনগণের কাছে প্রেসিডেন্ট লুলা একজন পুরোনো বন্ধু। তিনি ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কার্যমেয়াদে চীন-ব্রাজিল সম্পর্কের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ২০০৯ সালে চীন ব্রাজিলের প্রথম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। গত ১৪ বছর ধরে এ অবস্থান বজায় রেখেছে চীন। ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম ব্রাজিলের চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক পরিমাণ ১০ লাখ কোটি ছাড়িয়েছে।
গত জানুয়ারিতে ৭৭ বছর বয়সী লুলা তৃতীয়বারের মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তাঁর পুনঃনির্বাচনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, চীন ও ব্রাজিল বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালী উন্নয়নশীল দুটো দেশ এবং গুরুত্বপূর্ণ বাজার। দেশ দুটি পারস্পরিক কৌশলগত অংশীদার। দু’দেশের রয়েছে অভিন্ন ব্যাপক স্বার্থ। গত ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিলে চীনা রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণের সময় প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, ব্রাজিল চীনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আদান-প্রদান, পারস্পরিক সহযোগিতা গভীর এবং দু’দেশের ব্যাপক উন্নয়ন আরও বেগবান করতে চায়।
প্রেসিডেন্ট লুলার গত মার্চ মাসের শেষ দিকে চীনে আসার কথা ছিল। তবে, শারীরিক অবস্থার কারণে সফর পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেরে উঠার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সফরে আসেন। তাঁর সঙ্গে ২৭ জন সিনেটর ও প্রতিনিধি পরিষদের ১২ জন সদস্য চীনে এসেছেন। তাতে তাঁর চীন সফরের গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।
এবারের সফরে অর্থনীতি প্রাধান্য পাবে। বর্তমানে ব্রাজিল কোভিড-১৯ মহামারির পর পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট লুলা ব্রাজিলের পুনরায় শিল্পায়ন বেগবান করছেন। এদিকে, চীন গুণগতমান সম্পন্ন এবং উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ বেগবান করছে। তাই ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য অভিন্ন কল্যাণের সুযোগ প্রদান করবে বেইজিং। প্রেসিডেন্ট লুলা’র সফরের আগে ব্রাজিলের অনেক কর্মকর্তা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ইতোমধ্যেই বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন।
লা অ্যাজেন্সি ইএফই এসএ বার্তাসংস্থা জানায়, এবার আগত ব্রাজিল চেম্বারের প্রতিনিধিদের সংখ্যা ইতিহাসের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, যার পরিমাণ ২৪০ জন ছাড়িয়েছে। ব্রাজিলের কৃষি ও পশুপালন মন্ত্রী কার্লোস ফাভারো বেইজিংয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বলেছেন, ‘আমরা চীনের সঙ্গে আরও সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গঠন করতে এবং দু’দেশের উৎপাদনের পরিমাণ ও সক্ষমতা উন্নত করতে চাই।’
দু’দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহায়তায় চীন-ব্রাজিল সহযোগিতা দিন দিন গভীর হয়েছে। দু’দেশের জনসাধারণও অনেক কাছে চলে এসেছে। ফুটবল, সাম্বা ও কাবাবের মাধ্যমে বর্তমানে চীনারা, বিশেষ করে তরুণরা ব্রাজিল সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পেরেছে। ব্রাজিলের ফ্লিপ ফ্লপ ও কফি বরাবরই চীনের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে।
একই সঙ্গে চীন সম্পর্কে মহাপ্রাচীর ও কুংফুং ছাড়া আরও অনেক কিছু জানতে পারছেন ব্রাজিলের জনসাধারণ। চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্রাজিলে খুব জনপ্রিয়। বর্তমানে দেশটিতে আনুষ্ঠানিক চীনা আকুপাংচার চিকিৎসকের পরিমাণ ১ লাখ ছাড়িয়েছে। ‘মেড ই চায়না’ পণ্যগুলো ব্রাজিলের লোকদের জীবন সুন্দর করছে। যেমন, চীনের রাষ্ট্রীয় গ্রিড সেদেশের উচ্চ ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন প্রকল্প এবং জল বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ নানা প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। ব্রাজিলে বিশ্ব কাপ এবং অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়াম নির্মাণপ্রকল্পে চীনা নির্মাণকারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট লুলা’র এবারের চীন সফরের ওপর ব্যাপক দৃষ্টি রেখেছে বিশ্ব। যার কারণ হলো পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের দুটি বৃহত্তম দেশ হিসেবে চীন ও ব্রাজিলের উন্নয়ন শুধু দেশ দুটি নয়, বরং বিশ্বের জন্য কল্যাণকর হবে।
(রুবি/এনাম)