‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ১৩
2023-04-12 12:16:02

                                   

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণের অগ্রযাত্রা।   

১.  "ইন্টারনেট প্লাস" উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত চীনে

চীনের ছোংছিংয়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে "ইন্টারনেট প্লাস" উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সময়ে অসাধারণ অবদানের জন্য চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান কর হয়। এসময় তরুণ শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে কিভাবে তাদের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানো যায়, সেসব ব্যাপারে মতামত ব্যাক্ত করেন শিক্ষকরা।

 

সম্প্রতি শেষ হলো অষ্টম চীন আন্তর্জাতিক কলেজ শিক্ষার্থীদের "ইন্টারনেট প্লাস" উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতা। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছোংছিং পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতা। প্রতিভা সংগ্রহে এবং শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশে অবদান রাখতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রতিযোগিতার অষ্টম সংস্করণের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ৩০ লাখেরও বেশি প্রকল্প এবং ৪ হাজারেরও বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ-বিদেশের ১ কোটি ৪৫ লাখ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতার জন্য সাইন-আপ করেন। এ সংখ্যা এ ক্ষেত্রে এক নতুন রেকর্ড।

 

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি দল ফাইনালে লড়াই করে নানচিং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি শীর্ষ পুরস্কার পায়। এদিকে, একই দিন চতুর্থ মাস্টার টিচার অ্যাওয়ার্ড, আউটস্ট্যান্ডিং টিচিং অ্যাওয়ার্ড এবং ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানও হয়। 

এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়, সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষককে আউটস্ট্যান্ডিং টিচিং অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। আর বেইজিং নরমাল ইউনিভার্সিটির ৯৪ বছর বয়সী অধ্যাপক কু মিংউয়ানকে মাস্টার টিচার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। 

এই জ্যেষ্ঠ্য শিক্ষক মনে করেন, উন্নত-মানের শিক্ষকরাই উচ্চ-মানের ছাত্র গড়ে তুলতে পারেন।  

"শিক্ষকগণ শিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র শিক্ষকদের মান উন্নত হলেই আমরা উচ্চ-মানের ছাত্র গড়ে তুলতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, সবার আগে শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদেরকে বুঝতে হবে, ভালবাসতে হবে, তাদের বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষাকে সারাজীবনের অভ্যাস হিসেবে গ্রহণ করা উচিত শিক্ষকদের। কারণ দেশপ্রেম, দক্ষতা ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে এসব শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে।

 

চীনে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তাদের শিক্ষাকে প্রসারিত করার জন্য প্রতিযোগিতাটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন আয়োজকরা।

 

২০১৫ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে গত আট বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ প্রতিযোগিতা। প্রতি বছর অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আয়োজনটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। 

 

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান

 

২.  তরুণদের জন্য কাজের সুযোগ

নতুন প্রজন্মের দোরগোড়ায় কাজ পোঁছে দেয়া এবং আকর্ষণীয় পেশা বেছে নেয়াসহ বর্তমান প্রজন্মকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় কাজের সুযোগ করে দিতে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চীন সরকার।  এরই ধারাবাহিকতায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে দেশটির বিভিন্ন স্থানে চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রতি বছরের মতো এবারের গ্রীষ্মেও চীনে আয়োজন করা হচ্ছে চাকরিমেলা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে  আয়োজন করা হয় এই মেলার।  

এই গ্রীষ্মে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরোবেন। এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় আট লাখের বেশি হওয়ার কথা। কোনও এক মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার এই সংখ্যা চীনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এসব ছাত্রের মধ্যে অনেকেই চাকরিমেলায় অংশ নিয়ে এবং ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগকর্তাদের সাথে দেখা করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। এই মেলার মাধ্যমে অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন।

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ২৮টি প্রাদেশিক অঞ্চলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ১০০ টিরও বেশি এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দরের সঙ্গে হওয়া একটি সাম্প্রতিক চাকরিমেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। এসব মেলার লক্ষ্য হলো স্নাতকদের জন্য কর্মসংস্থান খুঁজে পেতে সহায়তা করা।

এরইমধ্যে, পূর্ব চীনের শানতুং প্রদেশের রাজধানী চিনানের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কাওসিন জেলায় চাকরিমেলার জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। এই মেলায় অনেক উচ্চ-প্রযুক্তি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এমন একটি চাকরি মেলায় ১৩শ’র বেশি চাকরি পাওয়া পায় প্রার্থীরা। 
 

কাওসিন জেলার ছাত্র-উদ্যোক্তা সেবা বিশেষজ্ঞ কুং নিং বলেন,  "জেলার অনেক হাই-টেক এন্টারপ্রাইজের সুবিধার উপর নির্ভর করে আমরা তাদের কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনর চাকরিমেলার আয়োজন করি।"

চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করা ছাত্রদের সহযোগিতা করার জন্য চারশ’রও বেশি বিশেষজ্ঞের একটি কর্মসংস্থান উন্নয়ন দল তৈরি করেছে কতৃপক্ষ।

 

প্রতিবেদকঃ নাজমুল হক রাইয়ান

সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান

৩. 

চীনে প্রাপ্তবয়স্ক মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেই প্রতি রাতে আট ঘণ্টার কম ঘুমায়। এমনই তথ্য পাওয়া গেছে চাইনিজ স্লিপ রিসার্চ সোসাইটি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে তরুণদের ঘুমের প্রবণতা কমার জন্য ইলেক্ট্রিক ডিভাইস ও একাডেমিক চাপকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।  বিভিন্ন আয়ের মানুষের ঘুমের মানের বিষয়টিও উঠে আসে গবেষণায়। 

সম্প্রতি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর চীনের প্রাপ্তবয়স্করা প্রতি রাতে গড়ে ৭ দশমিক ৪ ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন। গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী ৬ হাজার ১৬৮ ব্যক্তির উপর চালানো সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিক্ষার নিম্ন স্তরের মানুষদের ঘুম কম হয় এবং যেটুকু ঘুম হয়, তার মানও নিম্ন থাকে। যাদের শক্তিশালী একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, তাদের দীর্ঘ সময় এবং ভালো ঘুম হয়। কিন্তু যারা স্নাতকোত্তর বা ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তাদেরও কম ঘুমের তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে একজন ব্যক্তির আয় এবং তাদের ঘুমের মানের মধ্যে সম্পর্কও দেখানো হয়েছে।

 

প্রতি মাসে ৩ হাজার ইউয়ানের কম আয় করে এমন পরিবারের লোকেরা সর্বনিম্ন পরিমাণে ঘুমান এবং সবচেয়ে খারাপ ঘুমের মানের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। রিপোর্টে দেখা গেছে, মধ্য-স্তরের আয়ের লোকেরা বেশি ঘুমান।

আবার যাদের উপার্জন প্রতি মাসে ১০ হাজার ইউয়ানের বেশি তাদের ঘুমের পরিমাণ মধ্য-স্তরের আয়কারীদের তুলনায় কম। কিন্তু তারা সেটা স্বীকার করেন না। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তারা সর্বোত্তম মানের ঘুম উপভোগ করেন। এদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ বলেছেন, যে তাদের "খুব ভাল" ঘুম হয়। 

শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো বিশেষ সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাধারণত বেশি রাত জেগে থাকেন। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার, অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা, একাডেমিক বোঝা এবং তাদের ঘুমের পরিবেশকে এর জন্য দায়ী করা হয়। যদিও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বীকার করেন, যে ভালো ঘুমের অভ্যাস সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। ঘুমের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরের স্তরে আছেন হোয়াইট-কলার কর্মী, নীল-কলার কর্মী এবং বেকার মানুষেরা।

চাইনিজ স্লিপ রিসার্চ সোসাইটির উপ-মহাসচিব কাও সুয়েমেই ঘুমের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আবেগ ও আচরণ স্থিতিশীল করতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্বাস্থ্যকর ঘুম মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি প্রয়োজন, বিলাসিতা নয়" 

কাও আরো যোগ করেন, যারা দীর্ঘ সময় ধরে ভালো ঘুম থেকে বঞ্চিত হন, তাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, উদ্বেগ, বিষণ্নতা, রাগ, চুল পড়া ও ওজন বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চ রক্তচাপ ও কার্ডিওভাসকুলার ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে।

 

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী