সি চিন পিং-এর সাম্প্রতিক কূটনৈতিক কার্যক্রম থেকে চীনের কূটনীতি অনুধাবন
2023-04-07 16:00:25

সম্প্রতি স্পেন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের শীর্ষনেতারা পৃথক পৃথকভাবে চীন সফর করেছেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে সাক্ষাত্ ও বৈঠক করেছেন। আসলে এই তিনটি কূটনৈতিক কার্যক্রম থেকে আমরা তিনটি সমকেন্দ্রিক বৃত্ত আঁকতে পারি, যা থেকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সম্পর্ক বোঝা যায়। এখান থেকে চীনের ধারাবাহিক কূটনৈতিক পদক্ষেপের তাত্পর্যও উপলব্ধি করা যায়।

 

প্রথম সমকেন্দ্রিক বৃত্ত হল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক।

চলতি বছর স্পেন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে চীনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়।

২০২৩ সাল হলো চীন ও স্পেনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। মার্চ মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং স্পেনের রাজা ফেলিপ হুয়ান পাবলো দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে পরস্পরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ-এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সি চিন পিং বলেন, অর্ধ শতাব্দীতে চীন ও স্পেন পরস্পরকে সম্মান করেছে, সংলাপ ও বিনিময় বজায় রেখেছে এবং সক্রিয়ভাবে পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা করেছে।

তাহলে কিভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তিতে আরো ভালো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত হতে পারে?

সি চিন পিং বৈঠকে জোর দিয়ে বলেন, দু’পক্ষের উচিত কৌশলগত উচ্চতা এবং স্থায়িত্বের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন বিবেচনা করা। কৌশলগত সংযোগ জোরদার করা, ভালোভাবে চীন-স্পেন সংস্কৃতি ও পর্যটনবর্ষ আয়োজন করা এবং যৌথভাবে বিশ্ব সভ্যতার বিনিময় বাড়ানো।

 

এ ছাড়া চলতি বছর হল চীন ও মালয়েশিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দশম বার্ষিকী। আগামী বছর হবে দু’দেশের কূটনৈতিক  সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী।

এবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম চীন সফর।

বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বৃহত্তর উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক সমৃদ্ধিতে নতুন গতি সঞ্চারের জন্য চীন-মালয়েশিয়ার সহযোগিতার সব ক্ষেত্র এগিয়ে নিতে যৌথ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

সি বলেন, চীন ও মালয়েশিয়া দীর্ঘদিনের বন্ধু। আনোয়ার ইব্রাহিমের চীন সফরের সময় যৌথভাবে অভিন্ন ভবিষ্যতের একটি সমাজ গড়ে তোলার বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে যে ঐকমত্য হয়েছে- তা অবশ্যই চীন-মালয়েশিয়া সম্পর্কের নতুন ঐতিহাসিক অধ্যায় সূচনা করবে বলে মনে করেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ এবং চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণের সঙ্গে চীন দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হওয়ায় মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে। বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগকে শক্তিশালী করার জন্য মূল প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে হবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ উন্নয়ন এবং নতুন জ্বালানিশক্তির মতো খাতগুলোতে দুই দেশকে জোরালো সহযোগিতার আহ্বান জানান চীনের প্রেসিডেন্ট।

তিনি স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা এবং জোটগত সংঘাতের ক্ষেত্রে দু’দেশের দৃঢ় বিরোধিতার ওপর জোর দেন। উন্নয়নশীল দেশগুলির সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করা এবং বিশ্ব শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য প্রকৃত বহুপাক্ষিকতায় সমর্থন করার গুরুত্বের উপর জোর দেন প্রেসিডেন্ট সি।

 

দ্বিতীয় সমকেন্দ্রিক বৃত্ত হল আঞ্চলিক সম্পর্ক।

স্পেন ইইউ’র সদস্য দেশ। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর হল চীনের প্রতিবেশী দেশ এবং আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ। তিনটি বৈঠকে সি চিন পিং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চীন ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সহযোগিতা উল্লেখ করেছেন।

চীন ও ইউরোপ হল সার্বিক কৌশলগত অংশীদার। দু’পক্ষের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ মতভেদের চেয়ে অনেক বেশি। তবে চীন ও ইউরোপের সম্পর্ক ভালোভাবে উন্নত করতে চাইলে একটি পূর্বশর্ত আছে। তা হল ইউরোপের কৌশলগত স্বাধীনতা বাস্তবায়ন করা উচিত। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতার সঙ্গে বৈঠককালে বার বার এ-কথা বলেছেন।

 

চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে, স্পেন ইইউ’র পালাক্রমিক চেয়ারম্যান দেশ হবে। সি চিন পিং আশা করেন, স্পেন, চীন ও ইউরোপের সংলাপ ও সহযোগিতার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠককালে সি চিন পিং বলেছেন, চীন মালয়েশিয়ার সঙ্গে এশিয়ার সভ্যতা উন্নত করা, আসিয়ানের কেন্দ্রীয় অবস্থানকে সমর্থন করা, যৌথভাবে অভিন্ন বাসস্থান উন্নত করতে চায়।

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং-এর সঙ্গে সাক্ষাত্কারে সি চিন পিং বলেন, আমাদের উচিত এশিয়ার উন্নয়নের সুষ্ঠু প্রবণতা রক্ষা করা, যৌথভাবে আঞ্চলিক শান্তি রক্ষা করা, অর্থনীতির বিশ্বায়ন এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির একীকরণের সঠিক দিক রক্ষা করা।

 

তৃতীয় সমকেন্দ্রিক বৃত্ত বিশ্বের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে। তিনবার বৈঠক এবং সম্প্রতি চীনের ধারাবাহিক কূটনৈতিক কার্যক্রম বিশ্বের কাছে একটি প্রাণচঞ্চল, উন্মুক্ত এবং দায়িত্বশীল বড় দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছে।

যেমন মার্চ মাসে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীন সফর করা বেশ কয়েকজন বিদেশি নেতার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং বিশ্বের রাজনৈতিক পার্টির উচ্চপদস্থ সংলাপে অংশ নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন। রাশিয়া সফর করেছেন। চীনের সাহায্যে ইরান ও সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হয়েছে। চীনের উদ্যোগে বো’আও এশিয়া ফোরাম আয়োজন হয়েছে ইত্যাদি।

 

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, শিল্পপতি, বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিগণ চীন সফর করেছেন। চীনের উন্নয়ন সঠিকভাবে উপলব্ধি করেছেন।

বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যে, চীনের উন্নয়ন আরো ভালো হলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উন্নয়নের সুযোগ বিনিময়ের হার বাড়বে; তখন বিশ্ব উন্নয়ন আরো বেগবান হবে।