মিলু! চীনের বিশেষ ধরনের প্রাণীর গল্প
2023-04-07 14:35:01

 

চীনে এক ধরনের প্রাণী আছে, যা দেখতে একইসঙ্গে গরু, ঘোড়া, গাধা ও হরিণের মতো। একটি প্রাণী কিভাবে একসঙ্গে এই চার ধরনের পশুর মত হতে পারে? চীনে কিন্তু তা আছে, এবং এর নাম- মিলু। আজ আপনাদেরকে বেইজিংয়ের মিলু গবেষণা কেন্দ্রে নিয়ে যাবো। সেখানকার উপ-প্রধান চুং চেন ইয়ুর কাছ থেকে এই বিশেষ প্রাণী সম্বন্ধে জানবো।

আমার নাম চুং চেন ইয়ু, এখন বেইজিং মিলু প্রকৃতি গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করছি। আমি প্রধানত মিলু এবং জীববৈচিত্র্য গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজ করি। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জ্ঞান প্রচার করি। ২২ বছর ধরে কাজ করছি।

মিলু চীনের বিশেষ এক ধরনের প্রাণী। প্রাচীনকাল থেকে লোকজন তাকে মি হিসেবে ডাকে। এ ছাড়া, এর আরেকটি নাম হল সিবুসিয়াং, মানে চার পশুর সঙ্গে মিল নেই। এর অর্থ: শিং হরিণের মত তবে হরিণ নয়, মুখ ঘোড়ার মত তবে ঘোড়া নয়, খুর গরুর মত তবে গরু নয়, লেজ গাধার মত তবে গাধা নয়।

 

বেইজিং নান হাই জি মিলু উদ্যান প্রাচীনকালে ইউয়ান, মিং এবং ছিং তিন আমলের রাজকীয় শিকার উদ্যান। যা মিলু আবিষ্কার করা, মিলু অদৃশ্য হওয়া এবং তা ফিরে আসার স্থান। ১৯০০ সালে যুদ্ধ ও বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে মিলু এক সময় চীনে অদৃশ্য হয়ে যায়।

১৯ শতকে অল্প কয়েকটি মিলু বিলুপ্ত হওয়ার আগে ইউরোপে তা রপ্তানি করা হত। মিলু এভাবে অব্যাহত বংশবৃদ্ধি করতে পেরেছে। ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত, চীন ও ব্রিটেন বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা করার মাধ্যমে ৩৮টি মিলু আবারও ব্রিটেন থেকে জন্মস্থান-বেইজিং নান হাই জি মিলু উদ্যানে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

 

শুরুর দিকে ফিরে আসা মিলুর সংখ্যা খুব কম ছিল, কর্মীরা খুব টেনশনে থাকত। ধীরে ধীরে তার অভ্যাস জানার পর আমরা মিলুর ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন করি। আর তা হল মিলুর স্বাধীনভাবে থাকা নিশ্চিত করা।

আমরা যা করলাম তা হলো: শীতকাল বা শরত্কালের পর, বেইজিংয়ের নানা উদ্ভিদ শুকিয়ে হলুদ হয়ে যায়। আমরা মিলুর জন্য কিছু খাবার দেই, শীতকালের পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করি।

 

মিলু চীনের সবচেয়ে প্রাচীন প্রাণীর অন্যতম, বিজ্ঞানীরা তাকে জলাভূমির প্রতিনিধিত্বকারী প্রাণী বলে মনে করে। বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ লিগের লাল তালিকায় এর নাম আছে। মিলু বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী।

তৌহিদ: চুং চেন ইয়ু বলেন, মিলু হল ইনব্রিডিং করা বা নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হওয়া এক ধরনের প্রজাতি। তার বংশগতির বৈচিত্র্যের ওপর আমরা নিবিড় দৃষ্টি রাখছি। এখন আমরা তার জাত বৃদ্ধির মাধ্যমে তার বংশগতির বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তাই আমরা এখন মিলুর নতুন জাত তৈরির জন্য কাজ করছি।

 

১৯৯৩ সালে বেইজিং মিলু কেন্দ্র হুবেই প্রদেশের মিলু সংরক্ষণ এলাকায় মিলু পাঠানো শুরু করে। যাতে চীনের বন্য মিলু জাত পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত লক্ষ্য জন্য প্রস্তুত করা যায়।

এটা হল হু পেই প্রদেশের সি শৌ মিলু জাতীয় সংরক্ষণ এলাকা। ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে ৬৪টি মিলু এখানে এসেছে। যার সংখ্যা ইতোমধ্যে ২৫০০টিতে দাঁড়িয়েছে।

এটি হল চিয়াংসু প্রদেশের তা ফেং মিলু জাতীয় সংরক্ষণ এলাকা। যা বিশ্বের বৃহত্তম মিলু সংরক্ষণ এলাকা। এখানে মিলুর সংখ্যা সাত হাজারেরও বেশি। ২০১৮ সালে চিয়াং সি ভো ইয়াং হ্রদে ৪৭টি মিলু বন্য পরিবেশে ফিরে গেছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত চীনে ৮৯টি মিলু সংরক্ষণের জাত ছিল। মিলুর মোট সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে বন্য জাতের মিলুর সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ লিগের প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, চীনের মিলু জাত পুনরুদ্ধার প্রকল্প হল বিশ্বের ১৩৮টি প্রজাতির পুনরুদ্ধার প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে সফল একটি।

প্রকৃতি হল মানবজাতির বেঁচে থাকার প্রধান শর্ত। প্রকৃতির যত্ন নেওয়া এবং  প্রকৃতি সংরক্ষণ করা হল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর উত্থাপিত চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষ ও প্রকৃতির সুষম সহাবস্থান বাস্তবায়নে চীন অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছে।