শিয়াওশিনছুয়ান গ্রাম হুপেই প্রদেশের শিইয়ান শহরের হুই জাতি অঞ্চলের সবচেয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম। স্থানীয় জেলা পর্যায়ের সরকারি ভবন থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ১৮.৯ বর্গকিলোমিটারের আয়তনের এই গ্রামটি পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পুরো গ্রামে ৭টি গ্রামীণ দলে ২১০৭ জন লোক বাস করেন।
১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণকারী ওয়েং শিন ছিয়াং শিয়াওশিনছুয়ান গ্রামের সিপিসি শাখার সম্পাদক। তিনি শিয়াওশিনছুয়ান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং বড় হন। বড় হওয়ার পর তিনি নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে চীনের বিখ্যাত জিওসায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। বড় শহরের সমৃদ্ধি ও তাঁর নিজের জন্মস্থানের দারিদ্র্যের মধ্যে বড় ব্যবধান তার হৃদয়ে ছাপ ফেলে। ২০১৫ সালে, তিনি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তার উচ্চ-শিক্ষাগ্রহণ ও উচ্চ-বেতনে চাকরির সুযোগ ছেড়ে দিয়ে, নিজ গ্রামে ফিরে আসেন এবং গ্রামের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর, ওয়েং শিন ছিয়াং প্রথম যে কাজটি করেছিলেন তা হল, দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হওয়া ও ধনী হওয়ার ভাবনা সংগ্রহ করতে কৃষকদের ঘরে ঘরে যাওয়া। তিনি ১২০০টিরও বেশি প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন এবং গ্রামের মাটির গুণগত মান ও জলবায়ু নিয়ে তদন্ত করেছিলেন। অবশেষে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন যে, গ্রামবাসীদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধি গাছ শিসান্দ্রা রোপণ করতে হবে।
বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমের পর, ওয়েং শিন ছিয়াং প্রতিষ্ঠিত সমবায়টি হুপেইইকো হুই জাতি অঞ্চল ও আশেপাশের মোট ১ হাজারেরও বেশি কৃষককে ৩৫০০ একরের বেশি জমিতে শিসান্দ্রা রোপণে উত্সাহিত করে। স্থানীয় ৭০০টিরও বেশি পরিবারের বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার ইউয়ানে বৃদ্ধি পেয়েছে, তারা হয়েছে দারিদ্র্যমুক্ত।
শিয়াওশিনছুয়ান গ্রামে রয়েছে উঁচু পাহাড় ও ঘন বন। ২০১৮ সালে, শিয়াওশিনছুয়ান গ্রামের পার্টি শাখার সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর, ওয়েং শিন ছিয়াং স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পারিবারিক আকার, শিক্ষার মান এবং শ্রমশক্তির পার্থক্যের ভিত্তিতে গ্রামের প্রকৃত অবস্থা ও জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী, গ্রামবাসীদের উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত পথ খুঁজে পান। শিসান্দ্রা রোপণের পাশাপাশি, শিয়াওশিনছুয়ান গ্রামে বর্তমানে তামাক পাতা ও মাশরুম রোপণ এবং ভেড়া পালনের মতো শিল্পও গড়ে উঠেছে। গ্রামের প্রতিটি পরিবার একটি শিল্পের মাধ্যমে ধনী হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালের শেষের দিকে, শিয়াওশিনছুয়ান গ্রামের পুরোটি দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়।
২০১৪ সালে ওয়েং শিন ছিয়াং যখন প্রথম শিয়াওশিনছুয়ান গ্রামে ফিরে আসেন, তখন গ্রামে মোট পারিবারিক গাড়ির সংখ্যা ছিল ৩০টির মতো। ৭ থেকে ৮ বছরের উন্নয়নের পরে, গ্রামে পারিবারিক গাড়ির সংখ্যা এখন ১০ গুণ বেড়ে ৩০০ ছাড়িয়েছে। এখন তরুণরা ক্রমবর্ধমান হারে গ্রামে ফিরে যেতে উত্সাহিত হচ্ছে। নিজের গ্রামের বড় পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করে, ওয়েং শিন ছিয়াং আবেগের সাথে বলেছিলেন যে, তরুণরা যখন ফিরে আসতে চায়, বসতি স্থাপন করতে চায়, ও থাকতে পারে, তখন একটি গ্রাম জীবিত হতে পারে।
গ্রামে পার্টির শাখা সম্পাদক ছাড়া ওয়েং শিন ছিয়াং সিপিসি’র ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের একজন প্রতিনিধিও। দেশের দুই অধিবেশনের সময়, তিনি "কৃষি, গ্রামীণ এলাকা এবং কৃষক" সম্পর্কিত নীতিগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেন। অধিবেশনের পরে, তিনি দুটি অধিবেশনের চেতনা গ্রামবাসীদের বাড়িঘরে পৌঁছে দেন।
এখন শিয়াওশিনছুয়ান গ্রামের শিসান্দ্রা রোপণ বেস এবং ছাগলের খামারে, গ্রামবাসীদের ব্যস্ত থাকার ছায়া দেখা যায় এবং গ্রামটি প্রাণশক্তিতে পূর্ণ। ওয়েং শিন ছিয়াং সাথে একটি কলম ও কাগজ নিয়ে ক্ষেতে গ্রামবাসীদের চাষের প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন, তাদের বসন্তের লাঙ্গল পরিকল্পনা রেকর্ড করেন, কঠিন সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করেন এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন।
শিয়াওশিনছুয়ান গ্রামে এখন ২৮০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের প্রতিদিন সকালে পড়ার শব্দ ওয়েং শিন ছিয়াংকে আশাবাদী করে তোলে। "আমি আশা করি, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে, গ্রামে একটি সমৃদ্ধ দৃশ্য দেখা যাবে। যারা বাইরে চলে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকে ফিরে আসবেন। গ্রামবাসীদের জীবন আরও সুন্দর ও হাসিখুশির হবে।” ওয়েং শিন ছিয়াং তাই বলেন। (ইয়াং/আলিম/ছাই)