"হাজার বইয়ের সংকলন": ইয়ংলে দাদিয়ান
2023-04-07 20:18:11

"ইয়ংলে দাদিয়ান" তথা ইয়ংলে বিশ্বকোষ হলো চীনা জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গ্রন্থের সংকলন। এটি মিং রাজবংশের ইয়ংলে আমলে সংকলিত হয়। এতে ছিন রাজবংশ থেকে মিং রাজবংশ পর্যন্ত, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, ধর্মের ওপর লেখা আট হাজার ধরনের বই রয়েছে।

"ইয়ংলে দাদিয়ান"-এর মোট ২২৮৭৭টি খণ্ড রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ক্যাটালগ অংশে আছে ৬০টি খণ্ড, যা ১১০৯৫টি ভলিউমে বিভক্ত। পুরো বইটিতে প্রায় ৩৭ কোটি শব্দ রয়েছে। এটিকে ‘প্রাচীন চীনের বৃহত্তম বিশ্বকোষ’ বলা যেতে পারে এবং এটি "ক্লাসিকের একটি উত্স"-ও বটে। এরকম একটি মহৎ বিশ্বকোষকে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা "পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ" বলে প্রশংসা করেছে।

এতো বিশাল বিশ্বকোষ কীভাবে সাজানো যায় সেটা বড় চিন্তার বিষয় ছিল। "ইয়ংলে দাদিয়ান"-এ, চতুরতার সাথে, "স্বরবর্ণ দিয়ে অক্ষরগুলোকে সংগঠিত করা, অক্ষর ব্যবহার করে ঘটনাগুলোকে একত্রে বাঁধার" বিন্যাসপদ্ধতি গ্রহণ করা হয় এবং সত্যি সত্যিই "বইটি খোলামাত্র এক নজরে প্রাচীন ও আধুনিক চিত্র” চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

"ইয়ংলে দাদিয়ান" সংকলনের শুরুতে, মিং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা জু দি এই নিয়মটি সেট করেছিলেন: "বইয়ের সংগ্রহে প্রচুরতার সীমা নেই।" এক কথায়, বই যত বেশি তত ভাল, যত বই আছে, সেগুলো সব অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এভাবেই বিশাল ও মহৎ গ্রন্থের আত্মপ্রকাশ।

"ইয়ংলে দাদিয়ান" সংকলন করতে পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। যখন রাজা জু দি প্রথমবারের মতো রিভিশনটি তত্ত্বাবধান করতে শিয়ে চিন’কে দায়িত্ব দেন, তখন এটি সম্পূর্ণ করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। বইটি পড়ার পর রাজা জু দি অসন্তুষ্ট হন এবং নতুন করে বিন্যাসের নির্দেশ দেন। এটি নতুন করে সংকলনের সময় তত্ত্বাবধানের জন্য কয়েকজন বিখ্যাত পন্ডিতকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং ২ হাজারেরও বেশি লোককে নিয়োগ করা হয়। বলা যায়, সারা চীনের প্রতিভাবান ব্যক্তিরা এটি করার জন্য একত্রিত হয়েছিলেন। এর মাধ্যমে এই বইটির গুরুত্ব বোঝা যায়।

যখন "ইয়ংলে দাদিয়ান" সংকলনের কথা ওঠে, তখন একজনের কথা উল্লেখ করতে হয়। তিনি হলেন ছেন চি। ছেন চি একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন, কিন্তু তিনি একবার কোনো বই পড়লে তা ভুলতেন না। তাকে অনেকে "দুই পায়ের বইয়ের আলমারি" বলে ডাকতেন। জু দি এই ধরনের এক প্রতিভার কথা শুনে, তাকে রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি তাকে "ইয়ংলে দাদিয়ান" প্রবিধান প্রণয়নের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন।

ঐতিহাসিক নথি অনুসারে, সংকলনের প্রক্রিয়ায়, "কারো প্রশ্ন থাকলে বা সন্দেহ থাকলে ছেন চি’কে জিজ্ঞাসা করতো।" কেউ তাকে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করলে, ছেন চি সবসময় উত্তর দিতেন, বিলম্ব করতেন না।

বর্তমানে, চীনের জাতীয় লাইব্রেরিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় "ইয়ংলে দাদিয়ান"-এর সংগ্রহ আছে। সেখানে ২২৪ খণ্ডের বিশ্বকোষটি "গ্রন্থাগারের অমূল্য ধন" হিসেবে গণ্য।

১৭৯৪ সালে ছিং রাজবংশের সময় বিশ্বকোষটির সংরক্ষিত ভলিউমের সংখ্যার ওপর একটি বিশদ পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছিল। সেই সময়ে, ৯ হাজারেরও বেশি ভলিউম ছিল এবং ১ হাজারটিরও বেশি ভলিউম হারিয়ে গিয়েছিল। ১৮৯২ সালে রাজকীয় গ্রন্থাগার-হ্যানলিন একাডেমির সংগ্রহে মাত্র ৮৭০টিরও বেশি খণ্ড অবশিষ্ট ছিল। ১৯১২ সালে, বিখ্যাত লেখক লু সুইনের প্রচেষ্টায়, "ইয়ংলে দাদিয়ান"-এর ৬৪টি খণ্ডের প্রথম ব্যাচ বেইজিং গ্রন্থাগারে (ন্যাশনাল লাইব্রেরির পূর্বসূরি) সংগ্রহ করা হয়। নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর, দেশটি "ইয়ংলে দাদিয়ান"-এর ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের পণ্ডিত, বই সংগ্রাহক, ও বই রক্ষকদের প্রচেষ্টায় "ইয়ংলে দাদিয়ান" পুনরুজ্জীবিত হতে পেরেছে।

একটি "ইয়ংলে দাদিয়ান" আমাদের ছয় শ বছর আগের পন্ডিতদের সংস্কৃতির প্রতি আনুগত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, যা পরবর্তী প্রজন্মের অগণিত অভিভাবকের প্রচেষ্টায় সুরক্ষিত হতে পেরেছে। চীনা চেতনার উত্স “ইয়ংলে দাদিয়ান”। "ঋষিরা সংস্কৃতির রাস্তাকে আলোকিত করার জন্য ক্লাসিককে প্রদীপ হিসাবে ব্যবহার করতেন; আজ মানুষ সভ্যতার নদীতে সাঁতার কাটতে নৌকা হিসাবে ক্লাসিক ব্যবহার করে।" (ইয়াং/আলিম/ছাই)