জন্মস্থানে সুন্দর শিল্প উন্নয়নে লিপ্ত ফুল বাজারের নতুন কৃষক
2023-04-07 19:00:05


এক সময় গ্রাম থেকে বের হওয়া এক প্রজন্মের লোকের স্বপ্ন ছিল। তবে, এখন তা পরিবর্তন হয়েছে। চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের লুং ইয়ান অঞ্চলের চাং পিং শহরের ইয়োং ফু উপজেলায় নতুন দলীয় কৃষকরা নতুন চেতনা, নতুন প্রযুক্তি এবং নতুন যন্ত্র নিয়ে পাহাড়ী অঞ্চলে শেকড় ধরে গ্রামীণ বাড়ির জন্য নিজের উদ্যম প্রকাশ করেছেন।

 

ইয়োং ফু উপজেলার গড় সামুদ্রিক পৃষ্ঠার উচ্চতা ৭৮০ মিটার। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রায় প্রত্যেক পরিবার ফুল চাষ করে এখানে।

 

এ উপজেলার গভর্নর ওয়াং ছিউ পেং বলেন, ইয়োং ফুকে চীনের রডোডেনড্রন টাউন হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ ফুল চাষের আয়তন ৩৬৬৬ হেক্টর। রডোডেনড্রন বনসাইয়ের নিখিল চীনের বাজারের ৭০ শতাংশ দখল করেছে।

 

ছেন চি ওয়াং স্থানীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম রডোডেনড্রন চাষির একজন। তবে স্থানীয় রডোডেনড্রন প্রজনন এবং বৃদ্ধি খুব কঠিন। তাই বিদেশি রডোডেনড্রন দীর্ঘকাল ধরে জনপ্রিয় হয়েছে। ইয়োং ফু উপজেলার অধিবাসী হিসেবে স্থানীয় রডোডেনড্রনের বিলুপ্তিতে উদ্বিগ্ন ছেন চি ওয়াং।

 

এ সমস্যা সমাধান করতে ছেন চি ওয়াং গ্রামের প্রযুক্তি জানা লোকদের নিয়ে একটি ফুল গবেষণালয় গঠন করেছেন। গবেষণালয়ে মূলত এ ফুল রোপণ ও প্রজাতির উন্নয়ন করা হয়। মাটি ও পানিসহ নানা উপাদান নিয়ে গবেষণা করেছেন ছেন চি ওয়াং। পাশাপাশি, বিদেশি প্রজাতি ও স্থানীয় প্রজাতির সংমিশ্রণ করে নতুন প্রজাতির রডোডেনড্রন লালন করা হয়েছে। যার ফলে বনসাই রোপণ করতেও সক্ষম হয়েছে তারা।

 

   ছেন চি ওয়াং বলেন, আগেকার রডোডেনড্রন একটি চারা ১০ ইউয়ানের বেশি দামে বিক্রি হতো। বর্তমানে বনসাই শিল্প ফুল গাছের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে যুক্ত করার পর রডোডেনড্রন ফুল কৃষি পণ্য থেকে শৈল্পিক পণ্যে পরিণত হয়, যার ফলে এর দাম অনেক গুণ বেড়েছে।

 

উদ্ভাবনের কোনো সীমানা নেই। ছেন চি ওয়াং তার গবেষণাকর্মীদের নিয়ে চার মৌসুমে রডোডেনড্রন ফুল ফোটার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

 

শুধু রডোডেনড্রন ফুল নয়। ইয়োং ফু উপজেলার ক্যামেলিয়া ও অর্কিডসহ নানা ফুল শিল্প সাথে সাথে উন্নতি লাভ করেছে। তবে সে সব সুন্দর ফুল পর্বতের বাইরে কি ভাবে বিক্রি হবে- তা গ্রামবাসীদের সামনে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

 

সুদূর চিয়াং সু প্রদেশে ই-কমার্সে লিপ্ত ছেন ইয়ু ফেং এ খবর জেনে তিনি তার ভালো চাকরি ছেড়ে দিতে দ্বিধা করেন নি। তিনি তার দল নিয়ে ইয়োং ফু উপজেলায় ফিরে আসেন। অফলাইন দোকানের পাশাপাশি তিনি গ্রামবাসীদের ফুল বিক্রি করতে সাহায্য করেন।

 

চেন ইয়ু ফেং বলেন, “আমি জায়গা ভাড়া করে নিজে লাইভ স্ট্রিম করতে শুরু করেছি। ফুলগুলো আমার পিছনে আছে। লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে ইয়োং ফু’র রডোডেনড্রন ফুল প্রদর্শন করা হয়েছে। যার ফলে রডোডেনড্রনের খ্যাতি বেড়েছে” ।

 

তিনি তার দলের সঙ্গে রডোডেনড্রনের সুন্দর ছবি ও ভিডিও শুটিং করে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করেন, যাতে জন্মস্থানের রডোডেনড্রন ফুল সম্পর্কে আরও বেশি মানুষ জানতে পারে।

 

বর্তমানে ই-কমার্স গ্রামবাসীদের বিক্রির নতুন পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী অনেক নারী ছেন ইয়ু ফেং’র কাছ থেকে লাইভস্ট্রিমের কৌশল শিখতে আসেন। ছেন ইয়ু ফেং পর্দার পিছনে থাকতে এবং তাদের লাইভস্ট্রিমের কৌশল শিখাতে শুরু করেন। তার শিক্ষাদানে দু’জন উপস্থাপক এক রাতে লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে ১০ হাজার ইউয়ানের পণ্য বিক্রি করেছিলেন।

 

গ্রামীণ উপস্থাপকের সংখ্যা অধিকতর হয়ে যাওয়ার পর ইয়োং ফু উপজেলায় বিশাল একটি ই-কমার্স শিল্প উদ্যান গঠিত হয়েছে। ‘নেট প্লাস কৃষি’র পদ্ধতিতে ফুল চাষিদের জন্য ফুল উত্পাদন, কৃষি পণ্য প্রদর্শন ও উত্পাদন এবং লজিস্টিকসহ নানা বিষয় একত্রিত করে একটি কমপ্লেক্স ফুল ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ফলে ইয়োং ফু ফুল নতুন শৈল্পিক পদ্ধতি লাভ করেছে। এ পর্যন্ত উপজেলাটিতে ই-কমার্সে লিপ্ত কৃষকের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে।

 

(রুবি/এনাম)