এপ্রিল ৬: আজ (বৃহস্পতিবার) চীনের তাইওয়ান অঞ্চলের প্রধান ছাই ইং ওয়েন যুক্তরাষ্ট্রে তথাকথিত ‘ট্রানজিট’ করার সময়, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন। এটি গেল বছর পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর, যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের সৃষ্ট আরেকটি রাজনৈতিক উস্কানিমূলক ঘটনা। এ ঘটনা গুরুতরভাবে ‘এক-চীননীতি’ এবং ‘চীন-মার্কিন তিনটি যৌথ ইস্তাহার’ লঙ্ঘন করেছে; চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি না-হক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এ ঘটনা ‘তাইওয়ানপন্থী’ অপশক্তির কাছে গুরুতর ভুল সংকেতও পাঠিয়েছে।
এ ঘটনা থেকে লোকজন এটা আরও স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারছে যে, ‘মিনচিন’ পার্টি বারবার ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করার’ অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মানুষ ‘তাইওয়ানের ওপর ভর করে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার’ অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি তাইওয়ান প্রণালীর বিদ্যমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে।
তাইওয়ান ইস্যু হচ্ছে চীনের মূল স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর মধ্যে একটি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তিও এই ইস্যু। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের রেডলাইন হচ্ছে তাইওয়ান, যা অতিক্রম করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আর, তাইওয়ান ইস্যুতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিময় হচ্ছে ‘এক-চীননীতি’। এই নীতি ১৯৭১ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭৫৮ নম্বর প্রস্তাবে চিহ্নিত করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক সমাজের এক সাধারণ মতৈক্য এবং সবার পরিচিত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়ম। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৮২টি দেশ ‘এক-চীননীতি’-র ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
‘এক-চীননীতি’-র মেনে চলতে খোদ যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ‘চীন-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ইস্তাহার’-এ বলা হয়, ‘মার্কিন সরকার চীনের এ অবস্থানকে স্বীকার করে যে, বিশ্বে শুধুমাত্র একটি চীন আছে এবং তাইওয়ান সেই চীনের একটি অংশ’, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকারকে চীনের একমাত্র বৈধ সরকার হিসেবেও স্বীকার করে মার্কিন সরকার’। ইস্তাহারে আরও বলা হয়, ‘এই নীতির আওতায় মার্কিন জনগণ তাইওয়ানের অধিবাসীদের সঙ্গে সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও অন্যান্য বেসরকারি সম্পর্ক বজায় রাখবে’। আবার জো বাইডেন প্রশাসন শুরু থেকে এ পর্যন্ত বহুবার ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ এবং ‘দুই চীন’ ধারণাকে সমর্থন না-করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের কথা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট। ‘এক-চীননীতি’র পরিপন্থি উস্কানিমূলক কাজ বন্ধ রাখেনি মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ও যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ম্যাককার্থি ছাই ইং ওয়েনের সঙ্গে দেখা করেছেন, যা গুরুতরভাবে চীনকে দেওয়া মার্কিন প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন। এ ঘটনা তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি, চীন-মার্কিন সম্পর্ক, এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার জন্য বিশাল ক্ষতি বয়ে আনবে।
বস্তুত, ‘এক-চীননীতি’র ক্ষতি করার পেছনে দু’পক্ষের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে, যা আসলে রাজনৈতিক স্বার্থ। মার্কিন রাজনীতিতে ম্যাককার্থি সবসময় চীনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান বজায় রেখে এসেছেন। বর্তমানে মার্কিন পার্টিগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ‘চীন’ তাদের অভিন্ন ইস্যু। রিপাবলিকান পার্টির ম্যাককার্থি কেবল যে ‘তাইওয়ানকে দিয়ে’ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চান, তা নয়; বরং এ থেকে সৃষ্ট ‘ঝামেলা’-র দায় ডেমোক্রেটিক পার্টির ওপর চাপাতে চান।
আর, ছাই ইং ওয়েন এবার যুক্তরাষ্ট্রে তথাকথিত ‘ট্রনজিট'-এর মাধ্যমে কেবল যে ‘তাইওয়ানপন্থীদের’ মনোভাবকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন, তা নয়; বরং নিজের ‘দক্ষতা’ দেখানোর অপচেষ্টাও চালিয়েছেন। গেল বছর ‘মিনচিন’ পার্টি তাইওয়ানের স্থানীয় নির্বাচনে ব্যর্থ হয়। আগামী বছর ‘কার্যমেয়াদ’ শেষের আগে ছাই ইং ওয়েন, যুক্তরাষ্ট্রে ‘ট্রানজিট’ করার মাধ্যমে, তথাকথিত বাইরের সমর্থন আদায় করতে অপচেষ্টা চালিয়েছেন মাত্র।
তাইওয়ান চীনের তাইওয়ান, তাইওয়ান ইস্যু মোকাবিলা পুরোপুরি চীনাদের নিজস্ব ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ান যত নাটকই করুক না কেন, ‘তাইওয়ান চীনের এক অংশ’—এই সত্য বা বাস্তবতা তাতে বদলে যাবে না। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)