বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে অল্প অল্প করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, অনুসঙ্গ হচ্ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির।
চা পাতা তুলছে রোবট
কৃষিখাত সমৃদ্ধ রাখতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে চীন। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে যেমন উৎপাদন বেড়ে যায় কয়েকগুণ তেমনি কম সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ পান কৃষকরা।
এবার চা বাগানেও প্রযু্ক্তির উৎকর্ষ দেখিয়েছে চীনের প্রযু্ক্তিবিদরা। চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌর লোংচিয়াং চা বাগানে দেখা যায় চা পাতা তুলছে কয়েকটি রোবট। এটি হলো বিশ্বের প্রথম চা পাতা তুলতে পারা রোবট।
রোবটের দুটি যান্ত্রিক হাত রয়েছে যা চা-কুঁড়ি সন্ধান করে। সন্ধান পেলে যান্ত্রিক কাঁচির সাহায্যে কেটে কুঁড়ি ও পাতা সংগ্রহ করে।
এই রোবটের একজোড়া থ্রিডি চোখ আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে রোবটটি নিজে থেকেই কচি পাতা সনাক্ত করতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রোবটগুলো ব্যবহারের ফলে খুব কম সময়ে চা পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে এই খামার সাফল্যের সঙ্গে গ্রাহকের বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী টমেটো সরবরাহ করছে। পাশাপাশি বেড়েছে টমেটোর উৎপাদনের পরিমাণও ।
তারা মূলত যে পদ্ধতি ব্যবহার করছে সেটা হলো গ্রিন হাউজের ভিতরে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা। গাছের উৎপাদন এর উপর নির্ভর করে। বাতাসের গতি, বাইরের বাতাসের সঙ্গে গ্রিন হাউজের ভিতরের বাতাসের মিশ্রণও স্কাইলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
মটরশুটি পরিবহন করছে কার্গো বিমান
হংকংয়ের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে মটরশুটি। আর এসব মটরশুটি সরাসরি আসছে চীনের কুইচৌ প্রদেশ থেকে। পাহাড়ি পরিবেশে চাষ হওয়া ফসল পরিবহনের জন্য চালু হয়েছে কার্গো বিমান। ফলে অর্ডার পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্রেতার হাতের নাগালে পৌঁছে যায় তাজা ও সতেজ ফসল।
পাহাড়ঘেরা এই অঞ্চলের উপত্যকাগুলো এখন সবুজে সবুজময়। যেদিকেই চোখ যায়, পাহাড়ি সবুজ জমিনে কৃষকের ব্যস্ততা। ভোর হতেই নারী পুরুষ নির্বিশেষে কাজ করছে মটরশুটি খামারে।
স্থানীয় পরিসংখ্যান বলছে, গেল বসন্তে এখানকার ছিয়াননান পুইয়ি ও মিয়াও স্বায়ত্বশাসিত প্রিফেকচারের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয় মটরশুটি। বিশেষ করে লংলি কাউন্টি মটরশুটি উৎপাদনের এক উর্বর ভূমি।
এখানে উৎপাদন করা মটরশুটি খুব সহজে চলে যায় দূরের শহরে। বিশেষ করে হংকংয়ের বাজারে ব্যাপক চাহিদা এই অঞ্চলে উৎপাদন করা মটরশুটির। তাইতো ফসল তোলার পরই ভাল দাম পেতে মোড়কজাত করে পাঠানো হয় হংকংয়ের ব্যস্ত শহুরে বাজারে। স্থানীয় চাষীরা বলছেন, কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের সুযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এখন ভাল দামে বিক্রি করা যায় শ্রম-ঘামের ফসল।
পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এই এলাকার কৃষি পণ্য পরিবহনের জন্য চালু হয়েছে কার্গো বিমান। ফলে যে কোন ক্রয়াদেশ পাওয়ার ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই হংকংয়ে পাঠানো সম্ভব হয় তাজা ও সবুজ মটরশুটি।
কৃষি জমিতে বাড়ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
চীনে এখন চলছে বসন্তকালীন কৃষিকাজ। গ্রীষ্মে যেন ভালো ফসল ওঠে সেই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত এখন চীনের কৃষক। জমি তৈরি আর মাটিভাঙার কাজ চলছে কোন কোন অঞ্চলে। দক্ষিণ ও পূর্ব চীনে শুরু হয়ে গেছে বীজ বোনার কাজ। আর এসব ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি চলছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন চীনের কৃষকরা । বসন্তকালীন কৃষিকাজ চলছে দেশ জুড়ে। পূর্ব, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম চীনে অনেক জায়গাতে হলুদ রেপসিড ফুল বা সরিষাজাতীয় ফুল ফোটা শুরু হয়ে গেছে।
কোথাও চলছে বীজ বপনের কাজ। কোথাও বা সবুজ চারায় ঢেকে যাচ্ছে মাটি। আবার কোন কোন এলাকায় এখন চলছে মাটি ভাঙা ও জমি তৈরির কাজ। এজন্য মাঠে নামছে আধুনিক মেশিন।
দক্ষিণপশ্চিম চীনের কুইচোও প্রদেশে রেপসিড ফুলফোটা শুরু হয়েছে। হ্যনান প্রদেশে হুয়াসিয়ান কাউন্টিতে চলছে গম চাষ। কানসু প্রদেশের খামারগুলোতে এখন মাটি তৈরি করা হচ্ছে পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে। কৃষিবিজ্ঞানী ও কর্মীরা মাঠে মাঠে ঘুরে কৃষকদের নির্দেশনা দিচ্ছেন কিভাবে মাটি তৈরি ও চারার যত্ন নিতে হবে।
শানতুং প্রদেশে মাঠে নেমেছে কৃষির আধুনিক মেশিনগুলো। কাজ চলছে আধুনিক এবং ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির মিশেলে।
চিলিন প্রদেশে জমি তৈরির কাজ চলছে আধুনিক প্রযুক্তিতে। এখানে উইন্ড টারবাইন কাজ করছে। জমিতে লবণ ও ক্ষারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
শানতুং প্রদেশের ইয়ানথাই সিটির সার কারখানাগুলোতে পুরোদমে তৈরি হচ্ছে ফার্টিলাইজার। এই ফার্টিলাইজারের ব্যাগ চলে যাচ্ছে বন্দরে যেন সময়মত কৃষকের হাতে পৌছাতে পারে।
সিচুয়ান প্রদেশে কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জমিতে সার প্রয়োগের কাজে।
বসন্তকালীন কৃষিতে যেমন ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, ড্রোন প্রযুক্তি এবং স্মার্ট ব্যবস্থা, তেমনি পাশাপাশি কোন কোন স্থানে সনাতন পদ্ধতিতেও কিছু কিছু কাজ চলছে।
বীজবপন, চারারোপণ এবং জমি তৈরিতে বসন্তকালীন কৃষিকাজে ব্যস্ত কৃষকের চোখে এখন সোনালী ফসলের স্বপ্ন।
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ রেডিও অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।