‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ১২
2023-04-05 17:43:55

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণের অগ্রযাত্রা।   

১.  গ্রেটার বে অঞ্চলের উন্নয়ন পুনরুজ্জীবিত করতে যুব কর্মসংস্থান প্রকল্প শুরু করেছে হংকং

উন্নয়নে তরুণ প্রতিভা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অবদানকে উৎসাহিত করতে কুয়াংতোং-হংকং-ম্যাকাওয়ের গ্রেটার বে অঞ্চলে যুব কর্মসংস্থান প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। পরীক্ষামূলকভাবে দুই বছর চলার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি প্রথম হাতে নেওয়া হয় ২০২১-এর জানুয়ারিতে। ২০২০-এ চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম এই উদ্যোগ নেন। এর লক্ষ্য ছিলো হংকংয়ের তরুণদের গ্রেটার বে অঞ্চলের মূল ভূখণ্ডের শহরগুলোতে কর্মজীবন গড়ে  দিতে সাহায্য করা।

দুই বছর আগে স্টিভেন সাং যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করে বের হন, তখন হংকংয়ে চাকরির বাজারের অবস্থা খুবই শোচনীয়। তবে যখন সরকার যুব কর্মসংস্থান প্রকল্প হাতে নেয় এবং মূল ভূখণ্ডে ২ হাজারেও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, তখন স্টিভেন সেই সুযোগ লুফে নেন। এই এক সুযোগ জীবনটাই পাল্টে দিয়েছে স্টিভেনের। 

 

এখন তিনি পূর্ণকালীন প্যারালিগাল বা আইন সহকারী হিসেবে চীনের নানশা জেলার কিংব্রিজ সান কুওং ল’ ফার্মে কাজ করছেন।

 

‘আমি কুয়ানচৌ থেকে আমার স্নাতক শেষ করেছি। ওই সময় শুনতে পাই কেন্দ্রীয় সরকার তরুণদের জন্য চাকরি এবং স্টার্টআপগুলোর জন্য সাহায্যমূলক কিছু নীতি প্রণয়ন করেছে। তখনই আমি মূল ভুখণ্ডে থেকে নিজের কর্মজীবন সাজানোর সিদ্ধান্ত নিই।‘     

তিনি আরো বলেন, মূল ভূখণ্ডে থাকার ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাছ থেকে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। এটি তার জন্য খুবই মূল্যবান অভিজ্ঞতা।

ল’ ফার্মটির আরেক আইনজীবী চেং মিনহুয়া বলেন যুব কর্মসংস্থান প্রকল্পকে তারা সমর্থন করে যাবেন।

‘হংকং ও ম্যাকাওয়ের মানুষরা ভাষাগতভাবে মূল ভুখণ্ডের মানুষদের থেকে অনেক সমৃদ্ধ। তারা ইংরেজি, ক্যান্টোনিজ ও পর্তুগীজ ভাষায় সাবলীলভাবে ভাবের আদান প্রদান করতে পারেন। ফলে গ্রেট বে এরিয়াতে চাকরি পাওয়ার জন্য তাদের যথেষ্ট্য যোগ্যতা আছে। গ্রেট বে অঞ্চল বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বিনোয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে। আমরা এই যুব কর্মসংস্থান প্রকল্পে নিজেদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।‘

হংকং ও গ্রেটার বে অঞ্চলের মূল ভূখণ্ডের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই যুব কর্মসংস্থান প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী কর্মীদের জন্য তাদের সর্বনিম্ন বেতন ধরতে হবে ২ হাজার ৩০০ ডলার।

২০২১ সাল থেকে ৪শ’রও বেশি প্রতিষ্ঠান এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পে অংশ নিয়েছে। প্রথম দিকে কোভিড মহামারি-সংশ্লিষ্ট কঠোর বিধিনিষেধের কারণে আবেদনকারীদের মধ্যে অনিচ্ছা দেখা যায়। তবে এখন চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। কেননা সীমান্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছে, মূল ভূখণ্ডে বৃহৎ বহুজাগতিক সংস্থার সাথে কাজ করতে আরো তরুণ প্রতিভারা এই প্রকল্পের আওতায় আসবে।

 

আন্তঃসীমান্ত কর্মসংস্থান ভর্তুকি চীনের দক্ষিণ উপকূলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র গড়ে তোলার দীর্ঘমেয়াদী কৌশলেরই একটি অংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতার কদর কেবল প্রযুক্তিখাতেই নয়, পর্যটনখাতের মতো শিল্পগুলোতেও রয়েছে।

প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন

সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান

 

২.  ইয়ুথ গ্লোবাল কমিউনিকেশন ফোরাম অনুষ্ঠিত

 গেল সপ্তাহে বেইজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়ুথ গ্লোবাল কমিউনিকেশন ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ এবং বৈশ্বিক যোগাযোগ পেশাজীবী অংশ নেন।

ফোরামে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগে যুব ক্ষমতায়নের ভবিষ্যত এবং কীভাবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গল্পগুলো আরও ভালভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন।

এসময় তারা বলেন, জেড জেনারেশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক যোগাযোগে একটি নতুন ভূমিকা পালন করছে। রাশিয়া, ভারত, বেলারুশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাঁচটি জেড জেনারেশনের গল্প শেয়ার করেন তারা। পাশাপাশি চীনের গল্প বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ উন্নয়নে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করেন।

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান

৩.  তরুণ সেনাকর্মকর্তা চাং ই ফান

চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি সামাজিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে তরুণদের বেশ কয়েকটি দল। এ সব নিরাপত্তা কর্মীদেরও নিতে হয় কঠিন প্রশিক্ষণ। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেগে থাকতে হয় সব সময়।

কর্মমুখর দিনের শুরুটা খুব সকালেই শুরু হয় নিরাপত্তাকর্মীদের। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হয় প্রশিক্ষণের জন্য। কারণ দিনের শুরুতে শারীরিক ব্যায়াম মনোবল চাঙ্গা রাখে সারাদিন।

 

এ সব নিরাপত্তাকর্মীদের অধিনায়ক হলেন চাং ই ফান। তিনি আগে কাজ করতেন সশস্ত্র বাহিনীতে। সেনাবাহিনীতে চাকরির সেই সময়গুলোর কথা ভীষণ মনে পড়ে তার। এ জন্য অবসর নেওয়ার পরও নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ বেছে নেন তিনি।

তার অধীনে কাজ করেন নিরাপত্তা দলের ২০ জন সদস্য। চাংয়ের প্রধান কাজ হল সদস্যদের কে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা।

হঠাৎ করে কোথাও আগুন লেগে গেলে কিংবা কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্বে থাকে এই নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়া শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও চুরি প্রতিরোধ করাও এ টিমের অন্যতম দায়িত্ব।

সেনাবাহিনীতে কাজ করার সময় দেশকে সুরক্ষিত রাখতে চাং ই ফান যে দক্ষতা অর্জন করেছেন, তার পুরোটা নিরাপত্তা বিভাগে কাজে লাগানোর সুযোগ পেয়েছেন তিনি। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সময় পেলেই কম্পিউটারের নানামাত্রিক কাজ শেখার চেষ্টা করেন তিনি।

চাং মনে করেন, জীবনের যে কোন পর্যায় থেকেই জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ আছে। তাই অবসরে যাওয়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আরও উদ্যমী থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এই চীনা তরুণ।

 

প্রতিবেদকঃ হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম

৪.  

ছোংছিংয়ে জাতীয় যুব বৃত্তিমূলক দক্ষতা প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছোংছিং পৌরসভায় ১৭তম চেনসিং কাপ জাতীয় যুব বৃত্তিমূলক দক্ষতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩১টি প্রাদেশিক-স্তরের অঞ্চল ও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় উদ্যোগের ৮শ’ জনেরও বেশি প্রতিযোগী ফাইনালে অংশ গ্রহণ করেন।

 

শিল্প রোবট সিস্টেম অপারেটিং এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা প্রতিযোগিতা করেন। প্রতিযোগিতার ইভেন্টগুলোর সেটিংয়ে তাত্ত্বিক ভিত্তি, ব্যবহারিক অপারেশন ক্ষমতা, প্রতিযোগীদের অন-দ্য-স্পট মানিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতার উপর ফোকাস করে উদ্যোগগুলোর উৎপাদন-চাহিদার দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া হয়।

চাং পো নামে একজন প্রতিযোগী জানান, "এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, আমরা আমাদের অনেক ত্রুটি চিহ্নিত করতে পারি এবং ভবিষ্যতে আমাদের দক্ষতার বৃদ্ধি করে কিভাবে উন্নতি করা যায় সে বিষয়টিও আমরা দেখতে পারি। আমাদের অবশ্যই কঠোর অধ্যয়ন করতে হবে, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং প্রতিভা দিয়ে আমাদের দেশের সেবা করার জন্য আমাদের দক্ষতা অনুশীলন করতে হবে।

আয়োজকরা জানান, প্রতিযোগিতা চলাকালীন, তরুণ দক্ষ মেধাবীদের মধ্যে আদান-প্রদানের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি কাজেরও অগ্রগতি হয়েছে। প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা সংশ্লিষ্ট বৃত্তিমূলক দক্ষতা স্তরে পদোন্নতি পান বলে জানানো হয়। 

২০০৫ সালে প্রথম চেনসিং কাপ জাতীয় যুব বৃত্তিমূলক দক্ষতা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে, ২ কোটিরও বেশি তরুণ সব স্তরে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আড়াই লাখের বেশি তরুণ প্রতিভাবান পেশাদার দক্ষতার স্তরে উন্নীত হয়েছে।

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী